নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোর শহরের যানজট নিরসনে অবৈধ যানবাহন বন্ধ ও ফুটপাত দখলমুক্ত করার জন্য অভিযান পরিচালনা করেছে পৌরসভা ও ট্রাফিক বিভাগ। সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শহরের দড়াটানা, হাসপাতাল মোড় ও মুজিব সড়কে এই অভিযান চালানো হয়। এসময় অবৈধ ৩৮টি অটোরিকশার মোটর খুলে নেয়া হয়। একই সাথে ২টি ইজিবাইক জব্দ ও শহরের মুজিব সড়কে ফুটপাতের অবৈধ দোকানদার উচ্ছেদ করা হয়।
জানা যায়, যশোর শহরের পালবাড়ি-দড়াটানা-মণিহার, দড়াটানা মোড় থেকে জেলখানা মোড় হয়ে খাজুরা স্যান্ড পর্যন্ত ও শহরের দড়াটানা মোড় থেকে চাঁচড়া চেকপোস্ট মোড় পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে গড়ে তোলা অধিকাংশ বহুতল ভবনের সামনে নিজস্ব জায়গা নেই। তাদের নিজস্ব পার্কিং ব্যবস্থা নেই। আর কারো কারো থাকলেও সেটি পর্যাপ্ত নয়। ফুটপাত দখল করেই চলছে পার্কিং ও দোকানপাট। একই চিত্র শহরের চিত্রা মোড় থেকে জজকোর্ট মোড় পর্যন্ত এমএম আলী রোড ও দড়াটানা মোড় থেকে কাঠেরপুল পর্যন্ত এইচএমএম রোড, কাপুড়িয়া পাট্টি রোডের দুই পাশের ফুটপাত দখল হয়ে গেছে। যানজটে হাজার হাজার মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।
রোববার জেলা আইনশৃংখলা কমিটির সভায় শহরের ফুটপাত বেদখল, অবৈধ যানবাহন ও যানজট নিরসনের অভিযানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের একদিনের মধ্যেই সোমবার সকালে শহরের হাসপাতাল মোড়, দড়াটানা, জজকোর্ট মোড় ও মণিহার এলাকায় অবৈধ যানবাহন বন্ধে অভিযান চালানো হয়েছে। একদিনের নোটিশে হঠাৎ অভিযান পরিচালনা করায় বিপাকে পড়ে যাত্রী ও অটোরিকশা
চালকরা। অনেকে ভাড়াই চালিত অটোরিকশা নিয়ে রাস্তায় নামেন। হঠাৎ অভিযানে অটোরিকশার মোটর খুলে নেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই।
শহরের জিরোপয়েন্ট এলাকার বাসিন্দা কামরুল নামে এক অটোরিকশা চালক বলেন, আমি জানতাম অভিযান হবে। কিন্তু রোগী নিয়ে এসেছিলাম। হাসপাতালে রোগী নামিয়ে দিয়ে ফেরার পথে অভিযানে আমার অটোরিকশার মোটর খুলে নেয়া হয়েছে।
খড়কি এলাকার অটোরিকশা চালক মিজানুর রহমান বলেন, গতকাল মাইকিং করেছে শুনেছি। কিন্তু হঠাৎ করেই এমন অভিযান হবে বুঝতে পারিনি। আমার অটোরিকশার মোটর খুলে ভেঙে দিয়েছে। এখন আমি কিভাবে সংসার চালাবো বুঝতে পারছি না।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক চালক বলেন, যত আইন প্রয়োগ সব গরীবের উপর। যারা ফুটপাত দখল করে বড় বড় ভবন করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেই। পথচারী শামছুর রহমান বলেন, শুধু অবৈধ অটোরিকশার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে যানজটমুক্ত হবে না। ফুটপথের অবৈধ দখলদারদেরকেও উচ্ছেদ করতে হবে। আর যত্রতত্র পার্কিং বন্ধ করতে হবে। তা না করতে পারলে এমন অভিযানে কোন সুফল আসবে না।
এ বিষয়ে যশোর পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী বিএম কামাল আহমেদ বলেন, রোববার জেলা আইনশৃংখলা কমিটির সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক যশোর পৌরসভায় যানজট নিরসনের লক্ষ্যে সোমবার অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন, পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ ও পৌরসভার সমন্বয়ে অবৈধ অটোরিকশা, ইজিবাইক বন্ধে অভিযান চালানো হয়েছে। এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। আগামিতে যাতে পৌরবাসী নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে, সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
যশোর ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মাফুজুর রহমান বলেন, শহরের অবৈধ ইজিবাইক, অটোরিকসা বেড়ে গেছে। এরমধ্যে মোটরচালিত অটোরিকশা বেশি বেপরোয়া।
চালকদের হাতে অটোরিকশার নিয়ন্ত্রণ থাকে না। এতে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। জেলা আইনশৃংখলা কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক এইসব অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করা হয়েছে। শহরকে যানজট মুক্ত রাখতে এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।