রায়হান সিদ্দিক
বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, জাতীয় সঙ্গীত ও মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বলনের মধ্য দিয়ে যশোরে শুরু হয়েছে ১২দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক নাট্য উৎসব। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে সাড়ম্বরে এই উৎসবের উদ্বোধন করা হয়। ‘সংস্কৃতি জাগরুপ প্রাণ, থিয়েটার শিক্ষা অনিবার্ণ’ স্লোগানে থিয়েটার ক্যানভাসের আয়োজনে উৎসবে অংশ নেবে ভারত বাংলাদেশের ১২টি দল।
নাট্য উৎসব উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য বলেন, যশোরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের কথা দেশব্যাপী আলোচিত। দেশের সংস্কৃতি অঙ্গনে যশোরের অতুলনীয় অবদান রয়েছে। এই শহর থেকেই শুরু হয় পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা।
তিনি বলেন, নাটক ও সংস্কৃতি মানুষকে পরিবর্তন করে। বর্তমানে যুবসমাজ ডুবে আছে ভার্চুয়াল জগতে। যার কারণে নতুন প্রতিভা বিকশিত হচ্ছে না। এই প্রজন্মকে রক্ষায় সংস্কৃতি কর্মীদের আরও বেশি লড়াই করতে হবে। কারণ একমাত্র সংস্কৃতি চর্চার মধ্য দিয়েই একটি জাতি ও একটি দেশ সমৃদ্ধ হতে পারে।

যশোর আন্তর্জাতিক নাট্য উৎসব উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক ডা. আবুল কালাম আজাদ লিটুর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার যশোরের উপ পরিচালক হুসাইন শওকত, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট যশোরের সভাপতি সুকুমার দাস, জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান বুলু।
উৎসবের শুরুতে অতিথিদের উত্তরীয় ও ফুলেল শুভেচ্ছা দিয়ে বরণ করা হয়। এরপর দেয়া হয় গুণীজন সম্মাননা। থিয়েটার অনলাইন এক্টিভিস্ট হিসেবে সম্মাননা পান নিমাই সরকার, অভিনেতা মাসুদ সুমন, অভিনেতা এ কে. আজাদ সেতু , নাট্যকার মুস্তাক আহমেদ ও নির্দেশক সাঈদুর রহমান লিপন।
উদ্বোধন পর্ব শেষে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ যার জন্য অধির আগ্রহে বসে ছিলেন দর্শকশ্রোতা । নীরাবতা ভেঙ্গে মঞ্চে যন্ত্রীদলের মিউজিক বাজে। কনসার্ট শেষ হলে গায়েন নৃত্য করতে শুরু করেন। তার বন্দনা-নৃত্য-সংগীতের সমন্বয়ে বন্দনা চলতে থাকে। বন্দনা শেষে গায়েন দর্শকের উদ্দেশ্যে পুঁথিপাঠের মতো করে গল্পের বর্ণনা শুরু করেন।

চন্দ্রদিঘলিয়া রাজ্যের বাদশাহ সোনাফর দেওয়ান। প্রজা পরায়ণ রাজা হওয়ার কারণে তার রাজ্যে প্রজাদের মধ্যে সুখ-শান্তি ছিল বিরাজমান। শুধু শান্তি ছিল না সোনাফর বাদশাহর মনে। কারণ বাদশাহর বেগম বেশ কিছুদিন ধরে কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে আছেন। মরার সময় দ্বিতীয় বিবাহ যেন না করেন সে শর্ত দিয়ে মারা যান। কিন্তু সৎমা গহরচানকে কৌশলে হত্যা করার চেষ্টা করলেও জল্লাদের কৌশলে বনে চিরদিনের জন্য চলে যান। গহরচানকে এক কাঠুরিয়া পেয়ে পুত্রের পরিচয়েই বড় করতে থাকেন। গহরচানের পাশের গ্রামে থাকত তার পাশের অপরূপা সুন্দরী কন্যা জয়তুন বিবি। প্রতিদিন নদীর ঘাটে যাওয়ার সময় জয়তুন বিবিকে অনুসরণ করত গহরচান। এভাবেই তাদের দেখা, একসময় প্রেম তারপর বিয়ে হয় জয়তুন বিবি আর গহরচানের। বিয়ের কিছুদিন পর জয়তুনকে রেখে জঙ্গলে কাঠ কাটতে যায় গহরচান, ঠিক একই সময়ে জঙ্গলে হরিণ শিকারে আসে গহরচানের আসল পিতা সোনাফর বাদশাহ। নতুন করে নাটকীয়তায় বাবার সঙ্গে পরিচয় হয় এবং রাজমহলে নিয়ে যায় তাকে। কিন্তু রাজপ্রাসাদে গিয়ে গহরচান নিজের স্ত্রী জয়তুন বিবির কথা ভুলে যায়। নানা চক্রান্তের মধ্য দিয়ে তাকে যেতে হয়। গহরচান জয়তুনের তালাকনামা পাঠায়। গহরচানের কাছ থেকে দেওয়া এই তালাকনামা জয়তুন মেনে নিতে না পারায় সে আত্মহত্যা করে এভাবেই গল্পটির সমাপ্তি ঘটে।
