লাবুয়াল হক রিপন
২০২২ সালের ৮ নভেম্বর যশোর জেলা স্বেচ্ছসেবক লীগ নেতা আসাদুজ্জামান আসাদ দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হয়েছিলেন। ইতোমধ্যে এক বছর পর হয়েছে। কিন্তু স্বজনদের দাবি, হত্যার পরিকল্পনাকারী ও অর্থ যোগানদাতাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তদন্ত কর্মকর্তার গাফিলতিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। ফলে ‘অর্থযোগানদাতা’ ইন্দ্রজিত মুখার্জী উপল এই হত্যা মামলাটি ভিন্নখাতে নিতে সব ধরনের অপকৌশল চালিয়ে যাচ্ছেন বলে নিহতের স্বজনরা দাবি করেছেন।
এলাকাবাসি ও ভুক্তভোগী পরিবার জানিয়েছে, বিশ্বজিৎ মুখার্জীর ছেলে ইন্দ্রজিৎ মুখার্জী উপল কাস্টমসে চাকরি করেন। স্থানীয় আধিপত্য নিয়ে তার সাথে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল একই এলাকার স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা আসাদুজ্জামান আসাদের। তাছাড়া ৮০ লাখ টাকার একটি বিষয় নিয়ে আসাদুজ্জামান বাদী হয়ে ইন্দ্রজিৎ মুখার্জীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছিলেন। শুধু তাই নয় মামলাটি শেষ পর্যন্ত হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়ায়।
নিহত আসাদের ভাই সাইদুর রহমান জানান, ওই মামলায় ইন্দ্রজিৎ মুখার্জী দোষী সাব্যস্ত হলে চাকরি চলে যেতে পারে এমন আশঙ্কা করা হয়। সে কারণে আসাদকে খুন করতে নানা ধরণের ফন্দিফিকির করেন ইন্দ্রজিৎ মুখার্জী। এর মধ্যে জেলখানায় আটক থাকা এলাকার শামিম নামে এক সন্ত্রাসীকে ঘটনার দুইদিন আগে জামিনে মুক্ত করে আনেন ইন্দ্রজিৎ। পরে শামিম এলাকার রিপন, শিমুল, আশিক, খাবড়ি হাসান, মাঠ সুমন, লিপন ওরফে বস্তা লিপন, চঞ্চলসহ কয়েকজনের সাথে গোপন বৈঠক করেন। এরপরে তাদের পরিকল্পনা এবং ইন্দ্রজিৎ মুখার্জীর দেয়া অর্থে আসাদকে খুনের জন্য সুযোজ খুঁজতে থাকে।
২০২২ সালের ৮ নভেম্বর সন্ধ্যা ৭টার দিকে বেজপাড়া সাদেক দারোগার মোড়ে ওষুধ কেনার জন্য গিয়েছিলেন আসাদ। ওই সন্ত্রাসীদের পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আসাদকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করা হয়। তাকে প্রথমে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে ২১ নভেম্বর রাত ১১টার দিকে মারা যান।
ঘামলার ঘটনায় আসাদের ভাই সাইদুর রহমান বাদী হয়ে খাবড়ি হাসান, আকাশ, চঞ্চলের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। আসাদ মারা যাওয়ার পরে হত্যাচেষ্টা মামলাটি আদালতে আবেদনের মাধ্যমে হত্যায় রূপান্তরিত করেন তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার এসআই শরীফ আল মামুন। কিন্তু এই মামলাটিতে অর্থযোগানদাতা ও পরিকল্পনাকারী আসামি না হওয়ায় আদালতে ২৫ নভেম্বর আরো একটি মামলা করা হয়। ওই মামলায় ইন্দ্রজিৎ মুখার্জী, বস্তা লিপন ও মাঠ সুমনকে আসামি করা হয়। আদালতে দায়ের করা মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআইকে) তদন্তের আদেশ দেন বিচারক। কিন্তু প্রায় এক বছর হতে চলেছে আজও আলোর মুখ দেখেনি।
থানায় দায়ের করা মামলার চার আসামির মধ্যে তিনজনই জামিনে মুক্ত রয়েছে। শুধুমাত্র খাবড়ি হাসান একটি অস্ত্র মামলায় এখন জেলহাজতে আটক রয়েছে।
কিন্তু মামলাটি ভিন্নখাতে নিতে অর্থযোগানদাতা ইন্দ্রজিৎ মুখার্জী, পরিকল্পনাকারী, বস্তা লিপন ও শামিম নানা ধরণের অপকৌশল অবলম্বন করে আসছে বলে বাদী পক্ষের অভিযোগ রয়েছে।
মামলার বাদী সাইদুর রহমান জানিয়েছেন, আসাদুজ্জামান হত্যার মূল পরিকল্পনাকারীরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। মামলাটি ভিন্নখাতে নিতে আসামি ইন্দ্রজিৎ মুখার্জী নানা অপকৌশল অবলম্বন করছে।
জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শরীফ আলমামুন জানিয়েছেন, এজাহারভুক্ত চার আসামির মধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার ও অন্যরা আদালতে আত্মসমর্পণ করেছিল। এরমধ্যে খাবড়ি হাসান এখনও জেলহাজতে রয়েছে। কিন্তু আদালতে বাদীর দায়ের একই ঘটনায় আরেকটি মামলায় এই চারজনসহ সাতজনকে আসামি করা হয়েছিল। তদন্তকালে ওই তিনজনের সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
মামলার আইনজীবী রুহিন বালুজ জানিয়েছেন, আসাদুজ্জামানকে চিকিৎসা করানো নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন স্বজনরা। ফলে ওই সময় পরিকল্পনাকারী ও অর্থযোগানদাতাদের সনাক্ত করতে পারেনি তারা। পরবর্তীতে সনাক্ত করতে পেরেই আদালতে মামলাটি করা হয়।