নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রায় ৬ বছর পর আজ সোমবার খুলনায় আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন ২১টি প্রকল্পের। পাশাপাশি সার্কিট হাউজ মাঠে দলীয় জনসভায় বক্তব্য রাখবেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে বর্ণিল সাজে খুলনা নগরী।
এদিকে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ সফরকে কেন্দ্র করে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী জেলা যশোর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। বৃহৎ এই জেলা থেকে কমপক্ষে এক লক্ষাধিক মানুষ যাবেন প্রধানমন্ত্রীর জনসভায়। জনসভায় যোগ দিতে প্রচার-প্রচারণার পাশাপাশি নেতাকর্মীরাকে কিভাবে খুলনা যাবেন-তা নিয়ে ইতোমধ্যেই গ্রহণ করা হয়েছে সবরকম প্রস্তুতি। এজন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে যশোর থেকে বিশেষসহ ১১টি ট্রেন, ৬০০টি বাস, কয়েকশ মাইক্রোবাস। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার এমপি।
নৌকার আদলেই খুলনা সার্কিট হাউস মাঠে তৈরি করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর জনসভা মঞ্চ। এই মঞ্চেই প্রধান অতিথির ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জনসভায় খুলনা বিভাগের ১০ জেলার নেতাকর্মীরা অংশ নিবেন। নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর দক্ষিণ অঞ্চল সফর বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। নেতাকর্মীরা বলেছেন, ভৌগোলিক অবস্থান থেকে খুলনা থেকে যশোরের যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ। ফলে প্রধানমন্ত্রীর এই জনসমাবেশে যশোর থেকে নেতাকর্মীদের সমাগম বেশি করার নির্দেশনাও রয়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের। ফলে চলতি মাসের প্রথম থেকেই সরব যশোর শহর, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে নেতাকর্মীরা। চালানা হয়েছে প্রচার-প্রচারণাও।
যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার এমপি বলেন, শহর থেকে শুরু করে তৃণমূলের কর্মী ও সমর্থকরা খুবই উচ্ছ্বসিত। যশোরের ৮ উপজেলা থেকে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় লক্ষাধিক বেশি কর্মী ও সমর্থক অংশ নেবেন। তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর এ সফরে উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে এবং দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে বিশেষ পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দেবেন। ইতোমধ্যে জেলা, উপজেলা, পৌর এলাকা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের সব নেতাকে নিয়ে বিভিন্নসময় কর্মীসভা করা হয়েছে।
জেলা আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, খুলনা বিভাগীয় জনসভায় যশোর থেকে নেতাকর্মীরা যেতে বাস, মাইক্রো, বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে জেলা আওয়ামী লীগ। ৮ উপজেলার জন্য যশোরের অভয়নগর থেকে ৪টি, বেনাপোল থেকে ২টি, ঝিকরগাছা ১টি, যশোর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ৪টি সর্বমোট ১১টি ট্রেনে কওে নেতাকর্মীর যাবেন। এছাড়া জেলার ৯৩টি ইউনিয়ন থেকে ৬০০ বাস রাখা হয়েছে। এসব স্টেশন ও বাস স্ট্যান্ডে নেতাকর্মীদের আনতে নসিমন, থ্রি হুইলার, ইজিবাইকের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কয়েকশ মাইক্রোবাস রাখা হয়েছে। সোমবার সকাল ৮ থেকে নির্দিষ্ট স্থান থেকে নেতাকর্মীদের নিয়ে খুলনা সার্কিট হাউস মাঠে যাবেন। এছাড়া যশোর থেকে খুলনাতে যাওয়া নেতাকর্মীদের সকাল ও দুপুরের খাবারের আয়োজন করেছেন যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার বলে নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন।
যশোর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মাহমুদ হাসান বিপু বলেন, এই সরকারের আমলে খুলনা বিভাগে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় যশোরে চেহারা পরিবর্তন করেছেন শেখ হাসিনার সরকার। তাই সেই উন্নয়নের নেত্রী শেখ হাসিনাবে দেখতে এবং আগামী নির্বাচনের দিকদির্শেনা জানতে যশোরের নেতাকর্মীরা খুবই উচ্ছ্বসিত। ইতোমধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদকের নির্দেশনায় সকল ইউনিয়ন ওয়ার্ডে প্রস্তুতি সভা করা হয়েছে। নেতাকর্মীরা যশোরের বিভিন্ন উন্নয়নের বিলবোর্ড ও দলীয় প্রধানদের ছবি সম্মিলিক প্লে কার্ড নিয়ে খুলনায় প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় যাবে।
জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম নিয়ামত উল্লাহ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই জনসভা সফল করতে যশোরের নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত। বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে আনন্দঘন পরিবেশে জনসভায় যাবেন নেতাকর্মীরা।
যশোর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার আয়নাল হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশে নেতাকর্মীদের যেতে যশোর জেলার অভয়নগর, সদর, ঝিকরগাছা ও বেনাপোল স্টেশন থেকে ৮টি এবং কুষ্টিয়া চুয়াডাঙ্গা থেকে তিনটি সর্বমোট ১১টি ট্রেন ভাড়া নিয়েছে যশোর জেলা আওয়ামী লীগ। নির্দিষ্ট যাত্রী নিয়ে এসব ট্রেন আপ ডাউন করবে। তিনি বলেন, যশোর খুলনা রুটের নিয়মিত ৬টি ট্রেন এবং সোমবারে চিত্রা ও সুন্দরবন নামে দুটি ট্রেন বন্ধ থাকায় বিশেষ ব্যবস্থায় ৮টি ট্রেন যশোর থেকে খুলনায় যাবে। এছাড়া বিভিন্ন ট্রেনের বিভিন্ন বগি নিয়ে তিনটি ট্রেন বানানো হয়েছে। সেগুলোর নামে দেওয়া হয়েছে যশোর এক্সপ্রেস। ফলে অন্যজেলায় যাতায়াতকারী বা এই রুটে যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হবে না।
এদিকে জেলা পরিবহন সংস্থা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আজিজুল আলম মিন্টু বলেন, যশোরের বিভিন্ন রুট থেকে যোগাযোগ করে যশোর জেলা আওয়ামী লীগ ৬০০ বাস ভাড়া করেছে। তাদের পরিকল্পনা অনুযাযী সমাবেশে যাত্রী পরিবহণের জন্য যাবে। কোন গাড়ি কোন জায়গা থেকে ছাড়বে তার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তিনি জানান, সাধারণ যাত্রীদের ভোগান্তি যেন না হয় সেদিকে দৃষ্টি রাখা হয়েছে।
খুলনা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, খুলনায় জনসভার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুলনার ২২টি প্রকল্প উদ্বোধন ও দুটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। প্রকল্পগুলোর তালিকা আগেই প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো প্রকল্পের তালিকায় (প্রস্তাবিত) রয়েছে মোট ২২টি প্রকল্প। এর মধ্যে গণপূর্ত বিভাগের রয়েছে আটটি ও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকল্প রয়েছে ১০টি। প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ৩ মার্চের পর খুলনা সার্কিট হাউস মাঠে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে ভাষণ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।