নিজস্ব প্রতিবেদক: যশোরের রেলওয়ের জমিতে বসবাসকারী অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এই ঘোষণার পর আতংকিত হয়ে পড়েছে রেলওয়ের জমিতে বসবাসরত সহস্রাধিক পরিবার। বিশেষ করে রেলওয়ের যায়গায় খুপড়ি ঘরে বসবাসকারী দিনমজুর মানুষের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। তাদের দাবি উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ করা না হলে ছেলে মেয়েসহ হাস মুরগি, ছাগল গরু, থালা বাসন নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি গ্রহণ করবে।
খোলাডাঙ্গা রেল ক্রসিং এলাকার রেলওয়ের জমিতে বসবাসকারী মতিয়ার রহমান বলেন, দীর্ঘদিন যাবত রেলওয়ের জমি লীজ নিয়ে বসবাস করছি। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে রেলওয়ে কাছারী থেকে আমাদের নামে এই জমি অনির্দিষ্টকালের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রতিবছর আমাদের কাছ থেকে আদায় করা হয় অর্থ। আমি একজন দিনমজুর। এখন যদি উচ্ছেদ করা হয় তবে আমার যাওয়ার মতো কোন ঠিকানা নেই। আমি এখন ছেলে মেয়ে নিয়ে কি করব তা ভাবতে পারছি না।
আসলাম হোসেন বলেন, রেলওয়ের জমিতে বসবাস করছি প্রায় ২৫ বছরের বেশি। ছেলে মেয়ে নিয়ে যাবার কোন যায়গা নেই। শুনেছি সরকার যাদের ভিটে মাটি নেই তাদের জন্য ঘরের ব্যবস্থা করছে। কিন্তু আজও তার দেখা মেলেনি। যারা নেতাদের ম্যানেজ করতে পারে কাদেরই কেবল ঘর দেয়া হয়। এখন রেল কর্তৃপক্ষ সাতদিনের সময় দিয়ে মাইকিং করে গেছে। বাকি আছে ৪ দিন। কি হবে জানিনা। যদি এখান থেকে আমাদের উচ্ছেদ করে তবে মরে যাওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই।
ট্রাক হেলপার বাবু বলেন, আমি ট্রাকে হেলপারি করে কোনরকম জীবিকা নির্বাহ করি। ভাড়া করা ঘরে থাকার মতো সামর্থ আমার নেই। রেলের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে খুপড়ি ঘর করে বসবাস করছি দীর্ঘদিন। এখন মাইকিং করে আমাদের সরে যেতে বলা হচ্ছে। আমার কোন ভিটেমাটি নেই যে সেখানে গিয়ে বাস করবো। ছেলে মেয়ে নিয়ে কোথায় যাব বুঝতে পারছিনা। আত্মহত্যা ছাড়া আমার কোন উপায় নেই। আমি চেয়ারম্যানের কাছেও বহুবার অনুরোধ করেছি সরকারি ঘর পাওয়ার জন্য। কিন্তু চেয়ারম্যান মেম্বর সেদিকে কান দেননি। অথচ যাদের জায়গা জমি ঘর বাড়ি আছে তাদের অনেকেই সরকারি ঘর পেয়েছে। শোনা যাচ্ছে সরকারি ঘর খালি পড়ে আছে। আমার দাবি সরকার যদি আমাদের জন্য ঘরের ব্যবস্থা না করে উচ্ছেদ অভিযান চালায় তবে আমরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হবো।
জরিনা বেগম বলেন, উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ করা না হলে আমরা ছেলে মেয়েসহ হাস মুরগী, ছাগল গরু, থালা বাসন নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি গ্রহন করবো। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরবো না। প্রয়োজনে প্রতি বছরের মতো টাকা বাড়িয়ে আমাদের নামে জমি বরাদ্দ দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।
রেলওয়ের খুলনা বিভাগীয় ভূমি কর্মকর্তা নুরুজ্জামান জানান, সরকার রেলওয়ের উন্নয়নে কার্যক্রম শুরু করেছে। ডবল লাইন করার জন্য দুই পাশে পর্যাপ্ত যায়গা না থাকায় অবৈধ দখলদারদেকে যায়গা ছেড়ে দিতে বলা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তারা যায়গা ছেড়ে না দিলে তাদেরকে আইনগত ভাবে উচ্ছেদ করা হবে।
লিজ সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি বলেন, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ মেয়াদবিহীন কৃষি জমি হিসেবে কিছু জমি লিজ দিয়ে থাকে। লিজপত্রে উল্লেখ করা আছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনে যে কোন সময় বিনা নোটিশে তাদের জমি ছেড়ে দিতে হবে। সেখানে বাড়িঘর তৈরি করে বসবাসের কোন সুযোগ নেই। যারা রেলওয়ের জমিতে বসবাস করছে তারা সবাই অবৈধ বসবাসকারী হিসেবে চিহ্নিত।