নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন মহাবিদ্যালয় (এমএম কলেজ) আসাদ হলে ভাংচুরের অভিযোগ উঠেছে। বুধবার দুপুর একটার দিকে ঘটনাটি ঘটে। ছাত্রাবাসের ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ‘কলেজ ক্যাম্পাসে সভাপতি-সম্পাদকের কর্মসূচিতে না যাওয়ায় জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির নেতৃত্বে ছাত্রাবাসের বেশ কয়েকটি কক্ষ ভাংচুর করা হয়েছে।
এদিকে, ছাত্রাবাসে হামলা ভাংচুরের প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে গতকাল বিকালে বিক্ষোভ মিছিল করেছে কলেজ ছাত্রলীগের একাংশের নেতৃবৃন্দ। এসময় তারা এই ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, গতকাল দুপুরে কলেজ ক্যাম্পাসে প্রথম আলো পত্রিকায় রাষ্ট্র বিরোধী ও হলুদ সাংবাদিকতার প্রতিবাদে মানববন্ধনের আয়োজন করে ছাত্রলীগ। সেই কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সালাউদ্দিন কবির পিয়াস। তবে এই মানববন্ধনে আসাদ হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উপস্থিত না হওয়াতে তিনি ছাত্রাবাসে ছাত্রদের ডাকতে যান। ছাত্রাবাসে যেয়ে কাউকে না পেয়ে তিনি ছাত্রাবাসের ২০১, ২০২, ২০৩, ও ২০৭ নাম্বার কক্ষ ভাংচুর করেন। এই ভাংচুরে সভাপতি ছাড়াও বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন বলে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের দাবি। তবে এই ভাংচুরে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানজীব নওশাদ পল্লব সরাসরি অংশ না নিলেও হলের প্রধান ফটকের বাইরে উপস্থিত ছিলেন। ছাত্রাবাসের বাসিন্দা জুবায়ের হোসেন রনি বলেন, ‘জেলা ছাত্রলীগের সভাপতিসহ কয়েকজন অছাত্র মিলে ছাত্রাবাসে ভাংচুর চালায়। ছাত্রলীগের সভাপতির এমন কর্মকান্ডে আমরা সবাই হতভাগ।

ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলা আওয়ামী লীগ দুটি গ্রুপে বিভক্ত। যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন দুই শীর্য জনপ্রতিনিধি। আওয়ামী লীগের এই শীর্ষ দুই নেতার বিভক্তির কারণে সংগঠনের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগও দীর্ঘদিন দুটি গ্রুপে বিভক্ত। এই বিভক্তের কারণে এমএম কলেজ ছাত্রলীগেও দুটি গ্রুপ রয়েছে। ২০১৫ সালের ২১ এপ্রিল ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে শহীদ আসাদ হল দখলে নেন একটি গ্রুপের ছাত্রলীগ নেতারা। যার নেতৃত্বে ছিলেন কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমান। তবে সম্প্রতি এক জনপ্রতিনিধির অনুসারীরা দখলে নিয়েছেন। যার নেতৃত্বে কলেজ ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক নুর ইসলাম বর্তমানে হলটি দখলে নেয়। সর্বশেষ গত ২ এপ্রিল কলেজে বহিরাগত তরুণদের নিয়ে ছাত্রীদের উত্ত্যক্তের অভিযোগ ওঠা শাখা ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক নূর ইসলামকে পদ থেকে অব্যাহতি দেয় জেলা ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের অব্যাহতি দিলেও নুর ইসলাম এখনো আসাদ হল নিয়ন্ত্রণ করছেন। এমনকি জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদকের কর্মসূচিতে আসাদ হলের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অংশ না নিতে নুর ইসলামের নির্দেশও রয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় বুধবারের কর্মসূচিতে আসাদ হলের নেতাকর্মীরা সভাপতির কর্মসূচিতে উপস্থিত না হওয়াতে ক্ষুদ্ধ হয়ে ছাত্রাবাসে ঢুকে ভাংচুর করেছে বলে দাবি ভুক্তভোগীদের। তবে এসব অভিযোগ মিথ্যা দাবি করেছেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সালাউদ্দিন কবির পিয়াস। তিনি বলেন, ‘নুর ইসলাম বখাটে, ওর তো ছাত্রত্ব নেই। ও নিজে ছাত্রাবাস ভাংচুর করে এর দায়ভার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদককে দিচ্ছে। তাছাড়া কলেজে ক্যাম্পাসে তো সিসি ক্যামেরা রয়েছে; সেগুলো যাচাই-বাছাই করলেই দেখা যাবে কে ছাত্রাবাস ভাংচুর করেছে।
এদিকে, ছাত্রবাসে ভাংচুরের ঘটনার পরে কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. আবু বক্কর সিদ্দিকীর নেতৃত্বে কলেজের শিক্ষক প্রতিনিধিরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথাও বলেছেন। উপাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. আবু বক্কর সিদ্দিকী বলেন, ‘কলেজ প্রশাসন বিষয়টি তদন্ত করবে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নিবে। আর যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি জানা নেই। এমনকি কলেজ প্রশাসনও আমাদের অবগত করেনি। তবে অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
