তবিবর রহমান ও গোলাম হাফিজ: যশোরের বহুল প্রত্যাশিত ‘বিসিক লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প পার্ক’ স্থাপনে প্রাথমিক সার্ভে শুরু হয়েছে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে জেলা বিসিকের কর্মকর্তারা ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা এ নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। শহরতলীর বিল হরিণার মধ্যে কাজীপুর, রামনগর, ভাটাপাড়া মৌজার জমি পরিদর্শন এবং ওই এলাকার তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন বিসিকের কর্মকর্তারা। সেখানকার ৪শ’ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। আর যশোর জেলা প্রশাসকের সম্মতি চেয়ে গতকাল মঙ্গলবার জেলা বিসিক থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
বিসিকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যশোর শহরের পাশেই ঝুমঝুমপুরে ৫০ একর জমির উপর ১৯৬৭ সালে গড়ে উঠে বিসিক শিল্পনগরী। এই শিল্পনগরীতে মোট ১১৮টি ইউনিট রয়েছে, যার মধ্যে ১১৫টি ইউনিটেই শিল্প-কলকারখানা চালু রয়েছে। সেখানে জায়গা না থাকায় নতুন করে শিল্প কারখানা গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে না।
প্রাথমিক সম্মতিপত্র পেতে মঙ্গলবার জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি দিয়েছি। ওই সম্মতিপত্র পেলে বিসিক দফতরে প্রেরণ করা হবে
— বিসিক যশোরের উপ মহাব্যবস্থাপক (ভারপ্রাপ্ত) হাফিজুর রহমান
এদিকে শহর ও শহরতলীতে গড়ে উঠেছে কয়েকশ ছোট বড় অটোমোবাইল কারখানা। এগুলো এক ছাতার নিচে আনার জন্য উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে বারবার দাবি তোলা হয়। প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা এ নিয়ে চেষ্টা ও প্রতিশ্রুতি দিলেও দৃশ্যমান তেমন কিছুই দেখতে পারেননি যশোরবাসী। সর্বশেষ বিসিকের চেয়ারম্যান যশোরের সন্তান মুহা: মাহবুবর রহমান এনিয়ে তোড়জোড় শুরু করেন। তিনি যশোর বিসিকে চিঠি দিয়ে জমি দেখার নির্দেশ দেন। গত সপ্তাহে যশোর শিল্পনগরী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্বে) মেহেদী হাসানসহ অন্যরা বিল হরিণায় জমি পরিদর্শনে যান।
মেহেদী হাসান মুঠোফোনে দৈনিক কল্যাণকে বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে প্রাথমিক সার্ভে করা হচ্ছে। তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে পাঠানো হবে। তবে সবকিছুই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। বাস্তবায়নে এখন যশোরবাসীকে আন্তরিক হতে হবে।
এদিকে যশোরে ‘বিসিক লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প পার্ক’ স্থাপিত হলে এ জেলা বদলে যাবে। শিল্প পার্কে শিল্প-কারখানার জন্য দক্ষ জনবলের সরবরাহ নিশ্চিত করতে লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং ট্রেনিং ইনস্টিটিউটও স্থাপন করা হবে। বিশ্বমানের প্রশিক্ষক ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটগুলোয় দেশিয় জনবলের দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হবে।
বিসিক যশোরের উপ মহাব্যবস্থাপক (ভারপ্রাপ্ত) ও অফিস প্রধান হাফিজুর রহমান মুঠোফোনে দৈনিক কল্যাণকে জানান, বাংলাদেশে লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্যের বর্তমান বাজার প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। বছরে দেশে ৯ হাজার মিলিয়ন ডলার আমদানি করতে হয় হালকা প্রকৌশল খাতে। যশোরে এটা বাস্তবায়ন করতে পারলে আমদানি নির্ভরতা কমে যাবে। এখানে প্রায় ১০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
তিনি আরো বলেন, বিসিক যশোর মাত্র ৫০ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত। ১৯৬৭ সালে গড়ে উঠে এ শিল্পনগরী। এখানে জায়গা নেই। এরপরও সরকার প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। এখান থেকে ১৯ দেশে পণ্য রফতানি করা হয়। যশোরে ‘বিসিক লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প পার্ক’ স্থাপন হলে একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। অর্থনীতির চেহারা বদলে যাবে গোটা যশোরাঞ্চলের।
এক প্রশ্নের জবাবে বিসিক যশোরের উপ মহাব্যবস্থাপক বলেন, কার্যক্রম শুরু করতে মে মাসে যশোর বিসিকে চিঠি আসে। চিঠি পেয়ে কার্যক্রম শুরু করেছি। আমাদের কাজ প্রাথমিক পর্যায়ে। তবে ধাপে ধাপে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। মঙ্গলবার জেলা প্রশাসকের কাছে প্রাথমিক সম্মতিপত্র পেতে চিঠি দিয়েছি। ওই সম্মতিপত্র পেলে বিসিক দফতরে প্রেরণ করা হবে।
যশোর সদরের রামনগর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, প্রস্তাবিত এলাকার জমির কাগজপত্র এসিল্যান্ড স্যারের অফিসে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সেখানে পাওয়া যাবে।
এদিকে প্রাথমিক প্রস্তাবনা আসার খবর রামনগর, কাজীপুর এলাকায় জানাজানি হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় সতীঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে জমির মালিক ও চাষিদের উপস্থিতিতে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। গভীর নলকূপ ব্যবসায়ী চাষি শফিয়ার রহমানের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন, জমির মালিক ডা. আব্দুল আজিজ, আব্দুল জব্বার, আসাদুজ্জামান, তোরাপ আলী, আলী আহম্মেদ, আব্দুল আজিজ, আব্দুল হামিদ, আব্দুল ওদুদ, বজলুর রহমান, আসলাম গাজী ও মনোয়ার হোসেন।
সভায় বক্তব্যে বলেন, বিল হরিনা মুক্তেশ্বরী নদী সংলগ্ন জমির মালিক ও চাষির ৮টি গভীর নলকূপ ও অসংখ্য স্যালো মেশিন দিয়ে হাজার হাজার বিঘা জমি চাষ করে আসছে। আবাদি জমিতে ইরি, আমন ও অন্যান্য ফসলের চাষ করে মানুষের খাদ্যের চাহিদা পূরণ ও জীবিকা নির্বাহ করে। আবাদি জমিতে শিল্প পার্ক না করে অন্যত্রে করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তারা দাবি জানিয়েছেন।