সুনীল ঘোষ: যে শিশু ক’দিন আগেও শোনেনি বঙ্গোপসারগরের নাম সে স্বচোখে দেখে যাচ্ছে বঙ্গোপসাগর। সাগর-মহাসাগরে কিভাবে মিলেমিশে একাকার বিভিন্ন নদ-নদী, আজ শিশু দেখছে তার খন্ড চিত্র।
যশোর মুন্সি মেহেরুল্লাহ ময়দানে মুক্তির উৎসবে এসে শিশুরা জানছে রাষ্ট্রের নানা প্রতিষ্ঠানের নাম। কোন প্রতিষ্ঠানের কি কাজ তাও জানছে আনন্দে-উৎসবে। এসব দেখে মুগ্ধ অভিভাবকরাও। মেলা ঘুরে নানা অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন অনেক অভিভাবক।
ইট-পাথরের শহুরে আকাশে লাল, নীল, হলুদের রঙিন বৈদ্যুতিক বাতির সমারোহ। বঙ্গবন্ধুর জীবনীর ওপর আলোচনা সভা, কুইজ প্রতিযোগিতা, মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশু নৃত্য ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানকে করে তুলেছে আকর্ষণীয়। এ সবের সীমা পেরিয়ে ‘মুক্তির উৎসব’র মেলায় বসেছে সরকারি-বেসরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত ৪৫টি প্রতিষ্ঠানের স্টল। প্রতিটি স্টলে তুলে ধরা হয়েছে স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানের চলমান কর্মকান্ডের খন্ডচিত্র। এসব দেখে শিশুরা যেমন আনন্দে উদ্বেলিত তেমনি মুগ্ধ অভিভাবকসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।
এই চিত্র মুন্সি মেহেরুল্লাহ ময়দানের। শহুরে সভ্যতায় এ যেন কল্পনাতীত। চারিদিকে ইটের বিল্ডিং ঘেরা খোলা মাঠ জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ১০২তম জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে সেজেছে অপরূপ সাজে।
১৭ মার্চ ছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ১০২তম জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস। দিবসটিকে উৎসবমুখর ও তাৎপর্যময় করে তুলতে উদযাপন করছে যশোর জেলা প্রশাসন। প্রশাসনের আয়োজনে মেহেরুল্লাহ ময়দানে চলছে মুক্তির উৎসব ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী।
শিশু কিশোরের দল, তরুণ তরণীরা আর অভিভাবকসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ মেতেছেন ব্যতিক্রমী এবারের উৎসবে।
গ্রাম বাংলার সংস্কৃতি, বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত ঘটনাসমূহ, শিশুর প্রতি জাতির পিতার ভালোবাসা ও ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় দেশজুড়ে উদযাপনে নেয়া হয় নানা কর্মসূচি। যশোরে মুক্তির উৎসব চলবে ২৩ মার্চ পর্যন্ত। প্রয়োজনে বাড়তে পারে মেলার দিনক্ষণ-জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রতিদিন দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতেই মেহেরুল্লাহ ময়দানে নামছে শিশু-কিশোরসহ জনতার ঢল। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে ব্যতিক্রমী মেলা ‘মুক্তির উৎসব, চলছে রাতঅব্দি। মেলায় একাধিক স্টলে রয়েছে বিভিন্ন প্রকার পিঠাসহ খাদ্য-খাবার ও খেলনা সামগ্রী। মেলায় জিলাপি, আকরি, চিনি সাঁজ, কদমা, চিতই পিঠা, তেলের পিঠা, কুলি পিঠা, খাজা, মাটির খেলনা, বেলুন, বল, হাড়ি-পাতিলসহ নানা ধরনের পসরা বসিয়েছে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।
কিন্তু এসব লোভনীয় খাদ্য-খাবারের চেয়ে শিশুসহ অভিভাবকদের মন কাড়ছে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ও স্বায়িত্ব শাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকান্ডের খন্ড চিত্র।
মেলায় ৪৫টি স্টল বসেছে। জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস, যশোর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়, ডাক বিভাগ, সামাজিক বনবিভাগ, আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, বিআরটিএ যশোর, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, বিআরডিবি, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়, তথ্য অফিস, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্প কর্পোরেশন, শিক্ষা প্রকৌশল, এলজিইডি, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল, সমবায় বিভাগ, মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইন্সটিটিউট, প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইন্সটিটিউট, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি, ওজোপাডিকো, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, আইইডি, সনাক, জয়তী সোসাইটি, আইডিয়া পিঠা পার্ক, জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, গণপূর্ত বিভাগ, জেলা মৎস্য অফিস, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর, প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র, জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা প্রাথমিক ও জেলা শিক্ষা অফিস, যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার, যশোর সিভিল সার্জন অফিস, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট ও ভূমি অফিস। এসব প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ তাদের কর্মকান্ড সম্পর্কে শিশুদের ধারণা দিতে তুলে ধরেছে খন্ডচিত্র। প্রতিটি স্টলে রয়েছে প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা। তারা শিশুসহ অভিভাবকদের চিনিয়ে দিচ্ছেন প্রতিষ্ঠানের নাম ও তাদের কর্মকান্ড। এর বাইরে বেশ কিছু হকার মেলার মাঠে নানা পণ্য সামগ্রী বেচাবিক্রি করছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড, যশোর অফিসের কার্য্য সহকারী লিটন বৈরাগী দৈনিক কল্যাণকে জানান, চৌগাছার তাহেরপুর থেকে কপোতাক্ষ নদের উৎপত্তি। এরপর ভৈরর, হরিহর, মুক্তেশ^রী, টেকা, ভবদহ, বুড়িভদ্রা, আপারভদ্রা ও গ্যাংরাইল নদী মিশেছে খুলনার রূপসায়। রূপসার সংযোগ ঘটেছে বঙ্গোপসাগরে। পাশেই রয়েছে সুন্দরবন। তিনি বলেন, আমরা শিশুদের ধারণা দিতেই এক খন্ড জমিতে কোন নদ-নদী কিভাবে বঙ্গোপসারে গিয়ে মিশেছে তার খন্ড চিত্র তুলে ধরেছি।