নিজস্ব প্রতিবেদক
লাল সবুজের টি-শার্ট পরা একদল তরুণ। কারো হাতে ময়লার ঝুড়ি আবার কারো হাতে ফুলের চারা। সড়কের পাশে ময়লার ভাগাড়ে চলছে পরিচ্ছন্নতার কাজ। প্রথম দেখাতে তাদের পরিচ্ছন্নতাকর্মী মনে হতে পারে। কিন্তু না, এখানকার প্রত্যেকেই স্বেচ্ছাশ্রম দিচ্ছেন। তারা বিডি ক্লিন যশোর গ্রুপের সদস্য।
কথায় আছে, ঘরের খেয়ে বনের মেষ তাড়ানো। হ্যাঁ, প্রবাদে মেষ তাড়ানোর কথা থাকলেও ঘরের খেয়ে মেষ তাড়ানোর পরিবর্তে নগরীর ময়লা পরিষ্কার করে সেখানে ফুলের বাগান গড়ে তুলছেন এসব স্বপ্নবাজ তরুণ।
সরেজমিনে যশোর শহরের চাঁচড়া এলাকা রেণু ও পোনা মাছ বিক্রির অন্যতম মোকামে দেখা যায়, বাজার সংলগ্ন মহাসড়কের পাশেই দিনে দিনে ময়লার ভাগাড় সৃষ্টি হয়েছে। মাসের পর মাস ময়লা-আবর্জনা জমে থাকলেও তা পরিচ্ছন্ন করার কোন তাগিদ ছিল না কারোর। এ অবস্থায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ’বিডি ক্লিন যশোর’ স্থানীয়দের দুর্ভোগ লাঘবে এগিয়ে আসে।
মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) সংগঠনের ২৫ জন কর্মী মিলে ময়লার ভাগাড় পরিষ্কার করে তৈরি করেছেন ফুলের বাগান। সকালে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক হুসাইন শওকত ফুল গাছ রোপণের মাধ্যমে এ বাগান কার্যক্রমের সূচনা করেন। এরপর বিডি ক্লিনের স্বেচ্ছাসেবীরা ওই বাগানে ৫০টি ফুলের চারা রোপণ করেন।
একটু আগে যেটা ময়লার ভাগাড় ছিল মুহূর্তেই সেটাকে ফুলের বাগানে রূপ দিল একদল তরুণ। একটু সচেতন হলেই পরিবেশকে আরও সুন্দর করা যায়, গড়ে তোলা যায় মনোমুগ্ধকর আবহ; এমন কাজের তারই দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছেন তারা।
বিডি ক্লিনের একদল তরুণের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা।
বিডি ক্লিনের খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়ক আল হেলাল মামুন বলেন, ২০১৮ সাল থেকে তারা পরিবেশ রক্ষায় এমন কাজ করে আসছেন। সকাল ৮টা থেকে কাজ করে আজ আরও একটি বাগান করতে পেরেছি। এটি নিয়ে যশোর জেলায় ৮টি বাগান করা হয়েছে। পাশাপাশি সচেতনতা তৈরিতেও কাজ করছি। স্কুল-কলেজে গিয়ে ক্যাম্পেইন করছি। যাতে সবাই নিজ নিজ স্থান থেকে সচেতন হয় এবং একটু সুন্দর পরিচ্ছন্ন শহর গড়তে ভূমিকা রাখে।
তাদের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। আর কখনোই এ স্থানে কাউকে ময়লা ফেলতে দেয়া হবে না বলেও আশ্বস্ত করেছেন স্থানীয় অনেকেই।
এদিকে বিডি ক্লিনের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। যশোরকে একটি পরিচ্ছন্ন শহরে পরিণত করতে শিক্ষার্থীদের এ উদ্যোগ ব্যতিক্রমী বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক হুসাইন শওকত।
তিনি বলেন, আমি কয়েক বছর ধরে এ সংগঠনের কাজ দেখছি। তারা পরিচ্ছন্ন নগরী গড়তে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছে। তাদের দেখাদেখি মানুষ আরও সচেতন হবে এটাই প্রত্যাশা করি। প্রসঙ্গত, ২০১৮ সাল থেকে যশোরের বিভিন্ন পয়েন্টে পরিচ্ছন্নতার কাজ করে আসছে বিডি ক্লিনের সদস্যরা।