সুনীল ঘোষ: যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ‘স্বেচ্ছায়’ কর্মরত ৯০ জনের মধ্যে ৭৪ জনকে ছাঁটাই করা হচ্ছে। যাচাই-বাছাই করে অধিক যোগ্যতা সম্পন্ন ১৬ জনকে রেখে বাকিদের ছাঁটাই করা হবে। এ জন্য ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আবেদনপত্র জমা পড়েছে ৯৪টি। তবে যাচাই-বাছাই বা নিয়োগ কার্যক্রম কোন প্রক্রিয়ায় হবে, তা নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা। অভিযোগ উঠেছে আর্থিক দেনদরবারের। খোদ তত্ত্বাবধায়ক ও নিয়োগ কমিটির বক্তব্যে গরমিল পাওয়া গেছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাসেবা কার্যক্রমে স্বেচ্ছায় কাজ করে আসছেন ৯০ জন। বিনা বেতনের এসব কর্মচারী সরকারি সুযোগ সুবিধা পান না। রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে বকশিস আদায় করেন। যা দিয়ে চলে তাদের জীবনজীবিকা। স্বেচ্ছায় কর্মরত কর্মচারী নামে পরিচিতদের মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে রয়েছে অনৈতিক উপায়ে রোজগারের অভিযোগ। রোগী ও তাদের স্বজনরা বকশিস দিতে না চাইলে হতে হয় হেনস্তার শিকার।
হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার ওবাইদুর রহমান কাজল জানান, বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। মে মাসে হাসপাতাল পরিচালনা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয় ১৬ জনকে রেখে অন্যদের ছাঁটাই করার। এ লক্ষ্যে হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের ডা. আব্দুর রহিমকে সভাপতি ও আরএমও ডা. আব্দুস সামাদকে সদস্য সচিব করে ৫ সদস্যের যাচাই-বাছাই কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে ডা. তৌহিদুর রহমান, ওয়ার্ড মাস্টার ওবায়দুর রহমান কাজল ও অফিস সহকারী আজগর আলীকে।
এরই মধ্যে আবেদনপত্র গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। আবেদনপত্র গ্রহণে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি কিংবা নোটিশ জারি করা হয়েছিল কি-না প্রশ্নের জবাবে ওয়ার্ড মাস্টার কাজল বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে ৫ জুন পর্যন্ত ৯৪ জন আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন বলে জানতে পেরেছি। বিস্তারিত জানতে তিনি কমিটির কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন। তিনি আরও বলেন, অর্থ-বাণিজ্যের যে অভিযোগ উঠেছে তা সঠিক না। নো ওয়ার্ক নো পে কর্মচারী নিয়োগ বিষয়ে তিনি বলেন, স্বেচ্ছায় কর্মরত কর্মচারী এবং ‘নো ওয়ার্ক নো পে’র কর্মচারী এক না। সাধারণত জুনের শেষ দিকে ঠিকাদারের মাধ্যমে ‘নো ওয়ার্ক নো পে’র কর্মচারী নিয়োগ করা হয়। তিনি বলেন, স্বেচ্ছায় কর্মরত কর্মচারী নিয়োগ সম্পন্ন করবে গঠিত যাচাই-বাছাই কমিটি।
যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য সচিব ডা. আব্দুস সামাদ বুধবার দৈনিক কল্যাণকে বলেন, জুনের শেষে ঠিকাদারের ওপর দায়িত্ব দিবো। ঠিকাদার লোক নিয়োগ করবেন। তাহলে যাচাই-বাছাই কমিটির কাজ কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব কথা ফোনে হয় না। অফিসে আসেন, কথা হবে বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
তত্ত্বাবধায়ক আখতারুজ্জামান বলেন, আমরা নিয়োগ দিচ্ছি না। স্বেচ্ছায় কর্মরত কর্মচারীদের দ্রুতই ছাঁটাই করা হবে। যাচাই-বাছাই কমিটি গঠনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিমন্ত্রী মহোদয় টিকেটের দাম বাড়িয়ে ও ব্যক্তি পর্যায় থেকে তহবিল সংগ্রহ করে বেতনের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু জানিয়ে দিয়েছি- এভাবে সম্ভব না। আবেদনপত্র গ্রহণের উদ্দেশ্য কী জানতে চাইলে তিনি সদুত্তর দিতে পারেননি।
বেশ কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, স্বেচ্ছায় কর্মরতদের বাইরেও আবেদনপত্র গ্রহণ করা হয়েছে। তারা রাজনৈতিক নেতাদের লোক দাবি করে সূত্র জানায়, তাদের চাকরি চূড়ান্ত হয়ে গেছে। এরই মধ্যে উচ্চ মহল থেকে তদ্বির আসছে বলে গুঞ্জন উঠেছে। চাকরি পাইয়ে দিতে মোটা অংকের টাকা দাবির অভিযোগও রয়েছে।
এরআগে ২০১৯ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল কালাম আজাদ প্রথমবারের মতো দান-অনুদান নিয়ে স্বেচ্ছায় কর্মরত ১৮ কর্মচারীকে এক মাসের বেতন দেন। সে সময় তারা ৩ থেকে ৬ হাজার টাকা বেতন পেয়েছিলেন। এক মাসের বেতন প্রদানের পর তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল কালাম আজাদ অবসর গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে আর বেতন পাননি কেউ।