৬টি ইজারা নিতে চায় ভারতীয় দুই প্রতিষ্ঠান
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক: যশোর-খুলনার বন্ধ হয়ে যাওয়া সরকারি সাতটি জুট মিল ইজারার মাধ্যমে সচলের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আর বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি) বন্ধ হয়ে যাওয়া ১৭টি জুট মিল একইভাবে চালু করা হবে। ইতিমধ্যে দুটি চালুও হয়েছে। আর চালু হওয়ার পথে আরো দুটি। বাকি ১৩টি মিল ইজারায় নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে ১৮টি দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে দুটি ভারতীয় প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
আগ্রহী দুই ভারতীয় প্রতিষ্ঠান হলো প্যাসিফিক জুট লিমিটেড ও আরেকটি মোহন জুট লিমিটেড। এরা যশোর-খুলনার ছয়টি ইজারা নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এগুলো হচ্ছে- যশোর জুট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও কার্পেটিং জুট মিলস লিমিটেড, খুলনার দৌলতপুর জুট মিলস লিমিটেড, খালিশপুর জুট মিলস লিমিটেড, প্লাটিনাম জুবিলী জুট মিলস এবং স্টার জুট মিলস লিমিটেড। আর খুলনার ইস্টার্ন জুট মিলস লিমিটেড ইজারা নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে দুবাইভিত্তিক এশিয়াটিক ট্রেডিং এলএলসিও। প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয় কলকাতায়ও রয়েছে।
এছাড়া হংকং ও অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক দুটি প্রতিষ্ঠানও বাংলাদেশি অংশীদারের সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগের ভিত্তিতে কয়েকটি কারখানা ইজারায় নেয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে।
২০২০ সালের ৩০ জুন গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের আওতায় দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ২৫টি পাটকল বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর বেসরকারি খাতে ইজারা দেয়ার মাধ্যমে ১৭টি চালুর ঘোষণাও দেয়া হয়। এরই মধ্যে দুটি জুট মিল ব্যক্তি খাতের উদ্যোক্তাদের হাতে ইজারা দেয়া হয়েছে।
বিজেএমসির মহাব্যবস্থাপক নাসিমুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ইজারা দেয়ার ঘোষণার পর এরই মধ্যে দুটি মিল নিয়েছে ব্যক্তি খাতের দুই প্রতিষ্ঠান। সেগুলোয় উৎপাদনও শুরু হয়েছে। এছাড়া আরো দুটি মিল ক্রিসেন্ট ও হাফিজ জুট মিল ইজারা দেয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। জামানত জমা পড়লে এ দুটি মিলও উৎপাদনের বিষয়ে অগ্রসর হতে পারবে। বাকি ১৩টি মিলের বিষয়ে আগ্রহপত্র চাওয়া হলে ১৮টি প্রতিষ্ঠান সাড়া দিয়েছে। এখন এ প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে আবার আর্থিক ও কারিগরি প্রস্তাব চাওয়া হয়েছে। যা আগামী ২৫ মের মধ্যে জমা দিতে হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মোট পাটকল ইউনিটের সংখ্যা প্রায় ৩০০। এর মধ্যে ব্যক্তি বা বেসরকারি খাতে বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজেএসএ) ও বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএমএ) সদস্য সক্রিয় পাটকল ইউনিট আছে প্রায় ২৪০টি।
গোটা বিশ্বেই এখন পাটজাত পণ্যের চাহিদায় ভাটা পড়েছে। এর ধারাবাহিকতায় দেশের পাট খাতেও এখন মন্দাবস্থা বিরাজ করছে বলে জানিয়েছেন ব্যক্তি খাতের পাটকল উদ্যোক্তারা। তাদের ভাষ্যমতে, বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানেরই আর্থিক সক্ষমতা দুর্বল। অনেকেই উৎপাদন সক্ষমতা কমিয়ে এনেছে। চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এখন পরিস্থিতি আরো কঠিন করে তুলেছে।
বাংলাদেশে সরকারি মিল ইজারায় পরিচালনার পূর্বাভিজ্ঞতা খুব একটা ভালো না জানিয়ে বেসরকারি উদ্যোক্তারা বলছেন, এসব মিলের অনেক জমি। স্থাপনাও অনেক বড়। কিন্তু উৎপাদনশীলতা অনেক কম। যন্ত্রপাতিও অনেক পুরনো। শ্রমিক যারা আছেন, তারাও অনেক পুরনো। তাদের দিয়ে নতুন আধুনিক মেশিন পরিচালনাও কষ্টকর হতে পারে। ব্যক্তি খাতের উদ্যোক্তারা নিজ ইচ্ছা ও পরিকল্পনা অনুযায়ী মিল পরিচালনা করতে পারবেন না। অনেক শর্ত পূরণ করে এসব মিল পরিচালনা করতে হবে। এছাড়া উৎপাদন ক্ষেত্রে প্রডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করতে চাইলেও নানা জবাবদিহিতার বিষয় রয়েছে।
সরকারি পাটকলগুলো বন্ধ ঘোষণার পর শুরুতে প্রায় ৮০ হাজার স্থায়ী ও অস্থায়ী শ্রমিকের পাওনা পরিশোধে কার্যক্রম শুরু করে বিজেএমসি। প্রায় ২৫ হাজার স্থায়ী শ্রমিকের ৯০ শতাংশ পাওনা পরিশোধও করে দেয়া হয়েছে। এরপর বিজেএমসির বন্ধ মিলগুলো বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ইজারার ভিত্তিতে পুনরায় চালুর বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়।
বিজেএমসির ইজারা নীতিমালা সূত্রে জানা গিয়েছে, সারা দেশের বন্ধ হয়ে যাওয়া ২৫টি পাটকলের মোট জমির পরিমাণ এক হাজার একরেরও বেশি। মিলগুলোর শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের আবাসন, বাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ অব্যবহূত অনেক জমি ছিল। বেসরকারি মিলমালিকদের বিপুল এ জমির প্রয়োজন হবে না। তাদের শুধু চাহিদামতো জমি ও ভবন ছেড়ে দেয়া হবে। পাশাপাশি মিলের অফিস ভবনও ইজারাগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানকে ছেড়ে দেয়া হবে। বিজেএমসি মিলের অভ্যন্তরে নতুন স্থাপনা নির্মাণের মাধ্যমে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য তদারককারী অফিস স্থানান্তর করবে।
এ প্রসঙ্গে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুর রউফ গণমাধ্যকে বলেন, পাট খাতকে এগিয়ে নিতেই সরকারি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনায় বেসরকারি খাতে ইজারা দেয়া হয়েছে। এখানে শুধু বেসরকারি খাতের পুরনো উদ্যোক্তারা এলেই যে খাতটির উন্নয়ন হবে, তা নয়। আমরা বেসরকারি খাতের নতুন-পুরনো সব ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা নিজেরাই আরো বৃহৎ কিছু করতে চায়। নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান ইজারা নেয়ার মাধ্যমে ভালো করছে। তাছাড়া পুরনো উদ্যোক্তারা চাইলে নিজেরাই জমি কিনে নতুন কারখানা করতে পারেন। এজন্য পুরনোরা সবাই এগিয়ে না এলেও বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে জয়েন্ট ভেঞ্চারে যুক্ত রয়েছেন। ইজারা নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর নয় মাসের মধ্যে উৎপাদনে যাওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও দুই মাসের মধ্যেই উৎপাদনে যেতে পেরেছে। এটা দেশের পাট খাতের জন্য খুবই ইতিবাচক। পুরনোদের পাশাপাশি নতুনদের আগমনে দেশের পাট খাত আবারো নতুনভাবে সম্প্রসারিত হবে।