নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোর শহর ও শহরতলীতে চুরির ঘটনা বেড়েছে। গত ১০ দিনের ব্যবধানে ছোট-বড় মিলিয়ে কমপক্ষে ৭টি চুরির ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে শহরে তিনটি বড় ধরণের চুরি হয়েছে। যার একটিরও ক্লু উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। এছাড়া ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটছে প্রায়ই। এতে করে মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বিরাজ করছে। কেননা ঘটনার পর পুলিশকে মোবাইল ফোনে কল করে কেউ সহযোগিতা পায় না। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নাগরিকরা।
যশোর শহরের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র লালদীঘি পাড়। এর কয়েকগজ দূরে অবস্থিত কোতোয়ালি থানা ও প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্রাচার্য্যরে বাসভবন। ওই এলাকায় চলতি মাসের ২ তারিখে মোবাইল ফোনের দোকান ‘মোবাইল হাটে’ দুঃসাহসিক চুরির ঘটনা ঘটে। চোরেরা দোকানের তালা ভেঙ্গে ১৬২টি স্মার্ট ফোন ও নগদ টাকাসহ মোট ৪৭ লাখ ৬৪ হাজার টাকার মালামাল নিয়ে গেছে। যাবার সময় তারা দোকানের সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ নিয়ে যায়। একই সাথে গ্রিলে নিজেদের আনা তালা লাগিয়ে দেয়। এব্যাপারে দোকানের মালিক কামাল হোসেন গত শনিবার কোতোয়ালি থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগে বলা হয়েছে, ৫-৬ জনের একদল চোর ‘মোবাইল হাট’ থেকে কৌশলে দামি ব্যান্ডের ১৬২টি মোবাইল সেট ব্যাগ ভর্তি করে নিয়ে যায়। সেটের মধ্যে রয়েছে ভিভো ব্যান্ডের ৩০টি, স্যামসাং ব্যান্ডের ১৭টি, ইনফিনিক্স ব্যান্ডের ১০টি, অপো ব্যান্ডের ১০টি, টেকনো ব্যান্ডের ১৬টি, শাওমি ব্যান্ডের ২০টি ও একটি রিয়েলমি ব্যান্ডের। একই সাথে দোকানের ক্যাশে থাকা ২ লাখ ৬৪ হাজার টাকাসহ মোট ৪৭ লাখ ৬৪ হাজার টাকার মালামাল নিয়ে গেছে।
এই ঘটনার পর ডিবি পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে আশাপাশের দোকান থেকে ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেছেন। সেখানে দেখা গেছে, ২ সেপ্টেম্বর সকাল ৭টার দিকে ৫-৬ জনের চোরেরা দোকান থেকে মোবাইল চুরির পর ব্যাগভর্তি করে বেরিয়ে যাচ্ছে। তারা কোতোয়ালি থানার সামনে থেকে চলে গেছে বলে একটি বেসরকারি ব্যাংকের সিসি ক্যামেরায় দেখা গেছে। এতে আশপাশের অন্য ব্যবসায়ীদের আতংক ছড়িয়ে পড়ে। কেননা এলাকাটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে পরিচিত।
গত ৩ সেপ্টেম্বর শহরের রেলরোড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে যশোর নগর মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সাবিয়া সুলতানার বাড়িতে চুরি হয়। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, রাত ৮টা ২০ মিনিটে চোরেরা বাড়িতে প্রবেশ করে নগদ ৬২ হাজার ৫শ টাকা ও এক ভরি সোনা নিয়ে যায়। এই ঘটনায় তিনি থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।
যশোরে বিমান বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ওয়ারেন্ট অফিসার আসাদুজ্জামানের বাসায় চুরির ঘটনা ঘটেছে। ৭ সেপ্টেম্বর পুলিশ সুপার বাংলোর অদূরে আরবপুরে আয়েশা বাড়ি লেনের ৫ম তলার একটি বাড়িতে এই চুরির ঘটনা ঘটে। দুর্বৃত্তরা ওই বাসা থেকে নগদ সোয়া ৩ লাখ টাকা ও ৭ ভরি স্বর্ণালঙ্কার চুরি করে নিয়ে গেছে।
পুলিশ জানায়, আরবপুরস্থ আয়েশা বাড়ি লেনের এ জেড এম আনোয়ার হোসেন নামে এক ব্যক্তির ৫ম তলা ভবনের ৫ম তলার একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকেন মো. আসাদুজ্জামান। তার স্ত্রী স্কুলে শিক্ষকতা করেন। ওইদিন সকালে স্ত্রী ঘরে তালা দিয়ে স্কুলে চলে যান। তখন বাসায় আর কেউ ছিলোনা। এরপর দুপুর ১টার দিকে মো. আসাদুজ্জামানের স্ত্রী স্কুল থেকে বাসায় ফিরে এসে দরজায় লাগানো তালা ভাঙ্গা দেখতে পান। আলমারির ভেতর নগদ ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা ও ৭ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ছিলো। যা দুর্বৃত্তরা চুরি করে নিয়ে গেছে বলে মো. আসাদুজ্জামানের স্ত্রী পুলিশকে জানিয়েছে।
এই তিনটি চুরির ঘটনা ভিডিও ফুটেজ থাকলেও পুলিশ চোর চক্রকে সনাক্ত করতে পারছেনা। বিভিন্ন এলাকায় ঘটছে ছোট চুরির ঘটনা। চোরেরা প্রায় বিভিন্ন বাড়িতে প্রবেশ করে কিছু না কিছু নিয়ে যাচ্ছে। বেশিরভাগ ঘটনায় থানায় অভিযোগ করা হচ্ছে না। গত ৬ সেপ্টেম্বর শহরের বেজপাড়াস্থ গণপূর্ত মসজিদ থেকে ১২ জোড়া জুতা চুরি হয়েছে। একই দিন পুরাতন স্ট্যান্ড জামে মসজিদেও চুরির ঘটনা ঘটেছে।
এব্যাপারে যশোর নাগরিক অধিকার আন্দোলনের স্বমন্নয়ক মাসুদুজ্জামান মিঠু বলেন, শহর ও শহরতলিতে হঠাৎ করে চুরি-ছিনতাই বেড়েছে। সিসি ক্যামেরায় ফুটেজ থাকলেও পুলিশ চোরদের সনাক্ত করতে ব্যর্থ হচ্ছে। আমার কাছে মনে হচ্ছে পুলিশ আন্তরিকতার সাথে তৎপর হচ্ছে না। তারা অন্য কাজে মনোযোগ বেশি দিচ্ছে। যেকারণে অপরাধীরা সাহস পাচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে পুলিশ তৎপরতা শুরু করেছে বলে জানিয়ে যশোর ডিবি পুলিশের ওসি রুপন কুমার জানান, ভিডিও ফুটেজ দেখে আমরা চোরদের সনাক্ত করার কাজ করছি।