নিজস্ব প্রতিবেদক: গ্রুপ পর্বের চতুর্থ ম্যাচে ব্যাট হাতে ঝড় তুলেছিলেন যশোর ক্রিকেট ক্লাবের রুশাদ হোসেন। ২৯ জানুয়ারির সেই ঝড় খুব বেশি সময় স্থায়ী হয়নি। ৫ চার ও তিন ছয়ে ৪৬ বলে ৫২ রানে থামে সেদিনের ঝড়। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হওয়ায় ব্যাট হাতে নামার সুযোগ হয়নি যশোর জেলা দলের এই অলরাউন্ডারের। প্রায় চার মাস আগে ব্যাট হাতে যেখানে শেষ করেন শুক্রবার সেখান থেকে শুরু করেন রুশাদ। ঝড়ো ব্যাটিংয়ে তুলে নেন সেঞ্চুরি। এটি লিগের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। এর আগে সূর্য্য সংঘ ক্লাবের হাবিবুর রহমান পিয়াস করেন প্রথম সেঞ্চুরি।
রুশাদের এই সেঞ্চুরিতে গ্রুপ পর্ব শেষ হওয়ার আড়াই মাস পর শুরু হওয়া যশোর প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেটের সুপার লিগে সহজ জয় পেয়েছে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন যশোর ক্রিকেট ক্লাব। যশোর ক্রিকেট ক্লাবের কাছে ৮ উইকেটে হেরেছে চমক সৃষ্টি করে সুপার ফোরে যায়গা করে নেয়া আসাদ ক্রিকেট একাডেমি।
শামস্-উল-হুদা স্টেডিয়ামে টস জিতে আসাদ ক্রিকেট একাডেমির অধিনায়ক আসিফ আফ্রিদি রুবেল প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয়। ব্যাট করতে ২০১৮ সালে নিউজিল্যান্ড যুব বিশ^কাপে অংশ নেয়া ডানহাতি পেসার রনি হোসেন ও টিপু সুলতানের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে রানের জন্য হাঁস-ফাঁস করতে থাকে। প্রথম দশ ওভারে ইয়াসিন হোসেনের উইকেটটি হারিয়ে ১৩ রান জমা করতে পারে। এরপরে দ্রুত রান তুলতে গিয়ে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে তারা। লিগ পর্বের প্রথম থেকে ধারাবাহিক আজিম শেখ অয়নের ব্যাট থেকে এসেছে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ৪৯ রান। রান বাড়ানোর তাড়নায় রকিবুল হাসানের বলে তুলে মারতে মিড অফে নাহিদের দুর্দান্ত ক্যাচে পরিণত হয়ে সাজঘরে ফেরে। নবম ব্যাটার হিসেবে আউট হওয়ার আগে আজিমের ৫৪ বলের ইনিংসে ছিল সমান তিনটি করে চার ও ছয়ের মার। আজিম শেখ হওয়ার আউট হওয়ার পর আর এক বল স্থায়ী হয়নি আসাদ ক্রিকেট একাডেমির দলীয় ইনিংস। শেষ পর্যন্ত তারা ৪৭ ওভার চার বলে ১৬৮ রান করতে পারে।
আজিমের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২২ রান করেন লিপটন শিকদার। এছাড়া তানভীর রাশেদ আরাফ ১৯, ইকমার হোসেন ১৪ ও শাহান শাহারিয়ার ১৩ রান করেন।
যশোর ক্রিকেট ক্লাবের বহিরাগত কোটায় খেলা রকিবুল হাসান ছিলেন সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রহকারী। ৮ ওভার ৪ বল হাত ঘুরিয়ে ২০ রানে নিয়েছেন ৪ উইকেট। টিপু সুলতান পুরো ১০ ওভার কোটা শেষ করেছে ৩৪ রানে তিন উইকেট নিয়ে। এর পাশে রেজওয়ান ও মেহেদি হাসান শিবলি নিয়েছেন একটি করে উইকেট।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে দারুণ শুরু করেন যশোর ক্রিকেট ক্লাবের দুই ওপেনার রুশাদ হোসেন ও আহাদ গাজী। আহাদ গাজী ২৬ রানে সাজঘরে ফিরলে ভাঙ্গে ৯৮ রানে জুটি। তবে এর আগেই ব্যক্তিগত অর্ধশতক তুলে নেন রুশাদ। রুশাদের প্রথম দুই স্কোরিং শটই ছিল ছয়। ৩৯ বলে ফিফটি ছোঁয়ার পথে রুশাদ মারেন আরও চারটি ছয় ও চারটি বাউন্ডারি। ফিফটি করার পরও রুশাদের ঝড় থামাতে পারেনি আসাদ ক্রিকেট একাডেমির কোন বোলার। প্রথম পঞ্চাশ করতে যেখানে ৩৯ খেলেছিল। তবে পরের পঞ্চাশ করেছেন আরও চার বল কমে। শেষ পর্যন্ত রুশাদ ৮৯ বলে ৮টি চার ও ৯টি ছয়ে ১১৯ রানে মাঠ ছাড়ে। আহাদের পর খুব বেশিক্ষন ক্রিজে টিকতে পারেনি মাহফুজুর রহমান টিটো। ব্যক্তিগত এক রানে সাজঘরে ফেরেন টিটো। এরপরে ইমরানুজ্জামানের মতো ব্যাটার রেখে লোয়ার মিডল অর্ডারে ব্যাট করা মেহেদি হাসান শিবলিকে প্রমোশন দিয়ে চারে নামানো হয়। ব্যাটিং অর্ডারের উপরের দিকে নেমে রুশাদকে যোগ্য সমর্থন দিয়েছেন শিবলি।দলের জয় নিশ্চিত করে ৩০ বলে ১৮ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
টস : আসাদ ক্রিকেট একাডেমি।
আসাদ ক্রিকেট একাডেমি : ৪৭.৪ ওভার ১৬৮/১০ (ইয়াসিন ৩, তানভীর রাশেদ আরাফ ১৯, ইকরাম হোসেন ১৪, লিপটন শিকদার ২২, সুব্রত শেখর সোহাগ ৪, আজিম শেখ ৪৯, শাহান শাহারিয়ার ১৩, রুবেল আফ্রিদি ৯, কামরান রাশেধ ০, মেজবাউর রহমান ১, সালাউদ্দিন রাজন ০*; রনি হোসেন ০/৪, টিপু সুলতান ৩/৩৪, মাহফুজুর রহমান টিটো ০/৩৪, রকিবুল হাসান ৪/২০, রেজওয়ান ১/৩১, মেহেদি হাসান শিবলি ১/১৭, নাহিদ ০/২০)।
যশোর ক্রিকেট ক্লাব : ২৭.২ ওভার ১৬৯/২ (রুশাদ হোসেন ১১৯*, আহাদ গাজী ২৬, মাহফুজুর রহমান টিটো ১, মেহেদি হাসান শিবলি ১৮*; সালাউদ্দিন রাজন ০/৩০, মেজবাউর রহমান ০/১১, রুবেল আফ্রিদি ০/৪৫, লিপটন শিকদার ১/৪২, সুব্রত সোহাগ ১/১৯, কামরান হোসেন ১/১৯, ইকরাম হোসেন ০/৬)।