নিজস্ব প্রতিবেদক
কয়েকজন যুবক যশোর শহরের ব্যস্ততম সড়কের উপরে দৌঁড়ে দৌঁড়ে একজনকে মারছে। দুই জনের হাতের রয়েছে চাকু। এলোপাতাড়ি ছুরি চালিয়ে জখম করছে তারা। এক পর্যায়ে পথচারীরা ছুরিকাহত যুবককে হাসপাতালে নেয়ার জন্য গাড়িতে তুলছে। নির্মম এই হত্যাকাণ্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সোমবার রাত আটটার দিকে যশোর শহরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সড়কের রেলগেট এলাকায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। সাত যুবক যাকে মারছিলেন তার নাম রিপন হোসেন (৩০)। তার বাড়ি শহরের খড়কি কবরস্থান এলাকায়। তিনি পেশায় একজন লেদমিস্ত্রি। পাশাপাশি তিনি ওয়ার্ড যুবলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় কর্মী ছিলেন।
নিহতের পরিবারের অভিযোগ, রিপনকে যারা হত্যা করেছে তারা এলাকার চিহ্নিত, পরিচিত ও এক সময়ের রাজনৈতিক সহকর্মী। এই ঘটনায় মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মামলা করেনি নিহতের পরিবার। তবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য যশোর পৌরসভার এক কাউন্সিলর, পৌর আওয়ামী লীগনেতাসহ পাঁচজনকে পুলিশ হেফাজত নিলেও পরে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।
পুলিশ ও নিহত ব্যক্তির স্বজনদের সূত্রে জানা গেছে, চার ভাই বোনের মধ্যে রিপন তৃতীয়। সে যশোর রেলস্টেশন এলাকার লেদ কারখানাতে কাজ করতেন। পাশাপাশি তিনি ওয়ার্ড যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয় কর্মী ছিলেন। ঘটনার দিন বিকালে তার স্ত্রী ও আট মাস বয়সী সন্তানকে শ^শুর বাড়িতে রেখে বাড়িতে আসেন। এরপর বাড়িতে খাবার খেয়ে সন্ধ্যায় শহরে বের হন। রাত আটটার দিকে যশোর রেলস্টেশন এলাকা থেকে বাড়িতে ফিরছিলেন রিপন। শহরের রেলগেট এলাকায় পৌঁছালে প্রতিপক্ষের লোকজন অতর্কিত ছুরি মেরে জখম করে। গুরুতর অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তার মরদেহ যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গ থেকে ময়নাতদন্ত শেষে কারবালা কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।
গতকাল বিকালে শহরের খড়কি তার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিবেশী ও স্বজনদের ভিড়। বাড়ির ভিতরে চেয়ারে বসে রিপনের মা রুপবান বেগম শোকে মুহ্যমান। প্রতিবেশী ও স্বজনদের জড়িয়ে ধরে তিনি কেঁদেই যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘তার ছেলে অনেক ভালো। আগে রাজনীতি করলেও সন্তান হওয়ার পরে সে আর রাজনীতি করতো না। লেদে কাজ করেই সংসার চালাতো। সোমবার হাসি মুখে ভাত খেয়ে সন্ধ্যায় বাইরে গেল। রাতে শুনলাম আমার ছেলেটা মার্ডার হয়েছে। সে হাসপাতালে রয়েছে। তিনি জানান, ‘স্থানীয় খড়কি এলাকার সন্ত্রাসী ও যুবলীগনেতা আক্তারুজ্জামান ডিকুর সঙ্গে এক সময় রাজনীতি করতো রিপন। ডিকুর সমাবেশে যাওয়া আসা করতো সে। ডিকুর সঙ্গে রিপন আর রাজনীতি না করাতে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। নিহত রিপনের বোন নিলুফার ইয়াসমিন জানান, এলাকার আধিপত্য নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে খড়কি এলাকার ডিকুর সাথে তাদের বিরোধ চলে আসছিল। তারই জের ধরে ডিকু বাহিনীর লোকজনে রিপনকে হত্যার হুমকি দিয়েছিল। এদিন রাত ৮টার দিকে রিপন, মুস্তাক ও বিপুল রেলগেট থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে ফিরছিল। পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ডিকুর নেতৃত্বে পিচ্চি রাজা, আসিফ, নিশান, দেলোয়ার হোসেন দেলা, সাকলাইন হোসেন, ইমন হোসেন, ফরিদ হোসেন, ওমর আলী ও শরীফসহ কয়েকজন দুইটি ইজিবাইকে চড়ে মুজিব সড়কে অবস্থান নেয়। মুজিব সড়কে বেবী সপের সামনে আসা মাত্র তাদের রিক্সার পথরোধ করে কুপিয়ে রিপনকে হত্যা এবং বিপুল ও মুস্তাককে আহত করে।
স্থানীয় লোকজনদের সঙ্গে জানা গেছে, খড়কি এলাকাতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুটি গ্রুপের সৃষ্টি হয়েছে। একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দেন আক্তারুজ্জামান ডিকু অন্যটি হাফিজুর রহমান ভুট্টো। নিহত রিপন এক সময়ে ডিকুর সঙ্গে চলাচল করলেও সর্বশেষ তিনি ভুট্টোর সঙ্গে চলাচল করছিলেন। প্রায় দুই পক্ষের মধ্যে দলের সভাসমাবেশে লোক নেওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। নিজেদের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটেছে।
এই বিষয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি আধিপত্যে বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন। বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের পুলিশ হেফাজত নিয়েছিলো। আবার সবাইকে ছেড়েও দেয়া হয়েছে।