নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোরে যুগ যুগ ধরে রাজনৈতিক সহাবস্থান ছিল। রাজনৈতিক মতাদর্শ ভিন্ন থাকলেও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান কিংবা চায়ের আড্ডায় মিলিত হতে দেখা যেতো বিভিন্ন দলের নেতাদের। সাম্প্রতিক সময়ে সেটা নষ্ট হয়েছে। সেই ধারা ফিরিয়ে নিতে সব দলের আন্তরিকতা থাকতে হবে।
শনিবার যশোরের বাঁচতে শেখা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘টাউন হল’ সভায় অংশ নিয়ে বক্তারা এমন মন্তব্য করেন। আইআরআই ও ইউএসএআইডি’র সহযোগিতায় রূপান্তর পরিচালিত ‘শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ও রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার জন্য নাগরিক উদ্যোগ সৃষ্টি’ প্রকল্পের পক্ষ থেকে এ সভার আয়োজন করা হয়।
বক্তব্যে জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান বুলু বলেন, গত ১৫ বছর আগেও দেখেছি ২১ ফেব্রুয়ারির মতো জাতীয় অনুষ্ঠানে আলোচকদের সারিতে আছেন আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ অন্যান্য দলের নেতৃবৃন্দ ও সরকারি কর্মকর্তারা। কিন্তু সেটা এখন নেই। জাতীয়ভাবে রাজনীতিতে মতামত দেয়া বা গ্রহণ করার মতো অবস্থা না থাকায় এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। জাতীয়ভাবে সহাবস্থান সৃষ্টি করা না গেলে যশোরের জেলা পর্যায়ের নেতাদের পক্ষে বাস্তবিক অর্থে সৌহার্দ্যপূর্ণ রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলা কঠিন।
প্রেস ক্লাব যশোরের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমান বলেন, সামাজিকতা ও রাজনৈতিক মঞ্চে সহাবস্থান না থাকলেও আওয়ামী লীগের অনেকের সাথে ভেতরে ভেতরে বিএনপির যোগযোগ আছে। ঠিকাদারি লাইসেন্স ভাড়ার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সহাবস্থান রয়েছে।
রূপান্তরের নির্বাহী পরিচালক স্বপন কুমার গুহ এর সভাপতিত্বে ও সুন্দরবন একাডেমীর নির্বাহী পরিচালক শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আনোয়রুল কাদিরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা প্রদান করেন রূপান্তরের পিস কনসোর্টিয়াম প্রকল্পের পরিচালক শাহাদৎ হোসেন বাচ্চু। কর্মসূচির লক্ষ্য উদ্দেশ্য তুলে ধরেন প্রকল্পের সমন্বয়কারী অসীম আনন্দ দাস।
সভায় নেতৃবৃন্দ বলেছেন, প্রতিহিংসামূলক রাজনৈতিক আচরণ এই দেশে পুরাতন সংস্কৃতি। এই সংস্কৃতি ভেঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবো। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান সৃষ্টিতে সরকারি দল, বিরোধী দল যৌথভাবে উদ্যোগ নিতে হবে যাতে করে যশোরের রাজনৈতিক অঙ্গণে শান্তি বিরাজমান থাকে।
সভায় বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যশোর জেলা কমিটির সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন। সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন যশোর পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার গনি খান পলাশ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল যশোর জেলা শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন ও জাতীয়তাবাদী মহিলা দল যশোর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌসি বেগম।
আলোচনায় অংশ নেন বাঁচতে শেখার নির্বাহী পরিচালক ড. অ্যাঞ্জেলা গোমেজ, সনাক যশোরের সভাপতি শাহীন ইকবাল, জনউদ্যোগের সদস্য প্রকৌশলী ধনঞ্জয় বিশ^াস, ডা. আব্দুর রাজ্জাক কলেজের অধ্যক্ষ ইকবাল হোসেন, শ্রমকি নেতা মাহবুবুর রহমান মজনু, মহিলা পরিষদ যশোরের সাবেক সভাপতি অধ্যাপিক সুরাইয়া শরীফ, জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান বুলু, প্রেস ক্লাব যশোরের সাধারণ সম্পাদক এস এম তৌহিদুর রহমান, বাঁচতে শেখা যশোরের সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা এমলিনা সরকার, আইইডি যশোরের ব্যবস্থাপক বিথীকা সরকার, রাইটস যশোরের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর আজহারুল ইসলাম, নাগরিক নেতা প্রদীপ দাস, সাংবাদিক মনিরুল ইসলাম, এডাব যশোরের সহ-সভাপতি শাহজাহান নান্নু প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সাংবাদিকবৃন্দ, তৃণমূল পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ, নারী নেতৃবৃন্দ, শিক্ষক নেতৃবৃন্দ, উন্নয়নকর্মীবৃন্দসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। আলোচকরা যশোরে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সহাবস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে একসাথে কাজ করার আহ্বান জানান।
সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে যশোর পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার গনি খান পলাশ বলেন, যশোরের উন্নয়নে নানামুখী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ভৈরব নদের সংস্কারসহ বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলা হচ্ছে। পয়ঃনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের যশোর শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন বলেন, যশোরে রাজনৈতিক সহাবস্থান ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ ছিল। কিন্তু ২০১৪ সালের পর সেটা ক্রমে নষ্ট হয়েছে। সহনশীল রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টির ক্ষেত্রে সরকারি ও বিরোধী দলের যৌথভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
সভা শেষে যশোর বাঁচতে শেখা অফিস চত্বরে দুটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ সম্প্রীতি বৃক্ষ হিসেবে দুটি ফলের চারা রোপন করেন।
