২২৭ জনকে ভোটার থেকে বঞ্চিত
সদস্যপদ প্রদানে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক: বাংলাদেশ মোটর পার্টস ও টায়ার টিউব ব্যবসায়ী সমিতি যশোর শাখার দুই বছর মেয়াদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর হয়। এরপর সাড়ে ৪ বছর পেরিয়ে গেলেও নির্বাচনমুখি হচ্ছেনা বর্তমান কমিটির নেতৃবৃন্দ। করোনার দোহায় দিয়ে নির্বাচন স্থগিত করে রাখা হয়েছে।
এদিকে অভিযোগ রয়েছে, ২২৭ জন সদস্যকে ভোটাধিকার থেকে বিরত রাখা হয়েছে। চাঁদা পরিশোধ না করার অজুহাতে কমিটির বর্তমান প্রচার সম্পাদক ও সাবেক সাধারণ সম্পাদকসহ সমিতি গঠনে যারা ভূমিকা রেখেছেন তারাও এই বাতিলের তালিকায় রয়েছেন। আবার বর্তমান কমিটি যাদেরকে বিরোধী মনে করছেন, তাদের সবকিছু ঠিক থাকলেও নতুন সদস্য করেনি। সদস্যপদ প্রদানে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ রয়েছে। এ রকম শতাধিক ব্যবসায়ীকে ভোটার করা হয়েছে। এতে ক্ষোভ বাড়ছে সাধারণ সদস্যদের মধ্যে।
শহরের কোল্ডস্টোর এলাকার ফাইজা মটর পার্টসের মালিক মোস্তাক শিকদার জানান, আমি সব কাগজপত্র জমা দিয়ে সমিতির সদস্য হবার আবেদন করেছিলাম, কিন্তু আমাকে সদস্য করা হয়নি। অথচ অনেককে সদস্য করা হয়েছে, যারা ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী। নান্টু মটরসের নান্টু হোসেন বলেন, আমি যাবতীয় নিয়ম মেনে আবেদন করলেও সদস্য করা হয়নি। শুনেছি বর্তমান কমিটি লোকবুঝে সদস্য করছেন।
মটর পার্টস ও টায়ার টিউব ব্যবসায়ী সমিতির যশোর শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ জানান, সমিতির যশোর শাখার জন্য আমি উদ্যোগী হয়ে জমি কিনেছিলাম। সেখানে সমিতির ভবন করা হয়েছে। চাঁদা পরিশোধের শেষ সময়ে আমি জেলার বাইরে ছিলাম। কিন্তু আমার সাথে যোগাযোগ না করেই ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। মূল কথা হলো, সমিতির বর্তমান কমিটির শীর্ষ নেতৃত্ব আগামীতে নিজেদের কর্তৃত্ব ধরে রাখতে তাদের বিরোধীদের ভোটার থেকে বাদ দিয়ে নিজেদের পছন্দের লোকদের ভোটার করছেন। যাদের ভোটার করছেন, তাদের বেশিরভাগই পার্টস ব্যবসায়ী না। বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্ত করলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে।
তিনি বলেন, বর্তমান কমিটির মেয়াদ নেই। যেকারণে কেন্দ্রীয় কমিটিরও অনুমোদন নেই। এজন্য বর্তমান অবৈধ কমিটি কোন গুরুত্বপূর্ণ কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এ সিদ্ধান্ত বৈধ হবে না।
সমিতির বর্তমান কমিটির প্রচার সম্পাদক মাসুম উদ্দিন খান জানান, কমিটিতে আমরা কয়েকজন অবহেলিত। সভাপতি ও সম্পাদক একদলীয় শাসন চালাচ্ছে। নিজেরা অবৈধ কমিটি হয়েও ২২৭ জন সদস্যকে ভোটার থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। সেই তালিকায় আমিও পড়েছি। অথচ কমিটি একটু আন্তরিক হলে তারা ভোটার হতে পারতেন।
একই ধরণের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সমিতির সাবেক সভাপতি গোলাম ফারুক লিটন। তিনি বলেন, বর্তমান কমিটি নিজেদের ক্ষমতা আগামীতে ধরে রাখতে ইচ্ছামত ভোটার করছেন। প্রকৃত সদস্যদের চাঁদা না দেবার অভিযোগে বাদ দিয়ে পার্টস ব্যবসায়ী না, যাদের দোকান নেই, এমন লোকদের ভোটার করছেন। এর একটাই উদ্দেশ্য আগামীতে আবারও নেতৃত্বে আসা।
মটর পার্টস ও টায়ার টিউব ব্যবসায়ী সমিতি যশোর শাখার উপদেষ্টা কাসেদুজ্জামান সেলিম জানান, দুই বছরের কমিটি সাড়ে ৪ বছর পার করেছে। চেম্বার অব কমার্সেও একই অবস্থা। এভাবে ব্যবসায়ীদের নেতৃত্ব চলতে পারে না। বর্তমানে জরুরি হয়ে পড়েছে নতুন নির্বাচন। সদস্যদের ভোটাধিকার বাদ দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। যদি হয়ে থাকে, তা ন্যক্কারজনক।
এ ব্যাপারে তরুণ ব্যবসায়ী আহাদ আয়রন স্টোরের মালিক এজাজ উদ্দিন টিপু জানান, করোনা মহামারির অজুহাত দেখিয়ে দুই বছরের কমিটি কোন ধরণের নিয়মনীতি না মেনে যদি সাড়ে ৪ বছর পার করতে পারে, তাহলে একই কারণে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীদের ভোটার হবার সুযোগ দিলে সমস্যা কোথায়? সমিতির হাতকে শক্তিশালী করতে সদস্যদের বাদ নয়, বরং সবাইকে নিয়ে চলতে হবে।
মটর পার্টস ও টায়ার টিউব ব্যবসায়ী সমিতি যশোর শাখার সভাপতি শাহিনুর হোসেন ঠান্ডু জানান, যারা চাঁদা পরিশোধ করতে পারেনি, তাদেরকে ভোটার করা হয়নি। আগামী কোরবানী ঈদের আগেই নির্বাচন করা হবে। লোক দেখে ভোটার করার অভিযোগ তিনি নাকচ করে বলেন, সমিতির নির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত নিয়ে এসব কাজ করেছেন। এখানে কেউ একক সিদ্ধান্ত নেয়নি।
সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন সবুজ জানান, আমাদের ৬৫৫ জন ভোটার ছিল, সময়মতো চাঁদা পরিশোধ করার জন্য ৯ বার মাইকিং করেছি। সমিতির সাবেক কর্মকর্তাদের কাছে আমাদের কর্মীরা গেছেন কিন্তু তারা কেউ গুরুত্ব দেয়নি। যেকারণে চাঁদা পরিশোধ করেনি এমন ২২৭ জনকে ভোটার করা হয়নি।
তিনি বলেন, লোক দেখে আমরা ভোটার করেনি, যাদের প্রয়োজনীয় কাগজ ও দোকান রয়েছে তাদেরকে ভোটার করা হয়েছে। যাদের দোকান নেই তারা বাদ পড়েছেন। রোজার ঈদের পরেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। আর কোরবানী ঈদের আগেই ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এবার ভোট হবে স্মাটকার্ডে।