অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে ৮২৯টি
বহুতল ভবনে নেই অগ্নি নির্বাপনের সক্ষমতা
অপরিকল্পিত অবকাঠামো-পানি স্বল্পতা বড় অন্তরায়
আবদুল কাদের
গত ২৬ নভেম্বর যশোরের শার্শায় আফিল জুট মিলে আগুন লাগে। বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের কারণে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে বলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তরা জানান। এতে ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছে বলে জানান আফিল গ্রুপের পরিচালক মাহবুব আলম লাভলু।
শুধু আফিল জুট মিল নয়, গত তিন বছরে যশোরে এমন ৮২৯টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ১০ কোটি ৪৬ লাখ ১৪ হাজার ৪৮৭ টাকা।
যশোর ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল ২৬১টি। যার আর্থিক ক্ষতি ছিল ২ কোটি ৬৯ লাখ ৭১ হাজার ৬৮৭ টাকা। ২০২১ সালে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল ২৪৬টি। আর্থিক ক্ষতি ছিল ৫ কোটি ৭৬ লাখ ৩১ হাজার ৮শ টাকা। এবং গেল ২০২২ সালে যশোর জেলায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল ৩২২টি। যাতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছিল ২ কোটি ১১ হাজার টাকা। কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাজার ও ঘনবসতি এলাকায় বেশি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। আবার কিছু বহুতল ভবনেও আগুন লাগছে। তবে এসব বহুতল ভবনে অগ্নি নির্বাপনের সক্ষমতা এখনও গড়ে উঠেনি ফায়ার সার্ভিস অফিসে। কেননা বহুতল ভবনে অগ্নি নির্বাপনের জন্য যে টার্ন টেবল লেডার (টিটিএল) গাড়ি প্রয়োজন, সেটি তাদের নেই। একই সাথে অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ ও পানি স্বল্পতা অগ্নি নির্বাপনে বড় অন্তরায় হয়ে উঠছে বলে মত দিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা। তাদের মতে, গত তিন বছরে জেলায় শতাধিক পুকুর বা জলাশয় ভরাট হয়ে গেছে। এতে পানি স্বল্পতা প্রকট আকার ধারণ করেছে।
যশোর পৌরসভার নগর পরিকল্পনাবিদ সাজিয়া সুলতানা জানান, গত তিন বছরে আড়াই শতাধিক ভবন অনুমোদন দিয়েছেন তারা। ছয়তলা পর্যন্ত ভবন অনুমোদন দিয়ে থাকে পৌরসভা। সেখানে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তবে কি পরিমাণ পুকুর বা জলাশয় ভরাট হচ্ছে তা নির্ণয় করা কঠিন হয়ে পড়ে। কেননা রাতারাতি সবাই পুকুর ভরাট করে ফেলছে। পুকুর ভরাট করতে হলে অবশ্যই পৌরসভার অনুমোদন লাগবে বলে জানান, পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী শরীফ হাসান। কেউ অনুমোদনবিহীন জলাশয় ভরাট করলে তাদের বিরুদ্ধ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।
এ ব্যাপারে যশোর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সহকারী পরিচালক মো. মামুনুর রশীদ জানান, গত তিন বছরে যশোরে ৮২৯টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে ১০ কোটি ৪৬ লাখ ১৪ হাজার ৪৮৭ টাকা। আমরা যেখানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে সেখানে ছুটে যায়। তবে শহরের বড় বাজার, কালেক্টরেট মার্কেটসহ অনেক বহুতল ভবন ঝুঁকিপূর্ণ। অনেক ঘন বসতি এলাকায় আমাদের গাড়ি প্রবেশ করতে পারে না। বিকল্পভাবে যেতে হয়, তখন ক্ষতি বেশি হয়ে থাকে। তিনি জানান, আগুন নেভানোর জন্য পানি প্রয়োজন হয়ে থাকে। আমাদের গাড়িতে যে পরিমাণ পানি থাকে তা দিয়ে চেষ্টা করা হয়। তবে গাড়ির পানি ফুরিয়ে গেলে পানি পাওয়া যায় না। গত তিন বছরে জেলায় শতাধিক পুকুর বা জলাশয় ভরাট হয়ে গেছে বলে জেনেছি। এটা আমাদের জন্য অশনি সংকেত। আবার বহুতল ভবনের মালিকরা অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা রাখে না। সেটাও পীড়াদায়ক।
এ ব্যাপারে যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ছোলজার রহমান জানান, যশোর ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা রয়েছে চারতলা পর্যন্ত আগুন নেভানোর। কিন্তু শহরে ৮-১৪ তলা ভবন নির্মাণ হচ্ছে। আবার সরকারি বেসরকারি পুকুর জলাশয় ভরাট হয়ে যাচ্ছে। আবর্জনায় ভরাট হচ্ছে নদীগুলো। সেখান থেকে পানি পাওয়া যাবে না। পৌরসভাগুলো যেসব বাড়ি অনুমোদন দিচ্ছে সেখানে চওড়া রাস্তা রাখছে না। ফলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে ফায়ার সার্ভিসের কিছু করার থাকছে না। কারণ তারা গাড়ি নিয়ে সেখানে যেতে পারছে না। এতেই প্রতিবছর অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতির হার বাড়ছে। অগ্নিকাণ্ড থেকে রক্ষা পেতে পরিকল্পিতভাবে নগরায়ন গড়ে তুলতে হবে।