নিজস্ব প্রতিবেদক ও কালীগঞ্জ প্রতিনিধি
যশোরে ‘মক্ষীরানী’ তারিনীর ত্রিভুজ প্রেমের বলি হয়ে পাঁচদিন জীবন যুদ্ধে হেরে গেলেন এহসানুল ইসলাম অর্কিড। গত ৫ মার্চ সকালে যশোরের বারান্দীপাড়া ঢাকা রোডে তারিনীর পরিকল্পনা ও সহযোগিতায় তার প্রথম স্বামী মনিরুজ্জামান রিংকু, ফয়সাল ও অনিক তার গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। সোমবার (১০ মার্চ) ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে তার মৃত্যু হয়।
এদিকে এই ঘটনার ছয়দিনেও থানায় মামলা হয়নি এবং কোন অপরাধীদের আটক করা সম্ভব হয়নি। মৃত এহসানুল ইসলাম অর্কিড ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার মধুগঞ্জ বাজার কাঁঠালবাগান এলাকার ওসমান গণির ছেলে।
অর্কিডের পিতা ওসমান গণি জানিয়েছেন, কালীগঞ্জ পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং সাবেক এমপি আনোয়ারুল আজিমের ভাই আবেদ আলীর ছেলে মনিরুজ্জামান রিংকু। রিংকু যশোর শহরের বারান্দীপাড়া
বাঁশতলা এলাকার রাজাবাদশার মেয়ে তারিনকে বিয়ে করেছিলেন। রিংকুর সাথে দাম্পত্য জীবনে তার দুইটি সন্তানের জন্ম হয়।
অপরদিকে কালীগঞ্জের আল মামুনের মেয়ে জোসনা খাতুন অর্পাকে ১২/১৩ বছর আগে বিয়ে করে দাম্পত্য জীবনে তাদেরও দুইটি সন্তানের জন্ম হয়। এদিকে রিংকু ও অর্কিডের সাথে অনেক আগে থেকেই সুসম্পর্ক ছিলো। একে অপরের বাড়িতেও অবাধে যাতায়াত করতেন। ফলে রিংকুর স্ত্রী তারিনীর সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন অর্কিড। বিষয়টি বুঝতে পেরে স্ত্রী অর্পা ও দু’টি সন্তান নিয়ে ফরিদপুরে বাসা ভাড়া করে বসবাস করতেন অর্কিড। এরই মধ্যে গত ৫ জানুয়ারি কালীগঞ্জ থেকে তারিনকে নিয়ে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান অর্কিড। ২১ জানুয়ারি তারা দু’জনে বিয়ের পিঁড়িতে বসেছেন বলে তারিন বিভিন্ন লোকজনের কাছে জানিয়েছেন। তারিন বর্তমানে যশোর শহরের বারান্দীপাড়া বাঁশতলা এলাকায় পিতার বাড়িতেই বসবাস করেন। তবে মাঝেমধ্যে অর্কিড ফরিদপুর থেকে তারিনের পিতার বাড়িতে আসা-যাওয়া করতেন। কিন্তু এরই মধ্যে তারিনীর সাথে অর্কিডের সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়। এই সুযোগে তারিন পূর্বের স্বামী রিংকুর সাথে যোগাযোগ শুরু করেন। একপর্যায় অর্কিডকে খুন করতে রিংকুর সাথে পরামর্শ ও পরিকল্পনা শুরু করে তারিন।
অপরদিকে ফয়সালের বাড়িও কালীগঞ্জে। ফয়সালের সাথেও তারিনীর এক সময় গভীর সম্পর্ক ছিলো। বর্তমানে অর্কিডের সাথে পিতার বাড়িতে সংসার করলেও মোবাইলে যোগাযোগ করতেন তারিন। ফলে রিংকুর পরিকল্পনা বাস্তাবায়ন করতে ফয়সালের সহযোগিতা চান তারিন। ফয়সাল অনিক নামে আরেকজনকে এই কাজে ভাড়াটিয়া হিসেবে সাথে রাখে। গত ৪ মার্চ রাতে অর্কিডকে মোবাইল করে ফরিদপুর থেকে ডেকে আনেন তারিন। এক সাথে রাত যাপনের পর ৫ মার্চ ভোরে তারিনী পিতার বাড়ি থেকে অর্কিডকে সাথে নিয়ে ঢাকা রোড বারান্দীপাড়া ব্রিজের পাসে আসেন। সেখানে রিংকু, ফয়সাল, তারিন এবং অনিক ছিলো। ওই সময় অর্কিডের গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। পরে রুনা বেগম নামে তারিনীর এক আত্মীয় অর্কিডকে সাথে নিয়ে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। কিন্তু জীবন সংকটাপন্ন হওয়ায় চিকিৎসকের তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় রেফার্ড করে। রুনা বেগম একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে অর্কিডকে কালীগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড পূর্বাশা পরিবহন কাউন্টারের সামনে রেখে পালিয়ে চলে আসেন। পরে খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন তাকে ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে ভর্তি করে। প্রায় ছয়দিন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থেকে গতকাল সোমবার বেলা ১১টার দিকে তিনি না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। তবে এই ঘটনার ছয়দিন পার হলেও কোন অপরাধীকে সনাক্ত বা আটক করতে পারেনি পুলিশ।
এদিকে এই ঘটনায় অর্কিডের পিতার যশোর কোতোয়ালি থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করেছেন।
এই ব্যাপারে কোতোয়ালি থানার ওসি কাজী বাবুল হোসেন বলেছেন, অরকিডের অবস্থা শঙ্কটাপন্ন হওয়ায় যশোর থেকে ঢাকা মেডিকেলে শেথ হাসিনা বার্ন ইউনিটে ভর্তি ছিলেন। গতকাল সোমবার বেলা ১১টার দিকে তার মৃত্যু হয়। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করে অপরাধীকে সনাক্ত এবং আটকের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।