এ্যান্টনি অপু
যশোর শহরের সড়কগুলোতে অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে রিকশা, ভ্যান ও ইজিবাইক চলাচল। সড়ক প্রশস্তের তুলনায় যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় যানজটে ভোগান্তি বেড়েছে নাগরিকদের। বিশেষ করে স্কুল শুরু ও ছুটির সময় যানজট তীব্র হয়। ট্রাফিক পুলিশের তখন ‘চেয়ে চেয়ে দেখা’ ছাড়া যেন কোন উপায় থাকে না।
শহরের দড়াটানা, চিত্রা মোড়, জজকোর্ট মোড়, চৌরাস্তা ও মনিহার এলাকার যানজটের চিত্র অনেক পুরনো। শহরে রিকশা, ভ্যান ও ইজিবাইকের সংখ্যা দিনদিন বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে এস্থানগুলোতে যানজট তীব্র আকার ধারণ করেছে। এর বাইরে যানজটের ‘ঢেউ’ যেন আছড়ে পড়ছে শহরের অলিগলিতেও। যেসব রাস্তায় এতোদিন যানজট বাধেনি সেখানেও এখন রিকশা-ইজিবাইকের জটলা বাধে।
সরেজমিনে গত তিন দিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ও অলিগলি ও সংযোগ সড়কগুলো ঘুরে দেখা মেলে এমন যানজটের দৃশ্য। সকাল থেকে যানজট পরিস্থিতি তেমন গুরুতর না হলেও বেলা ১১টার পর থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত শহরের বকুলতলা থেকে হাসপাতাল মোড় ও নিকুঞ্জের মোড়, বকুলতলা থেকে জেলরোড এবং বকুলতলা থেকে চৌরাস্তা এমনকি আরএন রোড পর্যন্ত তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। আর এ সময়ে ছোটখাটো যানবহনে চড়ে গন্তব্যে যাবার সময় যানজটে পড়ে আটকে থাকে স্কুল-কলেজ ও অফিস, হাসপাতালগামীসহ জনসাধারণ। অন্যদিকে ট্রাফিক পুলিশ প্রধান সড়কগুলোতে ইজিবাইক এবং রিকশার চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে এ সকল ইজিবাইক ও রিকশা শহরের অলিগলি এবং সংযোগ সড়কগুলো দিয়ে যাতায়াত করে থাকে। এ সকল অলিগলিতেও অতিরিক্ত মাত্রায় তিন চাকা ও দুই চাকার যানবাহন চলাচল করায় যানজট তো দূরের কথা পথচারীদের চলাচলেই কষ্টসাধ্য হয়।
পথচারীরা জানান, যশোর জেনারেল হাসপাতালসহ অন্য ক্লিনিকগুলো শহরের ভেতরে। আর এ সকল হাসপাতালে দূর-দূরান্ত থেকে জরুরি রোগীরা এ্যাম্বুলেন্সযোগে আসে। বাইরে থেকে শহরের মধ্যে প্রবেশ করতে চরম বেগ পেতে হয় রোগীবাহী এ্যাম্বুলেন্স গাড়িকে। যানজটে পড়ে ইমার্জেন্সি হুটার সাইরেন দিলেও যানজট ঠেলে দ্রুত হাসপাতালমুখী হওয়া যায় না। ফলে গুরুতর রোগীর জীবনও সংকটে পড়ে।
শহরের কাজীপাড়া এলাকার প্রাইভেটকার চালক বাবুল রহমান বলেন, প্রতিদিন বেলা ১১ টার দিকে চিকিৎসকের গাড়ি চালিয়ে হাসপাতালের দিকে যেতে হয়। এমন কোন দিন নেই যে যানজট ভোগান্তি ছাড়া হাসপাতালে পৌছানো গিয়েছে। বিশেষ করে ইজিবাইক এবং রিকশার কারণে এ যানজটের সৃষ্টি হয়।
বেসরকারি এক ব্যাংকের কর্মচারী আব্দুর রব বলেন, সকালে মেয়েকে স্কুলে দিয়ে তারপর আরএন রোডে অফিসে যায়। যদি যানজট ছাড়া স্বাভাবিকভাবে চলাচল করা যায় তাহলে সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১৫ মিনিট লাগে। কিন্তু রাস্তার পরিস্থিতি দেখে এখন আমার ৪৫ মিনিট আগে বাড়ি থেকে বের হতে হয়। তারপর তো যানজটে পড়লে পিছন দিয়ে, আশপাশ দিয়ে ইজিবাইক, রিকশা আঘাত করে মোটরসাইকেলের অবস্থা বেহাল করে দেয়।
দড়াটানা মোড়ের এক ফল বিক্রেতা বলেন, কমিউনিটি পুলিশ কিছু কিছু রিকশা এবং ইজিবাইককে বেপরোয়া চালচল করতে দেয়। সাংবাদিকরা দু’একবার লেখালেখি করলে কর্তৃপক্ষ কঠিন হয়। আবার এক সপ্তাহ পর পূর্বের অবস্থায় যায়। গত এক মাস ধরে শহরের যানজট পরিস্থিতি অনেক খারাপের দিকে চলে গেছে।
যশোর পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী কামাল হোসেন বলেন, শহরে যানজট আগের থেকে বৃদ্ধি পেয়েছে। দীর্ঘদিন অভিযান পরিচালনা না করার কারণে হঠাৎ এমন যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নিব।
যশোরের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর শুভেন্দু কুমার বলেন, যশোর শহরে অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে। দড়াটানা মোড়ে অস্থায়ী ডিভাইডার দেয়া হয়েছে। এটার সুফল যাচাই করা হচ্ছে। পরবর্তীতে এখানে স্থায়ীভাবে ডিভাইডার দেওয়া হবে। এছাড়া ইজিবাইক এবং রিকশার বিরুদ্ধে অভিযানের বিষয়টি যশোর পৌরসভা দেখে।