-
বিষাক্ত সাপ ‘রাসেলস ভাইপারে’ কামড় দেওয়ার কোন তথ্য নেই
-
দুই-একটি সাপ মারা হলেও ‘রাসেলস ভাইপার’ কিনা অজানা
-
যশোর সদর হাসপাতালে আরো ২শ অ্যান্টিভেনম চেয়ে চিঠি
শাহারুল ইসলাম ফারদিন
সারা দেশের মতো বিষাক্ত সাপ ‘রাসেলস ভাইপার’ নিয়ে যশোরেও তোলপাড় চলছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত যশোরাঞ্চলে এ সাপ কেউ দেখেছেন এমন কোন সঠিক তথ্য কারো কাছে নেই। বিভিন্ন স্থানে দুই-একটি সাপ পিটিয়ে মারা হলেও সেটা ‘রাসেলস ভাইপার’ কিনা সেটাও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আবার যারা আক্রান্ত হয়েছেন তারাও জানে না কোন সাপে তাদের কামড় দিয়েছে।
যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তথ্য মতে, চলতি বছরের ৬ মাসে (২৩ জুন পর্যন্ত) হাসপাতালে সাপে কাটা রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ৯৫ জন। এরমধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২ জনের। আর জুন মাসের ২৩ তারিখ পর্যন্ত সাপের কামড়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ৩৬ জন। গত একসপ্তাহে এ সংখ্যা ১৭ জন।
সোমবার সকালে সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডে ২জন ও মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে ৭ জন সাপে কাটা রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। এরমধ্যে ৭ জনই উপজেলা থেকে এসে ভর্তি হয়েছেন। এছাড়াও হাসপাতালের মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে চলতি মাসের শুরু থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত ১৭ জন সাপে কাটা রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর আগে মে মাসে ৬ জন ও এপ্রিল মাসে ৮জন রোগী ভর্তি হয়। এরমধ্যে কবিতা নামে এক নারীর মৃত্যু হয়। অন্যরা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। এদিকে পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডে জুনের ১ থেকে ২৩ তারিখ পর্যন্ত মোট ১৯ জন ভর্তি হয়ে চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন। সকলেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. সেলিম রেজা বলেন, বিষধর সাপ কামড়ালে তিনভাবে বিষ মানুষের শরীরে প্রভাব ফেলে। হেমোটক্সিন হয় বা রক্তকে দূষিত করে, মায়োটক্সিন বা মাংসপেশীকে অকার্যকর করে দেয় এবং নিউরোটক্সিন অর্থাৎ মস্তিষ্কের কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয়। এসব ক্ষেত্রে বিষধর সাপ কামড়ালে রোগীকে বাঁচাতে হলে শরীরে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ করতে হয়। কিন্তু উপজেলা পর্যায়ে সব হাসপাতালে অ্যান্টিভেনম পাওয়া যায় না। তাই রোগীদের উপজেলা ঘুরে জেলা শহরের হাসপাতাল নিয়ে আসতে হয়। আবার অ্যান্টিভেনম সহজলভ্য না হওয়ায় গ্রামাঞ্চলের বড় অংশ রোগীই ওঝা বা কবিরাজের কাছে চিকিৎসা নিতে চলে যান। ততক্ষণে অনেক রোগী স্ট্রোক বা পক্ষঘাতে আক্রান্ত হয়ে পড়ে।
নাম না প্রকাশে অনিচ্ছুক যশোর জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের এক চিকিৎসক জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অনেক সময় অ্যান্টিভেনম থাকলেও সেখানকার চিকিৎসকেরা জটিলতার ভয়ে তা দেন না। তার মতে, সাপে কাটা রোগীকে অ্যান্টিভেনম প্রয়োগের পর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। যেমন অনেকের তীব্র শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। এমন রোগীকে সামাল দিতে আইসিইউ’র দরকার হয়। উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালে তো সেই সুযোগ নেই, তাই সাপে কাটা রোগীকে অন্য হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) আব্দুস সামাদ জানান, তাদের এ হাসপাতালে চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ৯৫ জন সাপাকাটা রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এম মধ্যে এপ্রিল মাসে কবিতা খাতুন (২৪) ও মে মাসে রনি (১৪) নামে এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। তিনি আরো জানান, হাসপাতালে অ্যান্টিভেনম ভ্যাকসিনের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশীদ জানান, সাপে কাটলে অ্যান্টিভেনম ভ্যাকসিন দেয়া হয়। আমাদের হাসপাতালে বর্তমানে ৯০টি অ্যান্টিভেনম মজুত রয়েছে। এর পাশাপাশি আরো ২শ চাহিদার কথা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। যা আজ মঙ্গলবার হাসপাতালে চলে আসবে বলে আশা করছি। তিনি আরো বলেন, যেকোনো বিষধর সাপে কাটলে কোনো ওঝার কাছে গিয়ে সময় নষ্ট না করে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে। আমরা তার সিমটম দেখে, সে অনুযায়ী ভ্যাকসিন প্রদান করবো।
এদিকে সদ্য যোগদানকারী জেলা সিভিল সার্জন ডা. মাহমুদুল হাসান বলেন, অভয়নগর ও বাঘারপাড়া দুইটি উপজেলা ব্যতীত সকল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পর্যাপ্ত সাপে কাটা অ্যান্টিভেনম ভ্যাকসিন মজুত আছে। এ দুটি উপজেলাতে প্রয়োজনমতো অন্য উপজেলা ও যশোর জেনারেল হাসপাতাল থেকে সরবরাহ করা হবে। বর্তমানে যশোর জেনারেল হাসপাতালসহ উপজেলায় ১৫০টি অ্যান্টিভেনম ভ্যাকসিন মজুত আছে। এর মধ্যে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ৯০টি ও ৬ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৬০টি মজুত রয়েছে। এছাড়াও আগামী দু-একদিনের মধ্যে চাহিদানুযায়ী পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন চলে আসবে। তিনি আরো বলেন, রাসেলস ভাইপার নিয়ে আতঙ্ক নয়, সচেতনতা বাড়াতে হবে। লম্বা ঘাস, ঝোপঝাড়, কৃষি এলাকায় হাঁটার সময় সতর্ক থাকতে হবে। গর্তে হাত-পা ঢুকানো যাবে না। কাজ করার সময় বুট এবং লম্বা প্যান্ট পরতে হবে, রাতে চলাচলের সময় টর্চ লাইট ব্যবহার করতে হবে, বাড়ির চারপাশ পরিস্কার ও আবর্জনামুক্ত রাখতে হবে। নারীদের ক্ষেত্রে বলেন, জ্বালানি লাকড়ি, খড় সরানোর সময় বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
