# চোরাচালানে জড়িতদের তালিকা তৈরির সিদ্ধান্ত
# ইজিবাইক ও রিকসার লাইসেন্স না দেয়ার নির্দেশ
# দ্রুত মেরামত হবে অকেজো সিসি ক্যামেরা
নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোরে স্বর্ণ পাচারসহ চোরাচালানে যুক্ত রয়েছে তৃতীয় লিঙ্গদের হিজড়া জনগোষ্ঠীর একটি অংশ। তাদের একটি চক্র বেনাপোল বন্দরে বন্ধন ট্রেনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে এই অপরাধ করছে। কাস্টম ও আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিতরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে বিব্রত হচ্ছেন। তল্লাশি করতে গেলে চোরাচালানে জড়িত তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা বিবস্ত্র হয়ে অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে।
রোববার (১১ জুন) যশোর কালেক্টরেট সভাকক্ষে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় এতথ্য জানিয়েছেন পুলিশ ও বিজিবির কর্মকর্তারা। এ সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান। সভা থেকে তাদের তালিকা করে আইনের আওতায় আনার নির্দেশনা দেন জেলা প্রশাসক। সভায় যশোর শহরের ধারণ ক্ষমতার চেয়ে ইজিবাইক ও রিকসা চলাচল করার বিষয়টি আলোচনা হয়। তাই নতুন করে যশোর পৌরসভাকে ইজিবাইক ও রিকসা অনুমতি (লাইসেন্স) না দেওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
সভায় জানানো হয়, দিনকে দিন বন্ধন এক্সপ্রেস চোরাচালানের নিরাপদ বাহন হিসাবে পরিচিত পেয়েছে। গেল কয়েক মাসে বেশ কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করে ব্যাপক চোরাচালান মালামাল জব্দ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গেল মাসে জেলা প্রশাসন ও বিজিবিসহ কয়েকটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ অভিযানে অনেকটা কমেছে। তবে অভিযানে বের হয়ে এসেছে চোরাকারবারের সঙ্গে জড়িত যশোরের বেশ কয়েকজন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের সম্পৃক্ততা। তারা বেনাপোল স্থলপথে ও ট্রেনে করে চোরাচালান করছে। প্রশাসন ও কাস্টম তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে গেলে অশোভনমূলক আচরণ করে। এমনকি তাদের পোশাক খুলে দেন। এমন পরিস্থিতিতে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা সম্মান রক্ষায় চলে আসতে বাধ্য হন। তবে এ নিয়ে কঠোন হচ্ছে জেলা প্রশাসন। চোরাকারবারীর সঙ্গে জড়িত এসব তৃতীয় লিঙ্গদের মানুষের তালিকা করে আইনের আওতায় আনার নির্দেশনা দেন জেলা প্রশাসক। সভায় জানানো হয়, যশোরে ১৫৩ জন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ রয়েছেন। তাদেরকে মনিটারিং এবং জরুরি ভিত্তিতে পুনর্বাসন করার তাগিদ দেন জেলা প্রশাসন। এদিকে, যশোর শহরে আইনশৃঙ্খলা তদারকি করতে পৌরসভার তত্ত্বাবধায়নে শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্থাপন করা হয় সিসি ক্যামেরা। সেগুলো অধিকাংশ অকেজ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। দীর্ঘদিন অকেজ অবস্থায় পড়ে থাকাতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন আইনশৃঙ্খলা কমিটির অনেক সদস্য। জরুরি ভিত্তিতে মেরামত করার নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক। আসন্ন ঈদুল আযহাকে কেন্দ্র করে যশোরের সড়কগুলো নিরাপদ ও ঈদ যাত্রা সুন্দর ও আরামদায়ক করতে সড়ক সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সাথে সড়কের উপরে কোন প্রকার কোরবানির পশুর হাট না বসানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জেলায় বিভিন্ন দুর্ঘটনা প্রবণ এলাকাগুলোতে মনিটারিং ও দুর্ঘটনা রোধে প্রচারণা চালাতে উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। বিভিন্ন দুর্ঘটনাতে উঠতি বয়সী তরুণরা প্রাণ হারাচ্ছে। এসব তরুণদের পর্যপ্ত বয়স না হওয়া পর্যন্ত মোটর সাইকেল না কিনে দেওয়ার জন্য যশোরের অভিভাবকের আহ্বান জানান জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান। গত মে মাসে যশোরে ২৭৮টি মামলা হয়েছে। যা এর আগে এপ্রিলে ৩০৯টি মামলা হয়েছিলো। এছাড়া ১৫৪টি অভিযানে মাদকদ্রব্য উদ্ধার ঘটনায় ৩৯টি মামলা হয়েছে।
সম্প্রতি সময়ের চেয়ে যশোরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেক ভালো বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হুসাইন। তিনি জানান, যশোরে জনপ্রতিনিধি ও জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করে আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখছে পুলিশ। কেউ বিশৃঙ্খলা করলে আইননের আওতায় আনা হচ্ছে। সামনে ঈদুল আযহা কেন্দ্র করে কেউ চাঁদাবাজি করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইননানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সভায় বক্তব্য রাখেন যশোর ৪৯ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আহমেদ হাসান জামিল, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এস এম শাহীন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলন, যশোর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এম ইদ্রিস আলী, মণিরামপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমা খানম, প্রেস ক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, রাইটস যশোরের নির্বাহী বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক, জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মিজানুর রহমান প্রমুখ।