নিজস্ব প্রতিবেদক
ঈদের আর মাত্র ৯-১০ দিন বাকি। এরই মধ্যে জমে উঠেছে যশোরে ঈদের বাজার। সেই সঙ্গে শহরে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র যানজট। শুধুমাত্র দুপুরের দিকে কিছুটা যানজটম্ক্তু থাকছে। এছাড়া সকালে ও সন্ধ্যার পর দেখা দিচ্ছে যানজট। বিশেষ করে মার্কেটগুলোর সামনে এই জট বাধছে। এসব মার্কেটে পার্কিং না থাকায় গাড়িগুলো রাস্তার উপর দাঁড়ানোর কারণে সৃষ্টি হচ্ছে যানজটের। ঈদ যত ঘনিয়ে আসবে ততই যানজট ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। এদিকে মঙ্গলবার শহরের মনিহার এলাকায় যানজট নিরসনে প্রচারণা চালিয়েছে জেলা প্রশাসন, পৌরসভা ও বিআরটিএ।
গতকাল মঙ্গলবার ও আজ প্রায় দিনভর শহরের অধিকাংশ সড়কে দেখা দেয় যানজট। শহরের কুইন্স হাসপাতাল থেকে দড়াটানা, মুজিব সড়ক, চিত্রা মোড় থেকে চৌরাস্তা বস্তাপট্টির মোড়, আরএন রোড থেকে নড়াইল বাসস্ট্যান্ড, চৌরাস্তা থেকে রাসেল চত্বর (চারখাম্বা মোড়) এবং ঈদগাহ থেকে জিলা স্কুল হয়ে রেলগেট পর্যন্ত প্রায় দিনভর ছিল যানজট। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে ট্রাফিক ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু মোটরসাইকেল, ইজিবাইক, প্রাইভেটকার ও রিকশাসহ ছোট-বড় যানবাহনের সামাল দিতে হিমসিম খেতে হয় ট্রাফিক পুলিশকে। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি নিয়ে পথ চলতে দেখা যায় পায়ে হাঁটা মানুষের। ফুটপাত ও ড্রেনগুলোর ওপর আগেই গড়ে উঠেছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। যানজট হওয়ার এটা অন্যতম কারণ বলেছেন নাগরিকরা।
জেলরোড এলাকার বাসিন্দা রুবেল আহমেদ জানান, কুইন্স হাসপাতাল থেকে মাইকপট্টি আসতে মোটরসাইকেলে লেগেছে টানা ১৫ মিনিট। যানজট না থাকলে এটুকু পথ পেরুতে লাগে সর্বোচ্চ ৫ মিনিট। ঝিকরগাছা থেকে ঈদের পোশাক কিনতে আসা নাজমা খানম জানান, শহরের চৌরাস্তা ও কালেক্টরেট মার্কেটের সামনে দিয়ে পায়ে হেঁটে চলাচল করা যাচ্ছে না। ট্রাফিক পুলিশ থাকলেও যানজট থামাতে পারছে না। শহরের বেজপাড়ার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, মুজিব সড়কের দোকানগুলোর সামনে গাড়ি রাখার কোন জায়গা নেই। প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল সড়কের উপর দাঁড়িয়ে থাকার কারণে যানজট তৈরি হচ্ছে।
যানজট বাড়ার অন্যতম কারণ হিসেবে নাগরিকরা বলছেন ফুটপাথ বেদখল হওয়া। এছাড়া যত্রযত্র গাড়ি পার্কিং ও ইজিবাইক-অটোরিকশার বেপরোয়া চলাচল। সেই সাথে যোগ হচ্ছে প্রাইভেটকার।
যশোর শহরের সড়কগুলোতে অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে রিক্সা, ভ্যান ও ইজিবাইক চলাচল। সড়ক প্রশস্তের তুলনায় যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় যানজটে ভোগান্তি বেড়েছে নাগরিকদের। বিশেষ করে সকালের দিকে ও সন্ধ্যার পর মানুষ ঈদের কেনাকাটা করতে বের হচ্ছে। তখন সৃষ্টি হচ্ছে এই যানজটের।
শহরের দড়াটানা, চিত্রা মোড়, জজকোর্ট মোড়, চৌরাস্তা ও মনিহার এলাকার যানজটের চিত্র অনেক পুরনো। শহরে রিক্সা, ভ্যান ও ইজিবাইকের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে এ স্থানগুলোতে যানজট তীব্র আকার ধারণ করেছে। এর বাইরে যানজটের ‘ঢেউ’ যেন আছড়ে পড়ছে শহরের অলিগলিতেও। যেসব রাস্তায় এতদিন যানজট বাধেনি সেখানেও রিক্সা-ইজিবাইকের জটলা বাধে।
অন্যদিকে ট্রাফিক পুলিশ প্রধান সড়কগুলোতে ইজিবাইক এবং রিক্সার চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে এ সকল ইজিবাইক ও রিক্সা শহরের অলিগলি এবং সংযোগ সড়কগুলো দিয়ে যাতায়াত করে থাকে। যেকারণে অলিগলিতেও অতিরিক্ত মাত্রায় তিন চাকা ও দুই চাকার যানবাহন চলাচল করায় যানজটে পথচারীদের চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
যশোর নাগরিক অধিকার আন্দোলন নেতা জিল্লুর রহমান জানান, ঈদকে সামনে রেখে ট্রাফিক পুলিশের নজর রয়েছে মোটরসাইকেলের দিকে। কেননা মামলা দিতে পারলেই তাদের কমিশন। আর কোন বাহনের দিকে তাদের তেমন নজর নেই। যেকারণে যানজট লেগে থাকছে।
যশোর পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী কামাল হোসেন বলেন, ঈদকে সামনে রেখে শহরে যানজট আগের থেকে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফুটপাতগুলোতে মানুষ কাপড়ের ব্যবসা করছে। মানুবিক কারণে এদেরকে উচ্ছেদ করা যাচ্ছে না। তবে যানজট নিরসনে সবাই একযোগে কাজ করছে।
যশোরের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর শুভেন্দু কুমার বলেন, শহরে অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে। ঈদের কারণে মানুষের চলাচল বেড়েছে। যেকারণে গাড়ির চাপও বেড়েছে। দড়াটানা মোড়ে অস্থায়ী ডিভাইডার দেওয়া হয়েছে। যানজট যাতে না দেখা দেয় সেব্যাপারে আমরা সচেষ্ট আছি।
এদিকে গতকাল শহরের মনিহার এলাকায় যানজট নিরসনে প্রচারণা চালিয়েছে জেলা প্রশাসন, পৌরসভা ও বিআরটিএ। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কেএম আবু নওশাদের নেতৃত্বে এই প্রচারণা চালানো হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক মাহফুজুর রহমান, পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী কামাল হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। কামাল হোসেন জানান, শহরের মনিহার এলাকায় ব্যাপক যানজট হচ্ছে। যত্রতত্র গাড়ি পার্কিয়ের কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। যেকারণে আমরা মাইকিং করে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং না করার জন্য বলেছি। আজ বুধবার ওই এলাকায় অভিযান চালানো হবে। অবৈধ গাড়ি পার্কিং পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।