শাহারুল ইসলাম ফারদিন: যশোর কালেক্টরস সোসাইটি গতকাল শুক্রবার শহরের যশোর জেলা স্কুলে যশোর কালেক্টরস সোসাইটির প্রথম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে সংগঠনের উদ্যোগে শখ ও সংগ্রহের প্রদর্শনীর আয়োজন করে। প্রদর্শনীটি উদ্ধোধন করেন যশোরের জেলা প্রসাশক। শুক্রবার ছিল দুইদিন ব্যাপী প্রদর্শনীর প্রথম দিন। প্রদর্শনীতে নানা ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রী ও জিনিসপত্র তুলে ধরা হয়।
প্রদর্শনীতে প্রধান অতিথি ছিলেন যশোরের জেলা প্রসাশক তমিজুল ইসলাম খান, বিশেষ অতিথি ছিলেন যশোর জেলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক শোয়াইব হোসেন। শখের এ প্রদর্শনীতে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে নানা বয়সী মানুষ আসছেন। দুই দিনব্যাপী প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন ১৬ জন সংগ্রাহক।
প্রদর্শনীতে মোগল সাম্রাজ্য নেই, কিন্তু সাম্রাজ্যের ধাতব মুদ্রা এখনো রয়ে গেছে। শুধু মোগল সাম্রাজ্যই নয়, প্রাচীন ইন্দো-গ্রিক যুগের মুদ্রা, ১৭৮০ ও ১৮০০ সালের তৈরি একপাই সিক্কা, ফুটো পয়সা, কানাপাইসহ পৃথিবীর ২৫০টি দেশের আড়াই হাজার রকমের প্রাচীন ও বর্তমান সময়ের অন্তত আধা মণ ওজনের মুদ্রা। দেড় থেকে দুই হাজার বছর আগের টেরাকোটা, নকশাকাটা ইট। বগুড়ার মহাস্থানগড় থেকে এসব টেরাকোটা সংগ্রহ করা হয়েছে। রয়েছে যশোরের চৌগাছা উপজেলার জগদীশপুরের জমিদারের শেষ বংশধর ইয়াহিয়া বিশ্বাসের চার ফুট লম্বা ঐতিহাসিক তরবারি, যা ৫০০ বছর আগের নিদর্শন।
সংগ্রহশালায় আরও রয়েছে মাটির প্রাচীন শঙ্খ, ব্রোঞ্জের বৌদ্ধমূর্তি, বিষ্ণুমূর্তি, মাটির গণেশ, হাতির দাঁতের ছুরি ও কারুকার্যখচিত ছুরির খাপ, উপজাতিদের ব্যবহৃত গয়না (বাজু, নূপুর, বিছা, গলার হার, চুড়ি), পাথরের থালাবাসন, হুকা, অভিনব তালাচাবি, জার্মানির তৈরি হ্যাজাক, ল্যাম্প, সুইডেনের তৈরি পিতলের স্টোভ, বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত বাংলাদেশের সব ধরনের ডাকটিকিট, কলের গানের রেকর্ড, পিতলের তৈরি কয়লার ইস্তিরি, পুরোনো আমলের বিভিন্ন ধরনের ক্যামেরা, সরকার অনুমোদিত বিভিন্ন সংস্থার লটারির টিকিট, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রকাশিত সংবাদপত্রের একটি করে কপিসহ প্রতœতাত্ত্বিক নানা নিদর্শন।
প্রদর্শনীতে আসা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এ এস সাগর বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে নানা প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। কিন্তু এ আয়োজনের তুলনা অন্য রকম। নতুন প্রজন্ম ইতিহাসের নিদর্শন দেখতে পাচ্ছে। এ বিষয়গুলো সর্বস্তরে ছড়িয়ে দিতে হবে।’
কলেজ শিক্ষার্থী রাকিব চৌধুরী বলেন, ‘সত্যিই অসাধারণ। ছবিতে অনেক মুদ্রা, সংগ্রহের বিষয় শুনেছি। এখানে এসে মনটা ভালো হয়ে গেল। একটি কাগজের নোটের পেছনে কত ইতিহাস থাকে, না দেখলে বোঝা যেত না। হারিয়ে যাওয়া হুক্কা, বঙ্গবন্ধুর ব্যবহার করা পাইপ, জমিদারদের লাঠির আড়ালে তলোয়ার, প্রাকৃতিক উৎস ব্যবহার করে মুদ্রাবিনিময়, তিন-চার যুগের টাকার চমৎকার সংগ্রহ।’
সংগ্রাহক লুৎফর রহিম বলেন, ‘লেখাপড়া শেষ করে চাকরিজীবনে ঢুকে বুঝলাম, এ দেশের সমৃদ্ধ ইতিহাস ও ঐতিহ্য রয়েছে। অথচ আধুনিকতার ছোঁয়ায় অনেক কিছু হারিয়ে যাচ্ছে। নতুন প্রজন্মকে জানানোর জন্য সবার প্রচেষ্টায় ব্যক্তিগত সংগ্রহশালাটি গড়ে তুলেছি। ৩০ বছর ধরে এ কাজ করে যাচ্ছি।’ এখানে প্রবীণ মানুষেরা এসে কলের গানের রেকর্ড শুনতে চাচ্ছেন। কলের গান শুনে তাঁরা তাঁদের শৈশবে ফিরে যান বরেও জানান।
তরুণ সংগ্রাহক সাগর সৈকত সংগ্রহে রয়েছে দেড় শ প্রকারের দুই শতাধিক মুদ্রা, নোট ও স্বারক নোট। তিনি জানান জায়গার সল্পতায় আরো অনেক মুদ্রা নোট প্রদর্শন করতে পারিনাই।
ডাক মন্ত্রনালয়ের ও বাংলাদেশ ডাক বিভাগের ফিলাটেলি বিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির সদস্য এটিএম আনোয়ারুল কাদির জানান, যশোর কালেক্টরস সোসাইটির শখ ও সংগ্রহের প্রদর্শনী উপলক্ষে আজ ডাক বিভাগ একটি নতুন সিল রিলিজ করলো যা আগামীতে খুব প্রয়োজনীয়।
যশোর কালেক্টরস সোসাইটির উপদেষ্টা মফিজুর রহমান খাঁন বলেন, ‘ব্যক্তিগত শখের জায়গা থেকে মানুষ এই কাজটি করে। আমরাও এর ব্যতিক্রম নই। কিন্তু এখন এটি নেশায় পরিণত হয়েছে। আর মানুষের আগ্রহ আমাদের অনুপ্রাণিত করে। তিন দিনে কয়েক হাজার মানুষ এখানে এসেছে।’