নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোরে মুক্তেশ্বরী নদী ভরাট করে প্লট বিক্রি রুখে দিতে একাট্টা হয়েছে এলাকাবাসী। মুক্তেশ্বরী দখল অবমুক্তসহ ১১ দফা দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন বিল হরিণার সর্বস্তরের মানুষ। রোববার দুপুরে বিল হরিণার ভাতুড়িয়ায় মুক্তেশ্বরী পাড়ে কৃষক সমাবেশ থেকে এই একাত্মতার ঘোষণা দেন। বিল হরিণা বাঁচাও আন্দোলন ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন’র (বাপা) এই কৃষক সমাবেশের আয়োজন করে।
যশোর সদর উপজেলার চাঁচড়া ইউনিয়নের ভাতুড়িয়ায় মুক্তেশ্বরী নদীর একাংশ ভরাট করে তৈরি করা প্লটের পাশেই এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। কৃষক সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন’র (বাপা) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির।
অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মো. মোসলেম উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং বিল হরিণা বাঁচাও আন্দোলনের আহ্বায়ক শেখ রাকিবুল ইসলাম নয়নের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন, বাপা’র কেন্দ্রীয় কোষাধ্যক্ষ মো. জাকির হোসেন ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রসুল।
প্রধান আলোচক ছিলেন বাপা কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও যশোর অঞ্চলের আহবায়ক খন্দকার আজিজুল হক মনি। বিশেষ আলোচক ছিলেন বাপা যশোর অঞ্চলের সদস্য সচিব অধ্যাপক আবু সাঈদ মো. আতিকুর রহমান।
বক্তব্য দেন বিল হরিণা বাঁচাও আন্দোলনের ভাতুড়িয়া আঞ্চলিক কমিটির সদস্য সচিব মাসুদুজ জামান টিটো, অধ্যক্ষ পাভেল চৌধুরী, অধ্যাপক গোপিকান্ত সরকার, অধ্যাপিকা ফিরোজা বুলবুর কলি, ড. আহসান হাবিব, মসিয়ার রহমান, রেজাউল করিম, ইউপি সদস্য শফিযার রহমান, মোজাহার হোসেন নল্লা প্রমুখ।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ মুক্তেশ্বরী নদী দখলমুক্ত ও বিল হরিণার জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবিতে একাট্টা হওয়ার ঘোষণা দেন। এ সময় মুক্তেশ্বরী নদী দখলমুক্ত ও বিল হরিণার জলাবদ্ধতা নিরসনে ১১ দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, বিল হরিণার পানি নিস্কাশনের পথ ভাতুড়িয়া পূর্বপাড়া মুক্তেশ্বরী নদীর ব্রিজের উত্তরে মাটি ভরাট করে প্লট আকারে বিক্রির অপচেষ্টা বন্ধ করে দখল উচ্ছেদ করতে হবে। সম্পূর্ণ মুক্তেশ্বরী নদী দখলমুক্ত ও সিএস রেকর্ড অনুযায়ী নদীর সীমানা পুনঃনির্ধারণ পূর্বক স্থায়ীভাবে পিলার স্থাপন করতে হবে। অবৈধ দখল মুক্ত করতে হবে এবং হরিণা বিলের ধানসহ অন্যান্য ফসল কৃষকের বাড়িতে পরিবহনের জন্য মুক্তেশ্বরী নদী ও খালের উভয় পাশে রাস্তা নির্মাণ করতে হবে। মুক্তেশ্বরী নদীর ম্যাপ অনুযায়ী রেকর্ড করে সেই অনুযায়ী খনন ও জিয়া খালের সংযোগ রেকর্ডভূক্ত করতে হবে। জিয়া খাল (চাঁচড়া দক্ষিণ পাড়া থেকে শুরু করে ঢাকুরিয়া পর্যন্ত) পুনঃখনন করে এটাকে সরকারি খালের আওতায় এনে রেকর্ডভুক্ত করতে হবে। বিল হরিণার তিনটি শাখা খাল ত্রিকিন নালা, সিক্বের নালা ও হরের নালা পুনঃখনন ও দখল মুক্ত করতে হবে। বিল এলাকার ব্রিজসমূহ উচু ও প্রশস্ত করে পুনঃনির্মাণ ও ব্রিজের দুই পাশের খালসমূহ উদ্ধার করতে হবে। জিয়া খালের উপর ব্রিজ পুনঃনির্মাণ করতে হবে। মুক্তেশ্বরী নদী দখল ও বিল হরিণার জলাবদ্ধতায় প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। দীর্ঘ জলাবদ্ধতার কারণে পরিবেশগত যে, বিপর্যয় হয়েছে তা নিরূপণের লক্ষে দ্রুত পরিবেশ বান্ধব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। মুক্তেশ্বরী নদী, জিয়া খালসহ অন্যান্য খালে সকল পাটা দ্রুত অপসারণ করতে হবে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে মুক্তেশ্বরী নদীর আওতাভুক্ত বিল হরিণার প্রায় ৩ হাজার ৭শত বিঘা জমিতে কোন আবাদ হয় না। এখানে ফসলের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে (কৃষক, ভূমিহীন ক্ষেত মজুর, প্রকৃত মৎসচাষী ও মৎস্যজীবী) দশ কোটি টাকা।
সমাবেশ ও বিল পরিদর্শন শেষে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন’র (বাপা) কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ যশোরের জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলামের সাথে সাক্ষাত করেন। এ সময় নেতৃবৃন্দ জেলা প্রশাসককে বিল হরিণার জলাবদ্ধতা ও মুক্তেশ্বরী দখল সম্পর্কে অবহিত করেন। জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলাম বাপা নেতৃবৃন্দকে জানান, মুক্তেশ্বরী দখল করে প্লট তৈরির বিষয়টি তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পরপরই দখল উচ্ছেদে অভিযান পরিচালিত হবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন’র (বাপা) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির জানান, তারা মুক্তেশ্বরী দখল করে প্লট তৈরি এবং বিল হরিণার জলাবদ্ধতা পরিদর্শন করেছেন। বিষয়টি জেলা প্রশাসককে অবহিত করেছেন। জেলা প্রশাসক দ্রুততম সময়ের মধ্যে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন।