নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোর জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। কমিটির সদস্য জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আসাদুজামান মিঠু রোববারের সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গত জুন মাসে জেলার বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত এবং তা প্রতিকারে ৪৪টি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিলো। সেগুলো প্রতিকারে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু কোন সিদ্ধান্তই বাস্তবায়িত হয়নি। রোববার সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় তিনি এসব বিষয়ে কথা বলেন। বলেন, শহরের যানজট ও জলাবদ্ধতা নিরসনে পৌর কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেছিলো। কিন্তু বাস্তবে যানজট বা জলাবদ্ধতা নিরসনে পৌরসভার কোন উদ্যোগ চোখে পড়েনি।
সভায় যানজট নিয়ে কথা বলেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলনও। তিনি বলেন, শহরের যানজট নিরসনে পৌরকর্তৃপক্ষ ব্যর্থ। কয়েকদফা সিদ্ধান্তের পরও পৌরসভা শহরে জোরালো উচ্ছেদ অভিযান চালাতে পারেনি। শহরের প্রাণকেন্দ্র দড়াটানা, হাসপাতাল গেটে সবসময় যানজট লেগে থাকে। এবিষয়ে পৌর মেয়রকে বিশেষ নজর দেয়ার আহ্বান জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, জেলায় কিশোরগ্যাং মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। তাদের বিরুদ্ধে জেলা পুলিশের আরও কঠোর অবস্থানে যেতে হবে। অনলাইনে ধারালো চাকু ছুরি সহজলভ্যতা বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
প্রসঙ্গত, গত সভায় অন্যতম সিদ্ধান্ত ছিলো নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখার লক্ষ্যে নিয়মিত বাজার মনিটর। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ অভিযান পরিচালনা করা। ডেঙ্গু প্রবণ উপজেলা সমূহকে পৌরসভার সমন্বয়ে এডিস মশার লার্ভা ধ্বংস ও অন্যান্য অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। মাদক বিরোধী অভিযান বৃদ্ধি, বাল্যবিবাহ পড়ানো কাজী ও সংশ্লিষ্ট সকলকে শাস্তির আওতায় আনা, সরকারি রাস্তায় নির্মাণ সামগ্রী রেখে যাতে কেউ বাসাবাড়ির কাজ না করতে পারে সে বিষয়ে তদারকি, কিশোর গ্যাং প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতা বাড়ানো, শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানের ফুটপাত দখলমুক্ত করা।
আইনশৃঙ্খলা সভায় মাসিক অপরাধ চিত্রের প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত মে মাসের তুলনায় জুন মাসে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে। মে মাসে জেলার ৯টি থানায় বিভিন্ন অপরাধের কারণে ২৫০ টি মামলা রেকর্ড হয়েছে। যা জুনমাসে বেড়ে দাড়িয়েছে ২৯৩ টি। এরমধ্যে মাদকদ্রব্য আইনে ১০৭ ও ৪টি হত্যা মামলা রেকর্ড হয়েছে। এছাড়াও জুন মাসে জেলার ৮ উপজেলায় গ্রাম আদালতে ১০৫টি মামলা হয়েছে।
এবিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন বলেন, জেলার আইংশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে জেলা পুলিশ নির্ঘুম কাজ করছে। বিশেষ করে কিশোর গ্যাং প্রতিরোধে জোরালো উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, যে কোন অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পরপরই দ্রুততার সাথে আসামিদের আটক করা হচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা সভায় জেলার বিভিন্ন স্থানে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার তথ্য তুলে ধরেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কমলেশ মজুমদার। তিনি জানান, জুন মাসে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে মোট জরিমানা আদায় করা হয়েছে ৭ লাখ ৫৬ হাজার ১০০ টাকা। এরমধ্যে বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ অনুযায়ী আইনভঙ্গ করায় ৪ জন আসামির কাছ থেকে ৪ লাখ টাকা, সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ ভঙ্গ করায় ৯০ জন আসামির কাছ থেকে ২ লাখ ১ হাজার ৮০০ টাকা, বিএসটিআই আইন ২০১৮ ভঙ্গ করায় ৬০ হাজার ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০২ না মানায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এসএম শাহীনের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন, পৌর মেয়র হায়দার গণী খান পলাশ, র্যাব-৬ যশোরের কোম্পানি কমান্ডার সাকিব হোসেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক আসলাম হোসেন প্রমুখ।