নিজস্ব প্রতিবেদক
পবিত্র রমজানে যশোরাঞ্চলের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে গেছে। যে সব শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে আসছে তারাও প্রথম ২/৩টি ক্লাসের পর আর মনোযোগ ধরে রাখতে পারছে না। বুধবার যশোরের বেশকিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে এ তথ্য মিলেছে।
শিক্ষক ও অভিভাবকরা বলছেন, বিদ্যালয় বন্ধে উচ্চ আদালতের নির্দেশ এবং পরে সেই নির্দেশ স্থগিত হওয়া নিয়ে সৃষ্ট ধোঁয়াশার কারণে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসছে না। আবার যারা আসছে গরমের কারণে রোজা রেখে তারাও মনোযোগ হারাচ্ছে।
তবে রমজানে বিদ্যালয় খোলা ও বন্ধ নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে দুই ধরনের মত পাওয়া গেছে। কিছু অভিভাবক বলছেন, নতুন কারিকুলামে শিক্ষার্থীরা বাড়িতে বসে পড়া বুঝতে সমস্যা হচ্ছে। টানা এক মাস বিদ্যালয় বন্ধ থাকলে শিক্ষাজীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। আবার অনেকে বলছে, রোজা রেখে গরমের মধ্যে ক্লাস করা কষ্টকর।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ৮ ফেব্রুয়ারি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি পূরণ করতে রোজার প্রথম ১০ দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং নিয়মিত পাঠদান কার্যক্রম চালু রাখা হবে। আর শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, ২৫ মার্চ পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শ্রেণি কার্যক্রম চালু থাকবে।
তাদের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন আইনজীবী মাহমুদা খানম। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে রোববার হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ স্কুল খোলা রাখার সিদ্ধান্ত স্থগিত করেন। হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে, যা সোমবার চেম্বার আদালতে শুনানির জন্য ওঠে। চেম্বার আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনটি মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান। মঙ্গলবার এই আদেশ স্থগিত করে দেয় আপীল বিভাগ।
যশোর ইনস্টিটিউট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সৈয়দা শিরিন চৌধুরী বলেন, প্রতি রোজায় শিক্ষার্থী উপস্থিতি কমে। এবার তাদের বিদ্যালয়ের ভবন ভেঙ্গে নতুন করে নির্মাণ করা হচ্ছে। পাশে টিনসেডে ক্লাসে গরম লাগায় শিক্ষার্থী উপস্থিতি কমে গেছে।
বুধবার টাউন হল মাঠে এক শিক্ষার্থীর পিতা আমিনুর রহমান বলেন, রোজার সময় বিদ্যালয় বন্ধ থাকা ভালো। কারণ ছোট ছেলেমেয়েরা প্রথম দিকে রোজা রাখে। ধর্মের ব্যাপার নিষেধ করা কঠিন হয়।
ঝিকরগাছার গঙ্গানান্দপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত বিদ্যালয় চলছে। নবম শ্রেণিতে ৭টি এবং অন্যান্য শ্রেণিতে ৬টি করে ক্লাস হচ্ছে। কিন্তু ৩টি ক্লাস শেষে শিক্ষার্থীরা মনোযোগ হারিয়ে ফেলছে। রোজায় শিক্ষার্থীদের গড় উপস্থিতি ৫০ শতাংশে নেমে এসেছে।
চৌগাছার স্বরূপদাহ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সাহিদুজ্জামান বলেন, ৪র্থ শ্রেণি ও ৫ম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা রোজা রাখে। তারা রোজা রেখে ক্লাসে আসতে চায় না। আসলেও সেভাবে মনোযোগ দেয় না। আগে শতভাগ উপস্থিতি থাকলেও এখন উপস্থিতি ২০ ভাগ কমে গেছে।
যশোর সদরের চান্দুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেখা রানী চৌধুরী বলেন, রোজায় উপস্থিতি কমেছে। এখন ৭০-৭২ ভাগ শিক্ষার্থী উপস্থিত হচ্ছে। দুই-একটি ক্লাসের পর যারা রোজা রাখে তারা চলে যেতে চায়। আবার অভিভাবকরাও বিদ্যালয়ে এসে রোজা রাখা সন্তানদের খোঁজ নেয়। ছুটিও চান।
যশোর ইসলামিয়া উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, রোজা রেখে নয়টা থেকে তিনটা পর্যন্ত ক্লাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য কষ্টকর। তাই অনেকে ক্লাসে আসছে না। আমাদেরও ক্লাস নিতে একটু হিমসিম খেতে হচ্ছে। তবে আমার ফোন করে তাদের ক্লাসে আসার জন্য বলছি। আমার চেষ্টায় আছি সবাইকে ক্লাসে আনার এবং ভালো ভাবে পাঠদান করানোর।
এখানকার দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীর সানজানার মা বলেন, ঈদের পরেই অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা। ক্লাস না করলেও সমস্যা। আবার রোজা রেখে ক্লাস করা খুবই কষ্টের। দুপুরের পরে মেয়েটার মুখের দিকে তাকানো যায় না।
যশোর সদরের মালঞ্চী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ঝরণা খাতুন বলেন, শিক্ষার্থীদের অনেকেই আসছে না। আমরা অভিভাবকদের সাথে যোগাযোগ করে তাদের বিদ্যালয়ে আসতে বলছি। এই শিক্ষিকা আরো বলেন, তার মেয়ে রোজা ছিল। রোজা রেখে বিদ্যালয়ে গিয়েছিল। তার জ¦র এসেছে।
যশোর জেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সদরের দত্তপাড়া সরকারি প্রাইমারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুর জব্বার জানান, আমরা সরকারি নির্দেশনা মেনে চলছি। কষ্ট হলেও কিছু করার নেই।