আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
রবার্ট এফ কেনেডির কন্যা ও জন এফ কেনেডির ভাগ্নি কেরি কেনেডি ঢাকার বিতর্কিত আয়নাঘর পরিদর্শনে গিয়ে ব্যারিস্টার মীর আহমদ বিন কাশেমের করুণ বাস্তবতার মুখোমুখি হন
যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় মানবাধিকার সংস্থা আরএফকে হিউম্যান রাইটস-এর প্রেসিডেন্ট কেরি কেনেডি সম্প্রতি ঢাকার ভয়ঙ্কর গোপন নির্যাতন কেন্দ্র আয়নাঘর (Mirror House) পরিদর্শন করেছেন। তার সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার মীর আহমদ বিন কাশেম আরমান, যিনি সেখানে দীর্ঘ ৮ বছর অন্ধকারে ও বন্দিদশায় কাটিয়েছেন।
কেরি কেনেডি ১৩ মে মঙ্গলবার আয়নাঘর পরিদর্শন করেন। ১৪ মে সকালে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ফেসবুকে এক আবেগঘন পোস্টের মাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশ করেন।
আয়নাঘর: গোপন নির্যাতনের প্রতীক
ঢাকার এই ‘আয়নাঘর’ নামক স্থানটি বহুদিন ধরে সরকারবিরোধী ব্যক্তিদের গোপনে আটকে রেখে নির্যাতনের জন্য বিখ্যাত। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, এখানে বহু ব্যক্তি বছরের পর বছর গুম, অমানবিক নির্যাতন ও নজিরবিহীন নিঃসঙ্গ বন্দিদশার শিকার হয়েছেন।
৮ বছরের বন্দিজীবন: ব্যারিস্টার মীর আহমদ বিন কাশেমের বাস্তবতা
ব্যারিস্টার মীর আহমদ বিন কাশেম, যিনি যুক্তরাজ্যে আইনশাস্ত্রে শিক্ষা লাভ করেন, ছিলেন বাংলাদেশের একজন রাজনৈতিক বন্দি। তাকে ২০১৬ সালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তুলে নিয়ে যায় এবং এরপর দীর্ঘদিন তার কোনো খোঁজ মেলেনি।
ফেসবুক পোস্টে শফিকুল আলম জানান, আয়নাঘরে ফিরে গিয়ে নিজের সেই বেদনাদায়ক স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মীর আহমদ। তিনি বলেন, “এখানেই আমি প্রতিনিয়ত মৃত্যুর অপেক্ষায় দিন কাটিয়েছি।” পাশে থাকা কেরি কেনেডি আবেগপ্রবণ হয়ে তাকে সান্ত্বনা দেন।
কেরি কেনেডি: মানবাধিকার রক্ষায় এক সাহসী কণ্ঠ
কেরি কেনেডি হচ্ছেন সাবেক মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল রবার্ট এফ কেনেডির কন্যা এবং সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির ভাগ্নি। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বৈশ্বিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সোচ্চার রয়েছেন এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে নির্যাতনের শিকারদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করা হয়, কেরি কেনেডির নেতৃত্বে বিশ্বজুড়ে যে প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়েছিল, তা ব্যারিস্টার মীর আহমদ বিন কাশেমকে আয়নাঘরের মতো গোপন বন্দিশিবিরে জীবিত রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দা ও বৈশ্বিক আহ্বান
শফিকুল আলম আরও জানান, কেরি কেনেডি বাংলাদেশের বর্তমান শাসনব্যবস্থায় বিশেষ করে গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনার শাসনামলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নানা ঘটনা আন্তর্জাতিক মহলের সামনে তুলে ধরেছেন। তিনি নৃশংসতা, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণসহ একাধিক বিষয়ে জোরালো প্রতিবাদ করে যাচ্ছেন।
আন্তর্জাতিক নজরদারি জোরদারের আহ্বান
কেরি কেনেডির এই সফর আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি করেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তিনি আহ্বান জানিয়েছেন—বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধে আরও তদারকি ও চাপ প্রয়োগ প্রয়োজন।