নিজস্ব প্রতিবেদক:
যশোর চেম্বার অব কমার্সের ভোট ফের স্থগিত করেছে আদালত। বুধবার এক ব্যবসায়ীর করা মামলার প্রেক্ষিতে বিচারক এ আদেশ দেন। মামলাটি করেছেন মেসার্স পারভেজ ট্রেডার্সের মালিক মেহেদী হাসান (ভোটার নম্বর-৬৪২)। এ মামলায় যশোর চেম্বার অব কমার্সের প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক), নির্বাচন বোর্ডের আহ্বায়ক, (নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট) দুই সদস্য,
এবং আলম ট্রেডার্সের মালিক মো. আলম, সরোয়ার ট্রেডার্সের মালিক গোলাম সরোয়ার, রহিম স্টোরের মালিক আব্দুর রহিম ও যশোর কর অঞ্চলের উপকর কমিশনারকে বিবাদী করা হয়েছে। সিনিয়র সহকারী জজ সুজাতা আমিন স্থগিত আদেশ ও বিবাদীদের এক কার্যদিবসের মধ্যে আদালতে হাজির হয়ে অভিযোগের বিষয়ে শুনানিতে অংশগ্রহণের নির্দেশ দেন।
বাদীর অভিযোগ, আগামী ৭ জানুয়ারি যশোর চেম্বার অব কমার্সের নির্বাচনের নির্ধারিত দিন। ইতিমধ্যে প্রকাশিত ভোটার তালিকায় ৩শ’র অধিক ভোটারের হাল নাগাদ কোনো আয়কর সনদ নেই। এবং তারা আয়কর সনদের মূল কপি দাখিল না করে বেআইনীভাবে ভোটার হিসেবে অন্তর্ভূক্ত হয়েছেন।
এসব অভিযোগ এনে নির্বাচন কমিশনার বরাবর অভিযোগ দিলে তা গ্রহণ না করায় আদালতে মামলা করেন।
উল্লেখ্য, দীর্ঘ আট বছর পর আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো এ নির্বাচন। ইতিমধ্যে সকল প্রস্ততি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনে দুইটি প্যানেলে অংশ নিচ্ছে। যার একটি প্যানেলের নাম ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদ। এই প্যানেলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খান।
অপর প্যানেলের নাম দেয়া হয়েছে ব্যবসায়ী অধিকার পরিষদ। প্যানেলটির নেতৃত্বে রয়েছেন হুমায়ুন কবির কবু। মোট ১৮টি পদে ৩৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রার্থীরা গত এক মাস ধরে প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন।
এ ব্যাপারে যশোর চেম্বার অব কমার্সের প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রফিকুল হাসান জানান, আমি মৌখিকভাবে জেনেছি নির্বাচন স্থগিত করেছেন আদালত। তবে আমরা কোন আদেশ এখনও পায়নি। অফিস আদেশ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নির্বাচন বোর্ড কমিটির আহবায়ক ও সিনিয়র সহকারী কমিশনার কেএম আবু নওশাদ স্বাক্ষরিত তফসিল অনুযায়ী গত ২৬ নভেম্বর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়।
২০১১ সালের ১৬ এপ্রিল চেম্বারটির সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে জেলা বিএনপির তৎকালীন যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খানের নেতৃত্বাধীন প্যানেল বিজয়ী হন। ২০১২ সালের ৩ মার্চ মিজানুর রহমান খানের নেতৃত্বাধীন কমিটি দায়িত্ব বুঝে পান। ২০১৪ সালের ২৩ এপ্রিল নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। তফসিল অনুযায়ী ওই বছরের ১২ জুলাই ভোট গ্রহণ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই নির্বাচন ভেস্তে যায়। ২০১৪ সালের ১ ডিসেম্বর চেম্বারে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। সেই থেকে প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব পালন করছে প্রশাসক।
ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের প্যানেল লিডার যশোর চেম্বারের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খান জানান, দীর্ঘ ৮ বছর যশোর চেম্বারের ভোট হতে দেয়া হয়না। নানা অজুহাতে মামলা করে ভোট স্থগিত রাখা হয়। প্রার্থীদের নামে মিথ্যা মামলা করে জেলে পাঠানো হয়েছে। বারবার নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করার পর ভোট গ্রহণের আগে এভাবে স্থগিত হলে চেম্বারের ভোটে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের আর আগ্রহ থাকবেনা। কারা এসব ষড়যন্ত্র করছে তা ব্যবসায়ীরা ভালো করেই জানেন।
তিনি বলেন, নির্বাচনে খসড়া ভোটার তালিকায় কোন আপত্তি পায়নি নির্বাচন পরিচালনা বোর্ড। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আইনে রয়েছে কোন সদস্য নির্বাচন নিয়ে আদালতে মামলা করতে পারবেনা। তাদের আপত্তি থাকলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের গঠিত ট্রাইব্যুনালে আপত্তি জানাতে হবে।
এ ব্যাপারে যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাড. ইসহক জানান, যশোর চেম্বার অব কমার্সের ভোট স্থগিত করা হলেও আজ বৃহস্পতিবার নিস্পত্তির কথা বলা হয়েছে। যেহেতু ৭ জানুয়ারি ভোটগ্রহণের দিন রয়েছে। আশা করছি আদালত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা আমলে নেবেন।