নিজস্ব প্রতিবেদক
‘পিচঢালাই আর ইট-খোয়া উঠে যশোর পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বেশ কয়েকটি রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় রাস্তাগুলোর এই করুণ দশা হয়েছে। এসব সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের পোহাতে হচ্ছে দুর্ভোগ। এর মধ্যে নতুন করে যোগ হয়েছে সাপ্লাই পানির সংকট। দীর্ঘদিনের এই সমস্যা স্থানীয়রা পৌরকর্তৃপক্ষের কাছে সমাধানের দাবি জানালেও ব্যবস্থা না নেওয়ার প্রতিবাদে এবার বিক্ষোভ ও স্মারকলিপি কর্মসূচি পালন করেছে স্থানীয়রা। মঙ্গলবার দুপুরে পৌরসভা চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল শেষে ৪ দফা দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান করেন বাসিন্দারা। স্মারকলিপি গ্রহণ করেন পৌর মেয়র হায়দার গণি খান পলাশ। এসময় সড়কগুলো দ্রুত সংস্কার, রমজানের আগে সাপ্লাইয়ের পানি সরররাহ ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নত করার দাবি জানানো হয়।
কর্মসূূচিতে নেতৃত্ব দেওয়া ওয়ার্ডের বাসিন্দা জিল্লুর রহমান ভিটু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘যশোর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে শহরে প্রবেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বাইপাস সড়ক চোপদারপাড়া। জেলা আনসার-ভিডিপি ক্যাম্প (কার্যালয়) যশোর কলেজ ও যশোর মেডিকেল কলেজে যাতায়াতের জন্য এই সড়কটি গুরুত্বপূর্ণ। মাত্র পৌনে এক কিলোমিটার দীর্ঘ চোপদারপাড়া সড়কে পয়ঃনিষ্কাশনের জন্যও নালার ভালো ব্যবস্থা নেই। দুই যুগের মধ্যে এই সড়ক সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেয়নি পৌর কর্তৃপক্ষ। এছাড়া ওয়ার্ডে দুটি পানির পাম্প নষ্ট থাকায় দীর্ঘদিন ধরে পানি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। আমরা পানি পাচ্ছি না। পানির অভাবে স্থানীয় ওয়ার্ড বাসিন্দারা খুবই কষ্টে আছে। যদি আগামি ২ এপ্রিলের মধ্যে পৌরকর্তৃপক্ষ সমস্যাগুলো সমাধানের কোন ধরণের উদ্যোগ না নেয়; তাহলে পৌরসভা ঘেরাও ও অনশনের মতো কর্মসূচির হুশিয়ার দেন তিনি।
সরেজমিনে ঘুরে ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যশোর পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের প্রধান সড়ক সমূহের একটি চোপদারপাড়া সড়ক। প্রায় দুই যুগ ধরে সড়কটিতে কোন উন্নয়ন কাজ হয়নি। এছাড়া শহরের বেজপাড়া চোপদারপাড়া সড়কটি বেজপাড়া তালতলা মোড় থেকে শুরু হয়ে সরকারি হাঁস মুরগির খামারের সামনে রেল সড়ক, শংকরপুর রেললাইন ও কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে গিয়ে সড়কটি সংযুক্ত হয়েছে। এই সড়কে বিটুমিনের আস্তরণ উঠে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সড়কটি একেবারেই চলাচলের অযোগ্য। এলাকাবাসী আরো জানান, শহরের ব্যাপক অংশের পানি ৭ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার উপর দিয়ে হরিণার বিলে গিয়ে পড়ে। তাই সামান্য বৃষ্টিতে টিবি ক্লিনিক, আনসার ক্যাম্পের পিছন পাশ, হিলফুল জামে মসজিদ এলাকা, বারেক সড়ক এলাকা প্লাবিত হয়। এই সমস্যার মধ্যে নতুন করে যোগ হয়েছে সাপ্লাই পানির সংকট। ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের জন্য দুটি পানির পাম্প হাউস রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে পানি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
চোপদারপাড়ার বাসিন্দা এস এ নাসির শেফার্ড বলেন, সড়কটি সংস্কারের দাবিতে এর আগেও স্থানীয় বাসিন্দারা বিক্ষোভ মিছিল করেন। গণস্বাক্ষর সংবলিত স্মারকলিপি পৌরসভার মেয়রের কাছে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সংস্কারের কোনো উদ্যোগ। বেজপাড়া ছায়াবিথি রোডের বাসিন্দা তসলিমুর রহমান বলেন, যশোর পৌর শহরের অধিকাংশ সড়ক চলাচলের অনুপযোগী। সড়কের সঙ্গে পয়ঃনিষ্কাশন নালার ভালো ব্যবস্থা নেই। জলাবদ্ধতা শহরের আরেকটি বড় সমস্যা। বৃষ্টির পানি জমে সড়ক দ্রুত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নাগরিক সুবিধা পাওয়া থেকেও শহরবাসী বঞ্চিত হচ্ছে।
এদিকে ওয়ার্ডটিতে দীর্ঘদিনের সমস্যাগুলো পৌরকর্তৃপক্ষ সমাধান না করায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে এলাকাবাসী। পৌর কার্যালয় চত্বরে এলাকাবাসী মাটিতে বসে বিক্ষোভ করে। এসময় রাস্তা সংস্কার চাই, পানি সমস্যা সমাধান দাবিতে স্লোগান দিতে দেখা যায়। পরে পৌরসভার মেয়র হায়দার গণি খান পলাশের আশ্বাসে কর্মসূচি শেষ করেন। এরপর গণস্বাক্ষরিত ৪ দফা স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। দাবিগুলো হলো, ওয়ার্ডের কবরস্থান সড়ক, শহীদ মাহফুজ সড়কসহ বাইলেন সড়কগুলো সংস্কারের সাথে চোপদারপাড়া সড়কটি রেললাইন ক্রসের ব্যবস্থা নিলে বাস টার্মিনাল ও মেডিকেল কলেজের সাথে সংযোগ সড়ক করা। এতে এলাকাবাসীর ভোগান্তি, সময়ের অপচয় ও আর্থিক ব্যয় হ্রাস পাবে। রমজানের পূর্বেই সাপ্লাই পানি স্বাভাবিক ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নত করা। পানি সমস্যার কথা স্বীকার করে যশোর পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী কামাল আহমেদ বলেন, ৭ নম্বর ওয়ার্ডে দুটি পাম্প রয়েছে। একটি ৮ মাস ধরে নষ্ট হয়ে পড়ে থাকলেও অন্যটি দিয়ে ওয়ার্ডে কোন মতো পানি দিয়ে আসছিলো। সম্প্রতি এটিও নষ্ট হয়ে যাওয়ার পরে একেবারেই বেহাল অবস্থা ওয়ার্ডটিতে। তবে দ্রুতই বিষয়টি সমাধান করার বিষয়ে তারা তৎপর রয়েছেন বলে দাবি করেছেন এই কর্মকর্তা।
পৌরসভার মেয়র মুক্তিযোদ্ধা হায়দার গণি খান পলাশ বলেন, অনেকরাস্তা গুলো সংস্কারের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। দ্রুতই সমস্যার সমাধান হবে।
