নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোর রেলস্টেশনে দু’টি সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের মধ্যে মারামারির ঘটনায় যশোর আদালত ও খুলনায় পৃথক দুইটি মামলা হয়েছে। গত ১৮ আগস্ট বিশেষ বাহিনীর এক নারী কর্মকর্তা বাদী হয়ে খুলনা জিআরপি থানায় সাতজনের বিরুদ্ধে এবং ২১ আগস্ট জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আশিক আহম্মেদ সাকিব বাদী হয়ে বিশেষ বাহিনীর এক দম্পতিসহ তিনজনের বিরুদ্ধে যশোর আদালতে এই মামলা করেন।
বিশেষ বাহিনীর কর্মকর্তার দায়ের করা মামলার আসামিরা হলেন, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের খুলনা ডিভিশনের নির্বাহী কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান, একই বিভাগের যশোরের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী আশিক আহম্মেদ, উপশহকারী প্রকৌশলী রাসেল মিয়া, উপশহকারী প্রকৌশলী শাহারিয়ার জনি, যশোরের চাঁচড়া রায়পাড়ার হারুন অর রশিদ বাদশার ছেলে শাহারিয়ার সনি, একই এলাকার ইকবাল হায়দার ও শামসুর রহমান জুয়েল।
অপরদিকে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আশিক আহম্মেদ সাকিবের দায়ের করা মামলার আসামিরা হলেন, বিশেষ বাহিনীর স্বামী-স্ত্রী এক দম্পতি এবং মাগুরা সদর উপজেলার পশ্চিম সাহাপাড়ার আব্দুর রউফ।
বিশেষ বাহিনীর নারী কর্মকর্তার দায়ের করা মামলায় বলা হয়েছে, গত ১৬ আগস্ট সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনে স্বামী-সন্তাসহ যশোরে আসছিলেন। পথিমধ্যে নড়াইল স্টেশনে গাড়িটি আসার পরে বিশেষ বাহিনীর পুরুষ কর্মকর্তা তার সন্তানদের জন্য খাবার কিনতে স্টেশনে যাচ্ছিলেন। এসময় জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের খুলনা ডিভিশনের নির্বাহী কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান বিনা অনুমতিতে তাদের কক্ষে প্রবেশ করেন। এসময় তাকে নিষেধ করায় অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করাসহ বিভিন্ন ধরণের হুমকি দিতে থাকে। পরে গাড়ির মধ্যেই বিষয়টি মিমাংসা করে নেয়া হয়। দুপুর ২টার দিকে ট্রেনটি যশোর স্টেশনে আসে। এসময় সকল আসামি আবারও ট্রেনের বগিতে প্রবেশ করে। এসময় তাদের মারপিট করা হয়। পাশাপাশি আসামি শাহারিয়ার সনি এবং ইকবাল হায়দার বাদীকে মারপিট করে তার গলায় থাকা এক ভরি ওজনের একটি স্বর্ণের চেইন, আট আনা ওজনের ব্রেসলেট ও ২৫ হাজার টাকা মূল্যের একটি হিরার নাক ফুল ছিনিয়ে নেয়। বাদীর শ্বশুর আব্দুর রউফ ঠেকাতে এলে আসামিরা তাকেও মারপিট করে। বাদীর চিৎকারে আশপাশের এবং স্টেশনের লোকজন এগিয়ে এলে তারা হত্যার হুমকি দিয়ে চলে যায়। পরে আহতদের উদ্ধার করে যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল ও যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয়। ১৮ আগস্ট এই ঘটনায় খুলনা জিআরপি থানায় এই ব্যাপারে ওই সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন বাদী।
অপরদিকে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আশিক আহম্মেদ সাকিবের দায়ের করা মামলায় বলা হয়েছে, দাপ্তরিক কাজে ঢাকা থেকে গত ১৬ আগস্ট সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনে যশোরে আসছিলেন। পথিমধ্যে ট্রেনটি নড়াইল স্টেশন ছেড়ে দেয়ার পরই জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের খুলনা ডিভিশনের নির্বাহী কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান ওয়াশ রুম থেকে ফ্রেস হয়ে আবার নিজের কক্ষে আসছিলেন। কিন্তু ভুলক্রমে পাশেই বিশেষ বাহিনীর এক দম্পতির ভাড়া করা কেবিনে প্রবেশ করেন। এসময় ভুল বুঝতে পেরে সাথেসাথে বের হয়ে আসেন এবং তাদের কাছেও সরি বলেন। কিন্তু কোন ভাবেই বিশেষ বাহিনীর ওই কর্মকর্তারা শুনতে নারাজ। একপর্যায়ে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের খুলনা ডিভিশনের নির্বাহী কর্মকর্তা জিয়াউর রহমানকে গালিগালাজ করা হয়। এই নিয়ে উভয়ের মধ্যে বাকবিতন্ডার মধ্যে ইঞ্জিনিয়ার জিয়াউর রহমানকে ট্রেনের মধ্যেই মারপিট করে তার চশমাটি ভেঙ্গে ফেলা হয়। ওই সময় ট্রেনে দায়িত্বরত জিআরপির এসআই এমদাদ হোসেন উভয়পক্ষকে নিবৃত করেন। দুপুর ২টার দিকে ট্রেনটি যশোর স্টেশনে এলে ইঞ্জিনিয়ার জিয়াউর রহমান নেমে তার উর্ধ্বতম কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। এসময় বিশেষ বাহিনীর ওই কর্মকর্তার নেতৃত্বে কয়েকজনে আবারও ইঞ্জিনিয়ার জিয়াউর রহমান ও তার সহযোগিদের মারপিট করেন। এসময় তাদের হাতে থাকা ১১ হাজার টাকা মূল্যের একটি ঘড়ি এবং ১৮ হাজার ৬শ’ টাকা ছিনিয়ে নেয়া হয়। এরপরে তাদের যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয়। এমনকি ইঞ্জিনিয়ার জিয়াউর রহমানকে সিটি স্ক্যান করানো হয়। চিকিৎসা শেষে কিছুটা সুস্থ হয়ে এই ঘটনায় গত ২১ আগস্ট আদালতে মামলা করা হয়। বিচারক মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের জন্য কোতোয়ালি থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশনায় গতকাল থানা পুলিশ মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করে।
এই ব্যাপারে ইঞ্জিনিয়ার আশিক আহম্মেদ সাকিবের আইনজীবী রুহিন বালুজ বলেছেন, কোন ব্যক্তিই আইনের উর্ধ্বে নয়। অপরাধ করলে তাকে আইনের আওতায় আসতে হবে।