নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোর-১ (শার্শা-বেনাপোল) আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাবেক দফতর সম্পাদক মফিকুল ইসলাম তৃপ্তির মনোনয়ন ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে সোমবার বিকেলে শার্শা বল্ডফিল্ড যেন রূপ নেয় এক আবেগঘন জনসমুদ্রে। চোখে জল, কণ্ঠে কান্না আর হৃদয়ে ক্ষোভ নিয়ে হাজার হাজার নারী-পুরুষ, বয়োবৃদ্ধ ও তরুণ নেতাকর্মী প্রিয় নেতার পাশে দাঁড়াতে জড়ো হন মাঠে।
সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) বিকেলে তৃপ্তি মাঠে প্রবেশ করতেই মুহূর্তে চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে কান্নার শব্দ। অনেকেই অশ্রুসজল চোখে তাকে জড়িয়ে ধরেন, কেউ কেউ কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন— “আমাদের নেতা আপনিই, আমরা আপনাকেই চাই।” আবেগে নিজেও সংযত থাকতে পারেননি মফিকুল ইসলাম তৃপ্তি। চোখের জল মুছতে মুছতে তিনি নেতাকর্মীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানান এবং দলের সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে নির্বাচন আচরণবিধি মেনে চলার কথা বলেন।
দেড় মাসের গণসংযোগে তৈরি হয়েছিল দৃঢ় বিশ্বাস
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোর-১ আসনে গত ৩ নভেম্বর বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন পান মফিকুল ইসলাম তৃপ্তি। এরপর প্রায় দেড় মাস ধরে শার্শা উপজেলার গ্রাম থেকে গ্রাম, হাট থেকে বাজার—সবখানেই ধানের শীষের পক্ষে চালান ব্যাপক গণসংযোগ ও পথসভা। এসব কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
কেন্দ্রীয় বিএনপির অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ও মিডিয়া সেলেও তার প্রচারণার খবর নিয়মিত প্রকাশিত হওয়ায় স্থানীয় পর্যায়ে তৈরি হয় দৃঢ় বিশ্বাস—চূড়ান্ত প্রার্থী হচ্ছেন তৃপ্তিই।
হঠাৎ নাটকীয় পরিবর্তনে ভেঙে পড়ে কর্মীরা
কিন্তু ২৪ ডিসেম্বর হঠাৎ করেই দৃশ্যপট পাল্টে যায়। যশোর-১ আসনে বিএনপির চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হয় শার্শা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান লিটনকে। অথচ এই আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন চারজন—তৃপ্তি ছাড়াও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হাসান জহির ও সাবেক সভাপতি খায়রুজ্জামান মধু।
মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষদিনে তৃপ্তিসহ অন্য প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র দাখিল করায় শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত পরিবর্তনের আশা জিইয়ে রাখেন সমর্থকেরা।
“তারেক রহমানের কাছে আকুতি”—মাঠজুড়ে একটাই দাবি
সোমবার বিকেলে বেনাপোল বল্ডফিল্ডে সমবেত নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ একযোগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডের কাছে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানান।
কাঁদতে কাঁদতে বক্তব্য দিতে গিয়ে মফিকুল ইসলাম তৃপ্তি বলেন,
“আমি দলের একজন কর্মী। দলের সিদ্ধান্ত মেনেই চলব। তবে আপনাদের ভালোবাসাই আমার শক্তি।”
এ সময় সমবেত জনতা একসঙ্গে স্লোগান তুলে বলেন—
“আমরা আপনার সাথেই আছি, তারেক রহমানের কাছে মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার দাবি জানাচ্ছি।”
স্থানীয় নেতাদের কণ্ঠেও একই সুর
বেনাপোল পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের ভারত বলেন,
“শার্শা ও বেনাপোলের মানুষের সঙ্গে মফিকুল ইসলাম তৃপ্তির আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে। তার মনোনয়ন বাতিল হবে—এটা কেউ কল্পনাও করেনি। তাই সাধারণ মানুষই আজ রাস্তায় নেমে দাবি জানাচ্ছে।”
শার্শা উপজেলা যুবদলের সদস্যসচিব ইমদাদুল হক ইমদাদ বলেন,
“এই আসনে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য প্রার্থী তৃপ্তি। হঠাৎ করে তাকে বাদ দেওয়ায় নেতাকর্মীরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। আমরা বিশ্বাস করি, দলের হাইকমান্ড বিষয়টি মানবিকভাবে পুনর্বিবেচনা করবেন।”
আবেগের রাজনীতি নাকি সিদ্ধান্তের রাজনীতি?
শার্শা-বেনাপোলের মাঠে সোমবার বিকেলের এই দৃশ্য আবারও প্রশ্ন তুলে দিল—রাজনীতিতে কি কেবল সাংগঠনিক হিসাব, নাকি তৃণমূলের আবেগ ও জনপ্রিয়তাও সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলবে?
এ প্রশ্নের উত্তর এখন তাকিয়ে আছে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের দিকে।
