শাহারুল ইসলাম ফারদিন
যশোর শহর ছিল যেন যানজটের নগরী। তাই বেশিরভাগ মানুষকেই গন্তব্যে পৌঁছাতে আধা থেকে এক ঘণ্টা দেরি হয়েছে। যানজটে রিকশা ও ইজিবাইকের চাকা না ঘোরায় বাধ্য হয়ে অনেককে হেঁটে রওনা হতে দেখা যায়। নাগরিকরা বলছেন, সাধারণত ঈদের সময়ও এমন তীব্র যানজট সৃষ্টি হয় না। কিন্তু গতকাল ঢাকা শহরের মতো যানজটের কবলে পড়তে হয়েছে এ শহরের মানুষের।
সূত্র বলছে, যশোর শহরের সড়কগুলোতে অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে রিক্সা, ভ্যান ও ইজিবাইক চলাচল। সড়ক প্রশস্তের তুলনায় যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় যানজটে ভোগান্তি বেড়েছে শহরবাসীর। বিশেষ করে স্কুল শুরু ও ছুটির সময় যানজট তীব্র হয়। ট্রাফিক পুলিশের তখন চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া যেন কোনো উপায় থাকে না। যানজটের কবলে পড়ে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, অভিভাবক, অফিসমুখী মানুষ ও রোগীরা চরম বিপাকে পড়েন। সচেতন মহল বলছেন, নাজুক ট্রাফিক ব্যবস্থা, যথেচ্ছা গাড়ি পার্কিং আর সড়ক দখল করে সভা সমাবেশ যানজটের প্রধান কারণ। এসব নিরসন হলে মানুষ স্বস্তি পাবে।
শহরের দড়াটানা, চিত্রা মোড়, জজকোর্ট মোড়, হাসপাতাল মোড়, কুইন্স হাসপাতালের সামনে, পোস্ট অফিসের সামনে, চিত্রার মোড়, চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড, চৌরাস্তা ও মনিহার এলাকার যানজটের চিত্র অনেক পুরনো। শহরে রিক্সা, ভ্যান ও ইজিবাইকের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে এ স্থানগুলোতে যানজট তীব্র আকার ধারণ করেছে। এর বাইরে যানজটের ঢেউ যেন আছড়ে পড়ছে শহরের অলিগলিতেও। যেসব রাস্তায় এতদিন যানজট বাধেনি সেখানেও এখন রিক্সা-ইজিবাইকের জটলা বাধে। সরেজমিনে বৃহস্পতিবার দিনব্যাপি ওইসব এলাকা ছাড়াও দড়াটানা টু পালবাড়ি, ঘোপ সেন্ট্রাল রোড, জেলখানা রোড, ঘোপ নওয়াপাড়া রোড, নিউমার্কেট এলাকাসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ রোড সমূহ ছিলো দীর্ঘ যানজট। মূলত শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ও অলিগলি ও সংযোগ সড়কগুলো ঘুরে দেখা মেলে এমন যানজটের দৃশ্য। শহরের বকুলতলা থেকে হাসপাতাল মোড় ও নিকুঞ্জের মোড়, বকুলতলা থেকে জেল রোড এবং বকুলতলা থেকে চৌরাস্তা এমনকি আরএন রোড পর্যন্ত তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। আর এ সময়ে ছোটখাটো যানবাহনে চড়ে গন্তব্যে যাবার সময় যানজটে পড়ে আটকে থাকে স্কুল-কলেজ ও অফিস, হাসপাতালগামীসহ জনসাধারণ।
যশোর পৌরসভার হিসাব অনুযায়ী শহরে পা চালিত (প্যাডেল) অনুমোদিত রিকশার সংখ্যা ১৫শ’র কিছু বেশি। অনুমোদিত ইজিবাইকের সংখ্যা ২ হাজার ৯৭৫ ও স্মার্ট রিকশার সংখ্য ২৯ টা। অথচ অনুমোদনবিহীন রিকশা, ইজিবাইক ও ব্যাটারি চালিত রিকশা প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার।
অভিযোগ রয়েছে, ট্রাফিক সার্জেন্টরা ব্যস্ত থাকেন বছরে মামলার টার্গেট পূরণে। শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়ে মোটর সাইকেলের কাগজপত্র পরীক্ষা নিরীক্ষার নামে দুই-এক সার্জেন্ট প্রতিনিয়তই মোটর সাইকেল চালকদের হয়রানি করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অন্যান্য যানবাহন প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস. থ্রিহুইলার, বাস, ট্রাক আটকে ট্রাফিক পুলিশ কোন অভিযান পরিচালনা করতে দেখা যায় না। মোটর সাইকেলের কাগজপত্র ঠিক থাকলেও ট্রাফিক সিগন্যাল অমান্য, ওভার লোডিং বা ভিন্ন ধারায় মামলা দেয়া হয়। শহরের নিয়মিত চলাচলকারী বেসরকারি ক্লিনিকের ম্যানেজার জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, এর আগে এমন যানজট চোখে পড়েনি। দিনব্যাপি যানজট লেগেছিলো। একদিকে গরম অন্যদিকে যানজট। দুপুরে ব্যাংকের কাজে বাহিরে বের হয়ে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিলাম। শহরতলীর বিরামপুরের উজ্জল রায় জানান, সকালে বড়বাজার থেকে বাজার কাজ শেষে তীব্র যানজটের মধ্যে পড়েন। অপর একজন শহরের কাজীপাড়া এলাকার বাসিন্দা ও একটি বেসরকারি অফিসের কর্মকর্তা এনামুল হক জানান, বিকেল ৫টার দিকে অফিস থেকে বের হয়ে দেখেন সবগুলো রাস্তায় কেবলই মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল, ইজিবাইক, রিকশা, ভ্যান, প্রাইভেট কারসহ নানান যানবাহনে ঠাসা। তার গন্তব্য কাজীপাড়া হলেও ইজিবাইকে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর অবস্থা বেগতিক দেখে হাঁটতে শুরু করেন তিনি। শহরের জেস টাওয়ারের সামনে থেকে দড়াটানা পর্যন্ত হেঁটে গিয়ে একটি রিকশায় ওঠেন। কিছুদুর পর ফাতেমা হাসপাতাল পার হলে আবার যানজটে পড়েন তিনি। তিনি বলেন আজ (গতকাল) শহরের এমএম আলী রোড থেকে বিকেল ৫টায় রওনা দিয়ে বাসায় ফিরতে অন্য দিনের চেয়ে বেশ দেরি হয়েছে।
নাগরিক অধিকার আন্দলনের সমনয়ক শেখ মাসুদুর রহমান মিঠু জানান, শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। সড়ক আটকিয়ে রাস্তায় গাড়ি পার্কিংয়ের কারণে যানজট প্রকট আকার ধারণ করেছে। এখনই সঠিক ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে শহরে যানজট মাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।
যশোর পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী কামাল হোসেন বলেন, শহরে যানজট আগের থেকে বৃদ্ধি পেয়েছে সত্য। কয়েকদিন আগেও অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। তারপরও হঠাৎ এমন যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নেব।
জেলা ট্রাফিক ইন্সপেক্টর শুভেন্দু কুমার মুন্সী বলেন, আমরা পুলিশেরা জনগণের শান্তি স্বস্তি দিতে মাঠে রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে তাদের সেবায় কাজ করে যাচ্ছি। শহরে অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।