রায়হান সিদ্দিক
যশোরে জমে উঠতে শুরু করেছে মাসব্যাপী শিল্প ও বাণিজ্য মেলা। প্রায় ১ যুগ পর ব্যবসায়ীদের সংগঠন যশোর চেম্বার অব কমার্স আন্ড ইন্ডাস্ট্রি এই মেলার আয়োজন করেছে। মেলাকে ঘিরে প্রাণবন্ত শহরের মুন্সি মেহেরুল্লাহ ময়দান। মেলায় হরেক রকমের দেশি বিদেশি পণ্যের পাশাপাশি বিনোদনের জন্য রয়েছে নানা আয়োজন। তবে প্রচার প্রচারণার ঘাটতি রয়েছে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের।
উদ্বোধনের সপ্তম ও অষ্টম দিনে মেলা প্রাঙ্গণে দেখা মেলে হরেক রকমের পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসে আছেন ব্যবসায়ীরা। তবে চাহিদা অনুযায়ী নেই ক্রেতাসমাগম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদ আর পহেলা বৈশাখ পার করে বেচাবিক্রি অনেকটা কম। তবে মেলা কেবল জমতে শুরু করেছে। ভালো প্রচার প্রচারণা চালালে মেলা আরও জমজমাট হয়ে উঠবে বলে আশা করছেন তারা।
মেলায় ঢাকা থেকে আগত ব্যবসায়ী আরিফ এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী আব্দুল হামিদ জানিয়েছেন, মেলায় ক্রেতাসমাগম বেশ ভালো হলেও বেচাবিক্রি কম। অধিকাংশ মানুষ আসছেন মেলার আয়োজন দেখতে। তার মতে প্রচার প্রচারণা আরও বাড়ালে বেচাবিক্রিও বাড়বে।
বিক্রমপুর কসমেটিক্সের সত্ত্বাধিকারী শফিউল্লাহ বলেন, মেলায় সাধারণত শহরের মানুষের থেকে বেশি কেনাকাটা করে গ্রাম অঞ্চলের মানুষ। তাই গ্রাম পর্যায়ে প্রচার প্রচারণা বেশি হওয়া প্রয়োজন। এই বিষয়ে মেলা কর্তৃপক্ষের আরও নজর দেয়া উচিৎ বলে জানিয়েছেন তিনি।
মেলায় নিরাপত্তা জনিত সমস্যা আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে শফিউল্লাহ বলেন, এখনো তেমন কোন সমস্যা হয়নি। নিরাপত্তার বিষয়ে মেলা কর্তৃপক্ষ বেশ সজাগ রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
ইসমাইল মেটালের সত্ত্বাধিকারী ইসমাইল হোসেন বলেন, মেলা মাত্রই জমতে শুরু করেছে। একমাসের মধ্যে কেবল ৭দিন পার হয়েছে। আশা করছি সামনের দিনগুলোতে বেচাকেনা বাড়বে। যশোরের এই মেলা থেকে আমরা লাভবান হয়ে ফিরতে পারবো।
এদিকে দীর্ঘদিন পর যশোরে এমন জমজমাট মেলার আয়োজন হওয়ায় খুশি ক্রেতারা। নানা শ্রেণি পেশার মানুষ প্রতিদিনই মেলায় ঘুরতে আসছেন। বিশেষ করে বিকেলের পর থেকে রাত অবধি মেলায় চোখে পরার মতো ভিড় দেখা যায়। মেলার আয়োজন, নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ পণ্যের দাম নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করছেন ক্রেতারা।
শহরের বেজপাড়া এলাকার বাসিন্দা রফিকুল বারী বলেন, অনেক দিন পর এমন বাণিজ্য মেলার আয়োজন দেখে ভালো লাগছে। পরিবার নিয়ে এসেছি দেখতে মেলায় কি কি পাওয়া যাচ্ছে। পরে সময় করে এসে কিনবো।
আফরোজা সুলতানা নামে একজন ক্রেতা বলেন, মেলায় হরেক রকমের পণ্য পাওয়া যাচ্ছে, বিশেষ করে কসমেটিক্স আইটেম রয়েছে অনেক। পছন্দ অনুযায়ী কিনছি। দামও ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মেলাগুলোতে সব বেশি সমস্যা হয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে। অনেক বেশি লোকসমাগম হলে নিরাপত্তা হুমকিতে পড়তে হয়, তবে মেলায় এখনো তেমন কোন সমস্যা আমরা দেখি নাই। আশা করছি মেলা শেষ হওয়া পর্যন্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো থাকবে।
সময় স্বল্পতার কারণে প্রচার প্রচারণার কিছুটা ঘাটতি হয়েছে স্বীকার করে মেলার ম্যানেজার সায়েদুল ইসলাম চাঁদ বলেন, দীর্ঘ দিন পর শহরের মুন্সি মেহেরুল্লাহ ময়দানে চেম্বারের উদ্যোগে বাণিজ্য মেলার আয়োজন করা হয়েছে। কিন্তু মেলার আয়োজন থেকে শুরু করে উদ্বোধন পর্যন্ত আমরা খুব কম সময় পেয়েছি তাই সবকিছু গুছিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। তবে আমরা চেষ্টা করছি যশোরবাসীকে জমজমাট একটা মেলা উপহার দেয়ার জন্য।
এবিষয়ে যশোর চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মিজানুর রহমান খান বলেন, বাণিজ্য মেলার মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যগুলো মানুষের কাছে পরিচিত করা। তবে দীর্ঘদিন মেলা অনুষ্ঠিত না হওয়ায় কিছুটা চ্যালেঞ্জের মুখে আমরা পড়েছি। এখনো পরিপূর্ণ স্টল বরাদ্দ হয়নি। স্থানীয় পণ্য নিয়ে যারা কাজ করছেন আমরা তাদের সাথেও পরিপূর্ণ যোগাযোগ স্থাপন করতে পারিনি। তবে আমরা চেষ্টা করছি, আশা করছি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আমাদের যে লক্ষ্য এবং বাণিজ্য মেলার যে মূল প্রতিপাদ্য তা আমরা পূরণ করতে পারবো।
তিনি আরও বলেন, এ জাতীয় মেলা সাধারণত ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টকে দিয়ে করানো হয়। এখানেও একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তাদের সাথে চেম্বার সমন্বয় করে মেলা পরিচালনা করছে।
মেলার নিরাপত্তার বিষয়ে চেম্বারের সভাপতি বলেন, বর্তমান সময়ে নিরাপত্তা একটি বড় ইস্যু। এই বিষয়ে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছি। প্রশাসনের পাশাপাশি আমাদের নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক দল রয়েছে মেলা প্রাঙ্গণে নিরাপত্তার জন্য। তাছাড়া সার্বক্ষনিক সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আছে সম্পূর্ণ মেলা প্রাঙ্গন।
মেলা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, গত ১২ এপ্রিল যশোরে মাসব্যাপী শিল্প ও বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন করেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু। উদ্বোধনী দিনে মাত্র ৮টি স্টল নিয়ে মেলার যাত্রা শুরু হলেও নির্ধারিত ৯০টি স্টলের মধ্যে বর্তমানে মেলায় ৫০টি স্টল বরাদ্দ নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বাকী স্টলগুলো ফাঁকা রয়েছে।
যশোরে শিল্প ও বাণিজ্য মেলা : ৯০ স্টলের ৪০টি ফাঁকা, দর্শক থাকলেও ক্রেতা কম
৬২ Views