নিজস্ব প্রতিবেদক :
যশোর মেডিকেল কলেজে সেই ইন্টার্ন চিকিৎসককে পিটিয়ে দুই পা ও হাত ভেঙে দেওয়ার ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে। শনিবার তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল ছাত্রাবাসের বিভিন্ন শিক্ষার্থী ও দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন। ক্যাম্পাসে আর এ ধরণের অনাকাঙ্খিত ঘটনার পুণরাবৃত্তি যাতে না ঘটে সেই কারণে নিরপেক্ষ তদন্ত শেষে আগামি মঙ্গলবার রিপোর্ট জমা দিবেন। আর এই ঘটনার থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও এখনো মামলা হয়নি। পুলিশ বলছে, বিষয়টি তদন্তনাধীন। তারা দুই পক্ষের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলছেন। এদিকে, দেশের ভবিষ্যত চিকিৎসকেরা ছাত্রাবাসে মাদক সংশ্লিষ্ট নিয়ে মারামারি ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে শিক্ষার্থী অভিভাবক মহলে। বিষয়টি নিয়েও খোদ শিক্ষার্থীরা লজ্জিত ও দুঃখ প্রকাশ করছেন। তারা বলছেন, এই ঘটনার আগেও ছাত্রবাসে ছোট-বড় ঘটনা ঘটলেও কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তারাও দ্রুত তদন্ত শেষে দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
গত মঙ্গলবার রাতে যশোর মেডিকেল কলেজের ছাত্রবাসে জাকির হোসেন নামে এক ইন্টার্ন চিকিৎসককে বেধড়ক মারধর করে অপর ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা। এই ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকালে আহতের বড়ভাই জাহাঙ্গীর আলম যশোর কোতোয়ালি মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। আহত ইন্টার্ন চিকিৎসক জাকির হোসেন গুরুতর অবস্থায় যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তিনি রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার হরিশ্বর গ্রামের মৃত সুরুজ জামানের ছেলে। এদিকে মেডিকেল কলেজে ইন্টার্ন চিকিৎসককে মারধরের ঘটনায় কলেজ প্রশাসন সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান নুর কুতুউল আলমকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। আগামি মঙ্গলবারের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত রির্পোট জমা নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটির সদস্য ও প্রভাষক আলাউদ্দিন আল মামুন বলেন, ‘ঘটনাটি দুঃখজনক। তদন্ত কমিটি জাকিরকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন। জাকিরের হাত ও পা ভেঙেছে। বুকের হাড়েও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। কলেজ ক্যাম্পাস ও ছাত্রাবাসে যাতে আর কোন এমন ঘটনা না ঘটে সেই কারণে তদন্ত রিপোর্টটি দৃষ্টান্ত করার জন্য সুষ্ঠু অবাধ রিপোর্ট দেওয়া হবে। দ্রুতই অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জাকির হোসেন অভিযোগ করে জানান, ইন্টার্ন চিকিৎসক মেহেদী হাসান লিয়ন, শামীম হাসান, আব্দুর রহমান আকাশ, সাকিব আহমেদ তানিমসহ আরো ৩-৪ জন ছাত্রবাসের ১০৪ নম্বর কক্ষে প্রতিনিয়ত মাদকের আড্ডা বসান। রাতভর চিৎকার চেঁচামেচি করেন। ওই রুমের পাশেই তার রুম। এ কারণে পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটে। ফলে, তিনি বিভিন্ন সময়ে প্রতিবাদ করেন। এর জের ধরে গত মঙ্গলবার রাত পৌঁনে নয়টায় তারা তার রুমে প্রবেশ করে হকিস্টিক ও জিআই পাইপ দিয়ে তাকে বেধড়ক মারপিট করে। রাত ১১ টা পর্যন্ত মারতে থাকে তাকে। এক পর্যায়ে তার ঘর থেকে নগদ টাকা, মানিব্যাগ ও মোটরসাইকেল নিয়ে যায় তারা। পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। অপর একটি সূত্র জানায়, হামলাকারীদের অধিকাংশই ইন্টার্ন। তাদের লেখাপড়া শেষ হয়েছে দুই বছর আগে। তার পরেও ছাত্রলীগের রাজনীতির ছত্রছায়ায় তারা ছাত্রবাসে সিট নিয়ে থাকছেন। বিষয়টি স্বীকারও করেছেন কলেজ প্রশাসন। মেডিকেল কলেজ সূত্র জানায়, হামলার শিকার জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে অসামাজিক কাজে জড়িত এমন চক্রের সঙ্গে চলাফেরার অভিযোগ রয়েছে। এর আগে তিনি পাবনা মেডিকেল কলেজে অধ্যয়নকালে একবার বহিস্কার হন। একই ধরনের অপরাধে যশোর মেডিকেল কলেজেও তার ইন্টার্ন কোর্সের কাগজপত্র এখনও কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পায়নি। এদিকে, দেশের ভবিষ্যত চিকিৎসকেরা একটি ছাত্রাবাসে মাদক সংশ্লিষ্ট নিয়ে মারামারি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে শিক্ষার্থী অভিভাবকসহ নানা মহলে। খোদ শিক্ষার্থীরাও এমন ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে। ক্ষোভ প্রকাশ করে তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান বলেন, ক্যাম্পাসে পরিবেশগত তেমন সমস্যা বড় দেখছি না; তবে কিছুদিন আগে ছাত্রাবাসে ঘটে যাওয়া ঘটনার আমরা হতবাক লজ্জিত হয়েছি। ঘটনার জন্য শুধু যশোর মেডিকেল না; ডাক্তারদের সম্মানহানি হয়েছে। যেহেতু আমরা কয়েক দিন পরেই দেশের ফাস্টক্লাস সিটিজেনের অন্তর্ভুক্ত হবো। তাদের আচরণ কাজকর্ম সেই রকম হওয়া উচিত ছিলো। এটা আমাদের কারোও কাম্য নয়। এই বিষয়ে জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও জেলা ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুপন কুমার সরকার বলেন, কয়েকদফা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছি। বিষয়টি তদন্তধীন।