রায়হান সিদ্দিক
চালের বাজারে শৃঙ্খলা আনতে নতুন নিয়ম চালু করেছে সরকার। চালের বস্তায় ধানের জাত, দাম, প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের নাম এবং উৎপাদনের তারিখ লেখার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়। সরকারের এমন সিদ্ধান্ত মানতে যশোরের জেলা প্রশাসক এক মাস আগে চালকল মালিকদের সাথে সভা করেছিলেন। সভা থেকে মিল মালিকদের ১৪ এপ্রিল থেকে চালের বস্তায় ৭ তথ্য সংযুক্ত করার কথা ছিল। কিন্তু যশোরের কোনও চালকল মালিক সেই নির্দেশ মানেননি।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী জেলার ৮ উপজেলায় ৯৬টি চালকল রয়েছে। এরমধ্যে অটো রাইস মিল ৩১ টি, হাস্কিং ৬৩ ও মেজর রাইস মিল রয়েছে ২টি। ৩১ টি অটো রাইস মিলের যশোর সদরের ৭টি রাইস মিলের ৩টি প্রাথমিকভাবে সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের প্রস্তুতি শুরু করেছে। শার্শায় ১০ টি রাইস মিলের মধ্যে ২টি রাইস মিল বস্তায় তথ্য দেয়ার জন্য মেশিন স্থাপন কাজ করছে। অভয়নগরের ৭টি রাইস মিলের মধ্যে ৩টি রাইস মিল প্রস্তুতি নিচ্ছে। বাকিগুলো বন্ধ রয়েছে। অপরদিকে চৌগাছা, বাঘারপাড়া ও মণিরামপুরে ১টি করে অটো রাইস মিল রয়েছে। তাদের পর্যবেক্ষনে রাখা হয়েছে এবং ঝিকরগাছার ২টি রাইস মিল বন্ধ রয়েছে।
যশোরের বড় বাজার চালের আড়তসহ জেলার কোথাও সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তথ্য সম্বলিত চালের বস্তার দেখা মেলেনি। অথচ চালের বস্তায় বিভিন্ন তথ্য সন্নিবেশ করতে মিল মালিকদের সঙ্গে গত ৩১ মার্চ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বৈঠকও হয়েছে। ওই বৈঠাকে জেলা প্রশাসক জানিয়েছিলেন, এই ৭ তথ্য না পেলে সংশ্লিষ্টদের আইনের আওতায় আনা হবে। নির্দেশনা না মানলে আইনের ধারা ৬ ও ৭ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই আইনে দুই বছর থেকে পাঁচ বছরের কারাদ- এবং ১০ লাখ থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।
এবিষয়ে জানতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এস এম শাহীনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সরকারি সিদ্ধান্ত মানতে প্রত্যেকেই বাধ্য। এবিষয়ে ইতিমধ্যে মিল মালিকদের সাথে বৈঠক করা হয়েছে। তবে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছেন। তারা যদি আমাদের কোন তথ্য না দেয় তাহলে অভিযান চালানো সম্ভব না।
এদিকে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সেফাউর রহমান জানান, আমি জেলায় নতুন এসেছি। এখনো সবকিছু গুছিয়ে উঠতে পারিনি। তাছাড়া আমি আসার আগেই জেলা প্রশাসক চালকল মালিকদের সাথে আলোচনা করেছেন। অভিযানের ক্ষমতাও জেলা প্রশাসকের হাতে। আমরা শুধু পর্যবেক্ষক। যেহেতু আমি জেলায় নতুন এসেছি তাই এখনো চালকল মালিকদের সাথে বসতে পারিনি। তবে দ্রুতই তাদের সাথে বৈঠক করবো। এছাড়া উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকদের চালকলগুলো পর্যবেক্ষণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারাও মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন। দ্রুতই জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে অভিযান চালানো হবে।
অন্যদিকে সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয়ে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে এখনও প্রস্তুত নন চালকল মালিকরা। কারণ ধানের জাত লেখার বিষয়ে কিছু জটিলতা রয়েছে। বস্তার গায়ে দাম লেখার ক্ষেত্রেও জটিলতা রয়েছে। এলাকাভেদে দামের মধ্যে তো পার্থক্য থাকে। তাই পাইকারি বাজারের কোথাও সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক বস্তার গায়ে ধানের জাত, দাম, প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের নাম এবং উৎপাদনের তারিখ লেখা বস্তা ভর্তি চাল পাওয়া যাবে না। এর জন্য আরও সময় লাগবে।
সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়ন কেন সম্ভব নয় জানতে চাইলে জেলা চালকল মিল মালিকদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলন বলেন, কৃষকের কাছে অনেক প্রকার ধানের জাত রয়েছে। যা ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের কাছেও নাই। কৃষক সেই সব ধানের চাষ করলেও ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট তা চাষ করে না। ফলে সেই সব ধানের জাত বস্তার গায়ে লেখা যাবে না, যা ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট চাষ করে না। এখানে এ ধরনের জটিলতা রয়েছে। সরকার আমাদের ধানের জাতের কোন তালিকা দেয়নি। সরকারের পক্ষ থেকে ধানের জাতের একটা তালিকা পেলে সেই তালিকা ধরে কাজটা করা সহজ হতো ।
তিনি আরও বলেন, এখনও নতুন ধান আসেনি। ফসল কাটা শুরু হয়েছে। তাই এখনও তো চাল উৎপাদন শুরু হয়নি। এ ছাড়া বস্তার গায়ে ধানের জাত, দামসহ নানা ধরনের তথ্য লিখতে হলে কিছু মেশিনপত্র লাগবে। মিলারদের কাছে যে ডাইস আছে সেটা পরিবর্তন করতে হবে। কীভাবে পরিবর্তন করতে হবে, সেই বিষয়ে আমাদের ধারণাও দেওয়া হয়েছে। একটা বিষয় বাস্তবায়ন করতে গেলে কিছু সময় লাগবে। আমাদের তো সেই সময় দিতে হবে।
এ রহমান পরশ রাইস মিলের সত্ত্বাধিকারী আনিসুর রহমান বলেন, সরকারি সিদ্ধান্ত মানতে আমরা বাধ্য। কিন্তু দ্রুতই এটি বাস্তবায়ন সম্ভব না। এর জন্য আরও সময় লাগবে।
শহরের মা লক্ষি চাল ভাণ্ডােরের মালিক পবিত্র পাল বলেন, সরকারের এই সিদ্ধান্ত ভালো। আমরা সাধুবাদ জানাই। কিন্তু সিদ্ধান্তটি মাঠ পর্যায়ে পৌঁছানো যায়নি বলেই মনে হয়। আমরা আসলে এ বিষয়টি সম্পর্কে ততোটা জানিনা। আমার মনে হয়, আরো কিছুটা সময় দেওয়া উচিত। এ ছাড়া কাজটি তো মিলারদের। তারা এ কাজটি করলেই সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন সহজ হবে বলেও জানান তিনি।
