ফ্রি সিজারিয়ান ডেলিভারি বন্ধ
সুনীল ঘোষ: যশোর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে সিজারিয়ান ডেলিভারি বন্ধ হয়ে গেছে। গত সাত মাস ধরে চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠানটিতে এ্যানেসথেটিস্ট (অবেদনবিদ) নেই। ফলে বিনামূল্যের ব্যয়বহুল এই সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন গর্ভবতী মায়েরা। বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে অস্ত্রপচারের মাধ্যমে একটি ডেলিভারির ব্যয় হয় প্রায় ৩০ হাজার টাকা। তবে এ্যানেসথেটিস্ট না থাকায় কেন্দ্রটির বিনামূল্যের এই সেবা মিলছে না।
এছাড়াও কেন্দ্রটিতে চিকিৎসকসহ অন্যান্য জনবল সংকটও রয়েছে। ১০ শয্যার এই কেন্দ্রে ৩ জন মেডিক্যাল অফিসারের বিপরীতে দু’জন। ৩টি সিনিয়র নার্সের পদ থাকলেও কর্মরত আছেন একজন। এছাড়া ৬ জন সেবিকার পদ থাকলেও কাজ করছেন দুই। তবে এই দুইজনও প্রেষণে এখানে দায়িত্ব পালন করছেন। দু’জন মিডওয়াইফ’র (ধাত্রী) পদ থাকলেও শূন্য রয়েছে। হাসপাতাল সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পদগুলো শূন্য রয়েছে। ফলে স্বল্প সংখ্যক স্টাফ নিয়ে কার্যক্রম খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে।
যশোর সার্কিট হাউসের পাশে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটির অবস্থান। ১০ শয্যার হলেও বহুমুখি চিকিৎসাসেবা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে এখানে। দিন-রাত ২৪ ঘন্টা চিকিৎসা কার্যক্রম চলে। সবচেয়ে বেশি উপকৃত হন গর্ভবতী-প্রসূতি মা ও শিশুরা। এরবাইরে মাসে আড়াই থেকে ৩ হাজার মানুষ আউটডোরে চিকিৎসা সেবা নেন।
যশোর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র গরিবের হাসপাতাল নামে সর্বাধিক পরিচিত। নিরাপদ মাতৃত্বের ঠিকানা হিসেবেও খ্যাতি রয়েছে। সিজারিয়ান অপারেশন, বেড ও ঔষধের কোন খরচ নেই। সরকারি ব্যবস্থাপনায় উন্নত চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফেরেন প্রসূতি মা। এরবাইরে নরমাল ডেলিভারি হয় হরহামেশাই। চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের চেষ্টা থাকে নরমাল ডেলিভারির কিন্তু রোগীকে ঝুঁকির মধ্যে রেখে না। অবস্থা বুঝে নেয়া হয় ব্যবস্থা। জনবল সংকটের মধ্যেও হাসপাতালটিতে বছরে শতাধিক মায়ের সিজারিয়ান অপারেশন হয়। কারোরই পকেটের টাকা খরচ হয় না। নরমাল ডেলিভারি প্রসূতি মায়ের সংখ্যাও কম না। সিজারিয়ান অপারেশন প্রসূতির চেয়ে কয়েকগুণ বেশি।
২০১৯-২০ অর্থ বছরের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সেপ্টেম্বর মাসে ১১, অক্টোবরে ১৩, নভেম্বরে ১২, ডিসেম্বরে ৮, জানুয়ারি মাসে ৮, ফেব্রুয়ারিতে ১০, মার্চে ৭, এপ্রিলে ৩ ও মে মাসে ৪ জন অন্তঃসত্ত্বা রোগীকে সিজারিয়ান অপারেশন করা হয়। এ সময়ে নরমাল ডেলিভারি করোনো হয় ২৭৬ জন প্রসূতি মায়ের। এর বাইরে ৪০৪ জন গর্ভবতী ও গর্ভোত্তর ১৯ জন প্রসূতি চিকিৎসা নেন। একই সময়ে সাধারণ ২২৯ ও ৩৮২ জন শিশু চিকিৎসা নেয়। এর বাইরে পরিসংখ্যানে দেখা যায়, একই সময়ে মাসে অনন্ত আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার মানুষ বিভিন্ন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালটির আউটডোরে চিকিৎসা নিয়েছেন।
গত বছরের জুলাই মাসে অবসরে যান এ্যানেসথেসিয়াস চিকিৎসক রফিকুল ইসলাম। তার অবসরের কারণে পদটি শূন্য হয়, যা গত ৭ মাসেও পূরণ হয়নি। ওই বছর মাত্র একজন প্রসূতির সিজারিয়ান অপারেশন হয়। তবে নরমাল ডেলিভারি করানো হয় শতাধিক গর্ভবতী মায়ের। ২০২১ সালের জুলাই মাসে ৩২২, আগস্টে ৪৮৬, সেপ্টেম্বরে ৪২৯, অক্টোবরে ২৯৮, নভেম্বরে ২৭৭ ও ডিসেম্বরে ২৭৫ জন গর্ভবতী মা এই হাসপাতাল থেকে পরিচর্যা সেবা গ্রহণ করেন। এ হিসেবে ৬ মাসেই ২০৮৭ জন গর্ভবতী মা চিকিৎসাসেবা নেন। এ সময়ে (৬ মাস) আউটডোরে চিকিৎসা নেন দেড় সহ¯্রাধিক নারী-পুরুষ ও শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ।
এসবের বাইরে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র থেকে পরিকল্পনা বিষয়ে উদ্ভুদ্ধরকণ, উপকরণ বিতরণ ও প্রয়োগ, গর্ভবতী, প্রসব ও প্রসবোত্তর পরিচর্যা ও পরামর্শ দেয়া হয়। কৈশোর ও বয়সন্ধিকালীন স্বাস্থ্য পরিচর্যা, ইপিআই কার্যক্রমের আওতায় টিকাদান, ভিটামিন ও কৃমিনাশক বড়ি বিতরণসহ শিশুস্বাস্থ্য পরিচর্যা, স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রদান ও উপকরণসমূহ সরবরাহ করা হয়।
আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ও গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. আসাদুজ্জামান জানান, সাতক্ষীরা, নড়াইল, মাগুরা ও ঝিনাইদহের রোগীরাও এখানে সেবা নিতে আসেন। জনবল সংকটের মধ্যেও চিকিৎসাসেবা দিতে কোন রকমের গাফিলতি করা হয় না। অধিকাংশ স্বাস্থ্যকর্মী দিন-রাত ডিউটি করেন। তিনি আরও বলেন, শূন্যপদগুলো পূরণ হলে হাসপাতালটি থেকে আরও বেশি মানুষ বিনা খরচে চিকিৎসাসেবা পাবেন। জরুরী ভিত্তিতে একজন অবেদনবিদ নিয়োগ হলে সিজারিয়ান ডেলিভারিতে যে সংকট হয়েছে সেটির সুরাহা হবে।
তিনি আরও বলেন, এখানে কেউ এসে থাকতে চান না অতিরিক্ত হাউজ রেন্ট কর্তনের জন্য। তিনি বলেন, ইউনিয়ন কেন্দ্রগুলোতে হাউজ রেন্ট কর্তন করা হয় ৩শ থেকে ৫শ টাকা। অথচ যশোর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে হাউজ রেন্ট দিতে হয় মূল বেতনের ৪০ শতাংশ, যা কোন ভিজিটরের জন্য কষ্টসাধ্য।