আবদুল কাদের
‘লাগামছাড়া’ লোডশেডিংয়ে যশোরের বিসিকের শিল্পকারখানায় উৎপাদনে ধস নেমেছে। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে বেড়েছে খরচও। একই সাথে মেশিনারীজ নষ্ট হওয়ার উপক্রম। বিসিক কর্তৃপক্ষ বলছেন, লোডশেডিংয়ে তাদের অঞ্চলের শিল্প প্রতিষ্ঠানে কমপক্ষে ১০ শতাংশ উৎপাদন কম হচ্ছে। আবার উদ্যোক্তাদর খরচও বেড়েছে দ্বিগুণ। এতে করে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।
লোডশেডিংয়ের সময় যারা নিজস্ব জেনারেটরে কারখানা চালাচ্ছেন, তাদের উৎপাদন খরচ বেড়েছে ব্যাপক। অধিকাংশ কারখানার শ্রমিকরা দিনের বড় অংশ অলস সময় কাটাচ্ছেন। বিদ্যুতের ঘন ঘন যাওয়া-আসার কারণে কারখানার যন্ত্রপাতিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে কাঁচামাল। কমেছে শ্রমিকদের আয়।
যশোর বিসিকে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান এমইউসিএ ফুডসের মালিক শ্যামল দাস জানান, মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিংয়ে কারণে মাসে কমপক্ষে ৩ লাখ টাকার অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে। জেনারেটরের তেল বাবদ এই টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে। আমরা ১৩টি দেশে মাছ রপ্তানি করে থাকি। যেকারণে আমাদের হিমাগার সব সময় চালু রাখতে হয়। কবে লোডশেডিং থেকে মুক্তি পাব কে জানে। তিনি বলেন, বিসিকের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেও উৎপাদন কমে গেছে। আর যাদের জেনারেটর নেই তারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কেননা কাজ ফেলে তাদেরকে বসে থাকতে হচ্ছে।
বিসিকের গাড়ির পার্টস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এনায়েত ইঞ্জিনিয়ারিং কারখানার মালিক আকতার হোসনে বলেন, প্রচন্ড গরমের সাথে বেড়েছে লোডশেডিং। তীব্র লোডশেডিংয়ে আমাদের শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে বসে থাকছেন। পরে ওভারটাইম করে কাজ করাতে হচ্ছে। এতে আমাদের খরচ বেড়েছে অনেক। আবার চাহিদা অনুযায়ী পণ্য উৎপাদন করতে পারছিনা।
যশোর বিসিকের ডিজিএম গোলাম হাফিজ জানান, লোডশেডিংয়ে বিসিকের শিল্প প্রতিষ্ঠানে ১০ শতাংশ উৎপাদন কমে গেছে। প্রচন্ড গরমে শ্রমিকরা কাজ করতে পারছেনা। আমদের এখানে মোট ১১৯টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যার মধ্যে রপ্তানিযোগ্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৭টি। লোডশেডিংয়ে সব প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সবারই খরচ বেড়েছে।
এদিকে লোডশেডিংয়ের কারণে যশোরের হ্যাচারিগুলোতে রেণু পোনা উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। যেসব হ্যাচারি সচল রয়েছে তাদের বেড়েছে খরচ। মার্চ মাস থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত রেণুপোনা উৎপাদনের ভরা মৌসুম। গত দু’মাস ধরে বয়ে যাওয়া তীব্র তাপদাহে ডিম উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। এবার পোনা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ কেজি। গত বছরও উৎপাদন হয়েছিল এক লাখ ২০ হাজার কেজি।
দেশের মোট চাহিদার ৬০ শতাংশ রেণু পোনা যশোর থেকে সরবরাহ করা হয়। চাঁচড়া মৎস্যপল্লীর নানা কারণে হ্যাচারির সংখ্যা কমে যাচ্ছে। গত বছরও ৩৪ টি হ্যাচারিতে রেণু উৎপন্ন হয়। কিন্তু এবার ২৫টি হ্যাচারি উৎপাদনে গেছে। বাকিরা কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে। গত ৫ বছর আগেও এখানে ৭৮টি হ্যাচারি ছিল।
যশোর জেলা মৎস্য হ্যাচারি মালিক সমিতির সভাপতি ও ফাতিমা হ্যাচারির স্বত্ত্বাধিকারী ফিরোজ খান জানান, যশোরে গতবছর আমরা এক লাখ ২০ হাজার কেজি রেণুপোনা উৎপাদন করেছিলাম। এবছর লক্ষ্যমাত্রা কমানো হয়েছে। তারপরও এবার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হে বনা। কারণ গত দুইমাস ধরে চলছে প্রচন্ড তাপপ্রবাহ। সেই সাখে এখন শুরু হয়েছে লোডশেডিং। এতে করে পোনা মরে যাবার উপক্রম হয়েছে অক্সিজেন সংকটের কারেণ। লোডশেডিংয়ের কারণে উৎপাদন খরচ বেড়েছে দ্বিগুণ।
বিদ্যুৎ নিয়ে কোনো সুখবর দিতে পারছে না বিদ্যুৎ বিভাগ। দিন-রাত সমানে বিদ্যুৎ যাচ্ছে। গভীর রাতে লোডশেডিংয়ের মাত্রা আরও বেড়েছে। এতে জনজীবনেও ভোগান্তি দুর্বিসহ হয়ে উঠছে। রাতের বেলা সাধারণত বিদ্যুতের চাহিদা কমে। তবে প্রচণ্ড গরমের কারণে রাতে এসি ও ফ্যানের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়া এবং অনেক কারখানা রাতে চালু রাখায় চাহিদা বেড়েছে। সন্ধ্যায় সর্বোচ্চ চাহিদার সময় অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র পূর্ণ ক্ষমতায় চালানো হয়। রাত ১১টার পর কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখা হয়। ফলে উৎপাদন কমে লোডশেডিং বেড়ে যায়। গত কয়েক দিনের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দিনের সবচেয়ে বেশি লোডশেড করা হচ্ছে রাত ১২টার পর।
যশোর ওজোপাডিকোর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রওশন আলী জানান, আমাদের চাহিদা রয়েছে ৫৯ মেগাওয়াট। সেখানে পাওয়া যাচ্ছে ৪০-৪২ মেগাওয়াট। যেকারণে লোডশেডিং করা হচ্ছে।