নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোর শহরে যানজট ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে যশোর ট্রাফিক পুলিশের তৎপরতা বেড়েছে। বৃহস্পতিবার (২৭ফেব্রুয়ারি) শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে ট্রাফিক পুলিশের কর্মব্যস্ততা লক্ষ্য করা গেছে। এ দিন দৈনিক কল্যাণে ‘সড়কে স্বস্তি ফেরেনি, নাকাল শহরবাসী’ প্রধান শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদে ‘নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিতে পরিকল্পনা থাকলেও বাস্তবায়নে ঘাটতি’, ‘বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের চাঁদাবাজির মহোৎসব চলছে’ ও “দুর্ভোগের নাম ‘বেলা সাড়ে এগারোটা” তিনটি সাব-শিরোনাম করা হয়। সংবাদের পরই নড়েচড়ে বসে যশোর ট্রাফিক বিভাগ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শহর ও শহরতলীর গুরুত্বপূর্ণ প্রায় ২১টি সড়কে দুর্ঘটনা এড়াতে চালকদের সচেতন করছে যশোর ট্রাফিক পুলিশ। এ সময় শহরের ভেতরে চলা অবৈধ ইজিবাইক, রিকশা, আইন অমান্যকারী মোটরসাইকেল চালকসহ বিভিন্ন ভাবে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ ও প্রয়োজন হলে রেকার ব্যবহার করে অবৈধ যান জব্দ করতে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
ট্রাফিক অফিস সূত্রে জানা যায়, যশোর পৌরসভা লাইসেন্সের বাইরে অনেক রিকশা-ইজিবাইক শহরতলী থেকে শহরে এসে যানজট সৃষ্টি করছে। অদক্ষ চালকদের খামখেয়ালিপনার কারণে প্রায় প্রতিনিয়ত শহরের কিছু কিছু জায়গায় যানজট সৃষ্টি করছে। ট্রাফিক পুলিশ এসব যানজটমুক্ত করতে প্রায় হিমশিম খাচ্ছে। এমতাবস্থায় যশোর ট্রাফিক পুলিশ বিভাগ যানজট নিরসন ও চলাচল কারী ইজিবাইক রিক্সা ও মোটরসাইকেল আরোহীদের সচেতনতা করতে মাঠে নেমেছে। একই সাথে পুলিশ অবৈধ যানবাহন আটক অভিযান পরিচালনা করছে যশোর ট্রাফিক বিভাগ।
সূত্র জানায়, শহরকে যানজটমুক্ত করতে ট্রাফিক পুলিশ রমজান মাস ও ঈদকে সামনে রেখে মাসব্যাপী যানজট নিরসনের লক্ষ্যে অবৈধ ইজিবাইক-রিকশা আটক ও বেপরোয়া মোটরসাইকেলচালকদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে।
ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যশোরে যেসব ইজিবাইক ও অটোরিকশা চলাচল করে তাদের চালকদের আইন-কানুন সম্পর্কে কোনো ধারনা নেই বললেই চলে। অথচ তারা দিনের পর দিন রাস্তায় বেপরোয়া ভাবে চলাচল করছে। এ বিষয়ে যশোর ট্রাফিক বিভাগের পুলিশ পরিদর্শক (শহর ও যানবাহন) মাহফুজুর রহমান বলেন, মাহে রমজান মাসকে সামনে রেখে যানজটে যেনো জনদুর্ভোগ না বাড়ে সেজন্য ট্রাফিক পুলিশ মাঠে নেমে কাজ শুরু করেছে। যা রমজান মাস শেষেও অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, যানজট নিরসনের জন্য ২-১ দিনের মধ্যে ট্রাফিক পুলিশ আরো কঠোর ভূমিকা পালন করবে। যশোরবাসীকে ট্রাফিক পুলিশকে সহযোগিতা করতে অনুরোধ করেন তিনি। এদিকে বৃহস্পতিবারের দৈনিক কল্যাণের খবরে বলা হয়, যশোর শহরের যানজট নিয়ন্ত্রণ এখন শুধু আলোচনা এবং পরিকল্পনার মধ্যেই যেনো সীমাবদ্ধ। পরিবর্তিত পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ জনগণের নিরাপদ যাত্রা বা নিরবচ্ছিন্ন যাত্রার যে পরিকল্পনা করেছিলো যশোরের ট্রাফিক বিভাগ, তার বাস্তবায়ন হয়নি। বরং প্রতিদিনই শহরের যানজট তীব্র আকার ধারণ করছে। এতে নাকাল অবস্থা জনগণের। গত বছরের ১৬ অক্টোবর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় যশোর ট্রাফিক বিভাগের পুলিশ পরিদর্শক (শহর ও যানবাহন) মাহফুজুর রহমান যানজট নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক বিভাগের বিস্তর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন। সেই পরিকল্পনার মধ্যে অন্যতম ছিলো, সু-শৃঙ্খল পার্কিং ব্যবস্থা করা, অতিরিক্ত যানবাহন শহরে প্রবেশ করতে না দেওয়া, লাইসেন্স ব্যতীত ইজিবাইক ও অবৈধ অটো রিকশার বিরুদে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া, শহরের প্রতিটি প্রবেশ মুখে বিশেষ চেকপোস্ট বসিয়ে অবৈধ যানবাহন প্রবেশ সীমিত করা। এই সিদ্ধান্তের সম্মতি জানিয়েছিলেন জেলা প্রশাসকসহ আইনশৃঙ্খলা কমিটির অন্য সদস্যরাও। তবে এই সভার সাড়ে ৪ মাস পেরিয়ে গেলেও ট্রাফিক বিভাগ এই পরিকল্পনার দৃশ্যমান করতে পারেনি। ফলে শহরের যানজট নিয়ন্ত্রণ আলোচনা এবং পরিকল্পনার টেবিলেই আটকে আছে।
