তিন বছরে প্রায় ১০০ কেজি উদ্ধার
আবদুল কাদের: গত ১৩ জানুয়ারি যশোরের শার্শা, শ্যামলাগাছী থেকে এক কেজি ১৬৫ গ্রাম ওজনের ১০ টি স্বর্ণের বারসহ ইসমাইল হোসেন (৩৮), নামে একজনকে আটক করে ৪৯ বিজিবি। সে শার্শার নামাজগ্রামের বাসিন্দা। ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে ৮ কোটি টাকা মূল্যের ১০৪টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে ২০ ডিসেম্বর বেনাপোল পোর্ট থানার উত্তর কাগজপুকুর গ্রামের ইমাদুল হোসেনকে (২৬) ২০টি স্বর্ণের বারসহ আটক করে বিজিবি। শুধু ওই দুই ঘটনা নয়, গত তিন বছরে যশোর বিজিবি ও বেনাপোল কাস্টমস সদস্যরা প্রায় একশ কেজি সোনা উদ্ধার করেছে। এর মধ্যে বিজিবি’র হাতে আটক হয়েছে ৭৭ কেজি সোনা।
এতে প্রতিয়মান হয় জেলাটি সোনা চোরাচলানের ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। এখান থেকে প্রতিনিয়িত ভারতে পাচার হচ্ছে সোনা। সেখানে দাম বেশি পাওয়ায় কোনভাবে ঠেকানো যাচ্ছেনা চোরাচালান। সোনা চোরাচালান ঠেকাতে প্রশাসনের তৎপরতা দেখা যায়না। যেটুকু উদ্ধার হয় তা বিজিবি সদস্যরা করে থাকেন। আবার তবে বৈধ সোনা ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিজিবি বা কাস্টমের হাতে যে সোনা উদ্ধার হয় তার ২০ গুণ সোনা পাচার হয়ে থাকে।
সোনা চোরাচালানে মূল হোতারা থাকে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। তারা টাকার বিনিময়ে লোক দিয়ে পাচার করেন। শার্শার শিকারপুর, ভবেরবেড়, দৌলতপুর বেশিরভাগ মানুষ সোনা চোরাচালানের সাথে সম্পৃক্ত বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া মনোহরপুর, ছুটিপুর, কাশিপুর, শালকোণা, পাকশিয়া এলাকা দিয়ে পাচার হচ্ছে সোনা।
বাংলাদেশ জুয়েলারি ব্যবসায়ী সমিতি যশোরের সভাপতি রকিবুল ইসলাম চৌধুরী সঞ্জয় জানান, সোনা চোলানের সাথে জড়িত মূল হোতারা আটক হয়না। তারা টাকার বিনিময়ে লোক দিয়ে এ কাজ করে থাকে। বিজিবির কাছে যে পরিমাণ সোনা আটক হয়, তার চেয়ে বেশি সোনা পাচারে হয়ে থাকে। এদের কারণে আমাদের সমিতির সদস্যদের বদনাম হয়। আবার ব্যবসায়ীকভাবেও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি। তিনি বলেন, খুব শিগগিরই বাংলাদেশে সোনার বার উৎপাদন হবে। তখন মেডইন বাংলাদেশ লেখা থাকবে বারের গায়ে।
যশোর বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, গত তিন বছরে তারা ৭৭ কেজি সোনা উদ্ধার করেছে। যার মূল্য প্রায় ৪৮ কোটি টাকা। গেল ২০২১ সালে উদ্ধার হয়েছে ১২ কেজির বেশি সোনা। যশোর ব্যাটালিয়নের (৪৯ বিজিবি) অধিনায়ক শাহেদ মিনহাজ ছিদ্দিকী জানান, সোনা চোরাচালানসহ বিভিন্ন চোরাচালান রোধে আমাদের বিজিবি সদস্য কাজ করছেন। বিশেষ করে সোনা চোরাচালানের সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দিতে আমাদের গোয়েন্দা টিম কাজ করছে। সোনা চোরাচালানে যারাই জড়িত থাকুক না কেন তাদেরকে ছাড় দেয়া হবেনা।
বেনাপোল কাস্টমের যুগ্ম কমিশনার আবদুর রশিদ মিয়া জানান, চেকপোস্ট দিয়ে বৈধভাবে তেমন সোনা চোরাচালান হয়না। কিছু সোনা উদ্ধার হয়েছে। আমাদের সদস্যরা সোনা চোরাচালানরোধে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাংগীর আলম জানান, সোনা মূলত সীমান্ত দিয়ে পাচার করা হয়ে থাকে। যে কারণে বিজিবির কাছে বেশি ধরা পড়ে। সোনা পাচারকারীদের আটকে পুলিশ সতর্ক রয়েছে।