নিজস্ব প্রতিবেদক, মনিরামপুর
যশোরের মনিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক ও ঝাঁপা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শামসুল হক মন্টুকে লাঞ্চিতর অভিযোগ উঠেছে। গতকাল রোববার দুপুরে উপজেলা পরিষদের নতুন ভবনে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান উত্তম চক্রবর্তীর নেতৃত্বে যুবলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী তাঁকে লাঞ্চিত করেছেন বলে অভিযোগ।
সম্প্রতি একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাতকারে চেয়ারম্যান শামসুল হক মন্টু পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্যের বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতির নানা অভিযোগ তোলেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে যুবলীগের কয়েকজন তাঁকে লাঞ্চিত করেছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে লাঞ্চিতোর ঘটনার প্রতিবাদে আজ সোমবার বিকেলে ঝাঁপা ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে মঞ্চ করে প্রতিবাদ সমাবেশ ডাকে উপজেলা আওয়ামী লীগের একটি অংশ। একই সাথে প্রতিমন্ত্রীকে নিয়ে কটুক্তি করার প্রতিবাদে পরিষদের অদূরে রাজগঞ্জ বাজারের বটতলা চত্বরে স্থানীয় যুবলীগ একটি প্রতিবাদ সমাবেশ ডাকে। পরে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের বাঁধায় দু পক্ষের সমাবেশ পণ্ড হয়ে যায়।
মঞ্চে সমাবেশ করতে না পেরে পরে ইউনিয়ন পরিষদের প্রধান ফটকে ও রাজগঞ্জ বাজারে তিন দফা খণ্ডখণ্ড আলোচনা সভা ও মিছিল করেছেন শামসুল হক মন্টুর ডাকে আসা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

এসময় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমা খানম, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মিকাইল হোসেন, চেয়ারম্যান শামসুল হক মন্টু, উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আবুল বাশার, উপজেলা যুবলীগের সদস্য শিপন সরদার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
চেয়ারম্যান মন্টু বলেন, রোববার বেলা ১১টার দিকে দাপ্তরিক কাজে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) দপ্তরে গেলে আমার নম্বরে একটি ফোন আসে। ফোনে আমাকে জানানো হয় বাইরে বের হলে আমার উপরে হামলা হবে। আমি বিষয়টি থানার ওসিকে জানালে তিনি পুলিশ পাঠান। এরমধ্যে পিআইও’র দপ্তর থেকে বের হলে যুবলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী আমাকে হামলার উদ্দেশে ঘিরে ধরে উদ্ধত আচরণ করে। পরে পুলিশ এসে নিরাপত্তা দিয়ে আমাকে এলাকায় পৌঁছে দেয়।
চেয়ারম্যান বলেন, এ ঘটনার প্রতিবাদে আজ সোমবার আমার পরিষদ চত্বরে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ডাকা হয়। বিকেলে নেতাকর্মীরা পরিষদে আসার সময় পুলিশের বাঁধার মুখে পড়ে। আমরা চেষ্টা করেও পুলিশের আপত্তিতে সমাবেশ করতে পারিনি।
চেয়ারম্যান মন্টুর অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক উত্তম চক্রবর্তী বাচ্চু দৈনিক কল্যাণকে বলেন, মন্টু চেয়ারম্যান লাঞ্চিত হয়েছে কিনা জানা নেই। কয়েকদিন আগে একটি চ্যানেলে তিনি উল্টোপাল্টা কিছু কথা বলেছেন। শুনেছি, সেটা নিয়ে কয়েকজনের সাথে তাঁর বাকবিতণ্ডা হয়েছে।

এদিকে আজ সোমবার বিকেলে রাজগঞ্জ অঞ্চলে আওয়ামীলীগ ও যুবলীগের সমাবেশের খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে সেখানে অবস্থান করেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মনিরুজ্জামান। পরে সেখানে হাজির হন সহকারী কমিশনার (ভূমি) আলী হাসান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকির হোসেন।
এসিল্যান্ড আলী হাসান বলেন, পরিস্থিতি শান্ত রাখতে আমরা রাজগঞ্জে অবস্থান করেছি।
সম্প্রতি একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাতকারে শামসুল হক মন্টু প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্যের বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতির নানা অভিযোগ তোলেন। সাক্ষাতকারে চেয়ারম্যান মন্টু দাবি করেন, স্বপন ভট্টাচার্য্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর মনিরামপুরের পশ্চিমাঞ্চল তথা রাজগঞ্জ এলাকায় দৃশ্যমান কোন উন্নয়ন হয়নি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পিওন নিয়োগ দিতে হলে প্রতিমন্ত্রী ও তাঁর স্ত্রী ছেলেকে আলাদাভাবে টাকা দিতে হয়। এছাড়া ২০২১ সালের ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীক পাওয়ার পর প্রতিমন্ত্রী তাঁর অনুসারীকে দিয়ে নৌকার বিরুদ্ধে ভোট করিয়েছেন।
যুবলীগ নেতা ইমরান খান পান্না বলেন, প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বাজে বক্তব্য দেওয়ায় আমরা যুবলীগ আজ রাজগঞ্জ বাজারে প্রতিবাদ সমাবেশ ডেকেছিলাম। পরে প্রশাসনের অনুরোধে আমরা সমাবেশ বন্ধ করে সরে এসেছি।
আরও পড়ুন:যশোর করোনারি কেয়ারে অন্ধকারে বসে রোগী সেবা