নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোর জেলা জাতীয় শ্রমিক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জবেদ আলী ও সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিনকে শ্রমিক লীগ থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে। শনিবার জাতীয় শ্রমিক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা কে এম আযম খসরু যশোর জেলা শ্রমিক লীগের সম্মেলন থেকে এ ঘোষণা দেন। এদিকে, শহরের দুটি স্থানে পৃথক দুটি সম্মেলনে জেলা শ্রমিক লীগের দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
শনিবার (১৩ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৩টায় শহরের জেলা পরিষদ মিলনায়তনে জাতীয় শ্রমিক লীগ যশোরের একপক্ষের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে পুরাতন কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন আংশিক কমিটির নাম ঘোষণা করা হয়। এতে সভাপতি আজিজুল আলম মিন্টু, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মো. লিটন, সিনিয়র সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নূর মো. কুটি, যুগ্ম সম্পাদক জামাল হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক ইউসুফ সিকদারসহ ৭ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ পক্ষের সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় শ্রমিক লীগ যশোরের সাবেক সভাপতি সাইফুর রহমান। প্রধান অতিথি ছিলেন শ্রমিক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা কে.এম আযম খসরু। প্রধান বক্তা ছিলেন কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সুলতান আহমেদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন, সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার, কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক মেহেদি হাসান, দপ্তর সম্পাদক এ.টি.এম ফজলুল হক, অর্থ সম্পাদক মহিউদ্দিন, শিক্ষা ও সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক শহিদ ডাকুয়া, ট্রেড ইউনিয়ন সমন্বয় বিষয়ক সম্পাদক ফিরোজ হোসেন।
সম্মেলনে বক্তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করার মতো অন্যায় কিছুতেই মেনে নেয়া হবে না। যশোর জেলা শ্রমিক লীগে যারা দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছে তাদের দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হলো। সম্মেলন থেকে জবেদ আলী ও নাসির উদ্দিনকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন জেলা শ্রমিক লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবলু।
এদিকে, একই সময়ে যশোর শহরের পৌর কমিউনিটি সেন্টারে জাতীয় শ্রমিক লীগ যশোর জেলা শাখার অপর পক্ষের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে যশোরের সাবেক মেয়র ও জাতীয় শ্রমিক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি এস এম কামরুজ্জামান চুন্নু সম্মেলনের উদ্বোধন করেন।
সম্মেলনে পুরনো কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি ঘোষণা করেন জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা তোফায়েল আহমেদ। সম্মেলনে শ্রমিক নেতা জবেদ আলীকে সভাপতি ও নাসির উদ্দিনকে সাধারণ সম্পাদক করে জাতীয় শ্রমিক লীগ যশোর জেলা শাখার আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়।
অপরদিকে, জেলা শ্রমিক লীগের দুটি পক্ষের শনিবারের একই সময়ের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে শহরে উত্তেজনা বিরাজ করে। এ কারণে শহরের কয়েকটি পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এ সম্মেলন নিয়ে বিরুপ মন্তব্য করেছে। যদিও শান্তিপূর্ণভাবে এদিনের দুটি সম্মেলন সন্ধ্যার আগেই শেষ হয়েছে। কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
প্রসঙ্গত, অনেক আগে থেকেই জেলা শ্রমিক দুই ভাগে বিভক্ত। এক গ্রুপের নেতৃত্ব দেন যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন ও সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার। অন্য গ্রুপের পৃষ্ঠপোষক যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ। শ্রমিক লীগের এ সম্মেলনের মধ্যে দিয়ে আবারও প্রকাশ্যে এলো মিলন-শাহীন এবং কাজী নাবিল আহমেদের গ্রুপিং। একই সংগঠনের দুটি স্থানে এক সময়ে সম্মেলনকে ঘিরে সমালোচনার ঝড় সৃষ্টি হয়েছে। শুধু তাই নয় এ সম্মেলনের পরে দুই নেতার মধ্যে বিরোধ আরও প্রকাশ্যে আসায় এবং সম্মেলন অনুষ্ঠানে নেতৃবৃন্দদের দেয়া বক্তব্যে সামনের দিনগুলোতে রাজনৈতিক সহিংসতার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে জেলা শ্রমিক লীগের সম্মেলনে কেন্দ্রীয় শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা কে এম আযম খসরু প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যশোর শ্রমিক লীগকে এক চিঠির মাধ্যমে বলেছিল আপনারা ১৩ জুলাই সম্মেলন করেন। সেই সিদ্ধান্তে যশোরে সম্মেলন হয়েছে। কিন্তু যশোর শ্রমিক লীগের জবেদ আলী ও সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো তারা সংবাদ সম্মেলন করেছে। তারা কেন্দ্রীয় কমিটিকে চ্যালেঞ্জ করেছে। এজন্য জাতীয় শ্রমিক লীগ থেকে জবেদ আলী ও নাসির উদ্দিনকে আজীবন বহিস্কার ঘোষণা করা হল।’
অপরদিকে যশোর পৌর কমিউনিটি সেন্টারে নাবিল গ্রুপের শ্রমিক লীগের সম্মেলনে প্রধান বক্তা শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা তোফায়েল আহমেদ অপর সম্মেলনের বিরোধিতা প্রকাশ করে বক্তব্যে বলেন, কে কোথায় ছিলেন, আমরা তাদেরকে চিনি এবং জানি, ২০১২ সালে আপনি জাতীয় শ্রমিক লীগে আসছেন আমরা সব জানি। আপনারা অনেক দল করে এসেছেন। আমরা ছোট থেকে আওয়ামী লীগের সাথে থেকে সংগ্রাম করে এ পর্যন্ত এসেছি। এখানে জবেদ আলীসহ আওয়ামী লীগের যারা নেতৃবৃন্দরা আছেন তারা যে কার্যনির্বাহী কমিটি তৈরি করবেন আমরা কেন্দ্রীয় কমিটির ২৪ জন নেতা একমত হয়েছি আমরা এই কমিটিকে অনুমোদন দেব।