নিজস্ব প্রতিবেদক
আট বছর পর ২০১৮ সালের ২০ মে ভেঙ্গে দেয়া হয়েছিল যশোর জেলা বিএনপির নির্বাহী কমিটি। আহ্বায়ক কমিটিকে পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু এরই মধ্যে পেরিয়ে গেছে চার বছর। জেলা সম্মেলনের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন করতে পারেনি জেলা বিএনপি। যদিও পুলিশের বাধার কারণে উপজেলার সব কমিটি সম্পন্ন করতে পারছেন না বলে বলছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। অবশ্য এই যুক্তি মানতে নারাজ দলীয় নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, দলীয় কার্যালয়ে সভা-সমাবেশ করছে দলটি, অথচ পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার আগ্রহ কম রয়েছে নেতাদের মধ্যে। এতে তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২০ মে লালদীঘিরপাড়ে অবস্থিত দলীয় কার্যালয়ে নির্বাহী সভায় কমিটি ভেঙ্গে ৫৩ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এর আগে দুই বছরের কমিটি আট বছর পার করেছিল। কমিটিকে আগামী তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন করার জন্য বলা হয়। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছিল বিএনপির সাবেক স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামের সহধর্মিনী অধ্যাপক নার্গিস বেগমকে। সদস্য সচিব করা হয় অ্যাড. সাবেরুল হক সাবু ও যুগ্ম আহ্বায়ক হয়েছেন দেলোয়ার হোসেন খোকন।
ওই সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু। বিশেষ অতিথি ছিলেন দলের খুলনা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত।
জেলা বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালে যশোর জেলা বিএনপির কমিটি গঠিত হয়। ১৪০ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন প্রয়াত শহিদুল ইসলাম নয়ন ও সাধারণ সম্পাদক হন অ্যাড. সাবেরুল হক সাবু। এরপর ৮ বছর পার হয়ে গেলেও জেলা সম্মেলন করা হয়নি।
আরও পড়ুন: স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে শিক্ষার্থীদের ভূমিকা রাখতে হবে : প্রতিমন্ত্রী স্বপন
তৃণমূল নেতাকর্মীদের দাবি দীর্ঘ ৮ বছর জেলা কমিটির সম্মেলন না হওয়ার কারণে সরকার বিরোধী আন্দোলন যশোরে হয়নি। কোন মিছিল-মিটিং ছিল না বললেই চলে। বেশিরভাগ নেতারা মামলার ভয়ে নিজেদেরকে আড়াল করে রেখেছেন। তবে শীর্ষ কয়েকজন নেতা পুলিশের নাশকতার মামলার আসামি ছিলেন। এমতাবস্থায় ঝিমিয়ে পড়ে যশোর জেলা বিএনপির কর্মকা-। জেলার রাজনীতির মাঠে ক্ষমতাসীনরা ছাড়া আর কোন দল মাঠে নেই বিগত ১২ বছর ধরে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর জেলা বিএনপি দলীয় কার্যালয়ের সামনে সভা-সমাবেশ করছে নিয়মিতভাবে। মূলত কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা রাখতে তারা দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হচ্ছেন। কার্যত সাংগঠনিক ভিত তাদের প্রায় ভেঙ্গে গেছে। দলটির একমাত্র হাল ধরে রেখেছেন বিএনপি নেতা সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের ছেলে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। তার নেতৃত্বে কর্মীরা সভা-সমাবেশে অংশ নিচ্ছেন।
জেলা বিএনপির নিষ্ক্রিয়তার কারণে এর অঙ্গ সংগঠন জেলা যুবদল ও ছাত্রদলের অবস্থাও ভঙ্গুর। যশোর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন জানান, আমরা পুলিশের শক্ত বাধা উপেক্ষা করে দলীয় কার্যালয়ের সামনে কর্মসূচি পালন করছি। বর্তমান সরকার বিএনপির উপর দমন নিপীড়ন চালাচ্ছে। বেশিরভাগ নেতারা একাধিক মামলার আসামি। এই অবস্থায়ও দলকে আমরা ধরে রেখেছি। কর্মীরা আমাদের পাশে থাকছেন সবসময়। জেলার ৮টি পৌরসভা ও ৮টি উপজেলা কমিটি রয়েছে। ইতিমধ্যে আমাদের ১০টি ইউনিটের কমিটি গঠন হয়েছে। বাকি ৬টি ইউনিটের কমিটি গঠনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এরপর আশা করছি খুব শিগগিরই আমরা জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারব এবং সরকার বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেব।
যশোর জেলা বিএনপি সদস্য সচিব অ্যাড. সাবেরুল হক সাবু জানান, সারাদেশে দলকে পুনঃগঠনের অংশ হিসেবে যশোর বিএনপিকেও ঢেলে সাজানো হবে। করোনার কারণে ব্যাঘাত ঘটেছে; কমিটি হয়নি। পুলিশের বাধার কারণে উপজেলাগুলোতে কমিটি গঠনে সময় লগেছে। আর মাত্র ৬টি ইউনিটের কমিটি বাকি রয়েছে। আশা করছি দুই মাসের মধ্যে জেলা বিএনপি পূর্ণাঙ্গ কমিটি পাবে।
আরও পড়ুন: যশোর আদ-দ্বীন হাসপাতালে সিজারের সময় সন্তান পাল্টে দেয়ার অভিযোগ
