কল্যাণ ডেস্ক
পোশাক শিল্পের শত শত কোটি টাকার রপ্তানিযোগ্য পণ্য গত দেড় যুগে কাভার্ডভ্যান থেকে চুরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন তৈরি পোশাক মালিক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান। তিনি বলেন,
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সংঘবদ্ধ চক্রের কবলে পড়ে রপ্তানি পোশাকের পরিবর্তে কার্টনের মধ্যে দেওয়া হয় ঝুট বা মাটি। এ নিয়ে ক্রেতারা প্রতিদিনই অভিযোগ করছেন।
গতকাল মঙ্গলবার সংগঠনটির নিজস্ব কার্যালয়ে পোশাক শিল্পে আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ে এক মতবিনিময় সভায় বিজিএমইএর সভাপতি এসব তথ্য তুলে ধরেন। এ সময় সমস্যা প্রতিকারে ৫টি প্রস্তাব বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়।
২০২২ সালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ২২টি চুরির ঘটনা ঘটেছে জানিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘চক্রগুলো পরিকল্পিতভাবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পোশাক আমদানি-রপ্তানির পণ্য কাভার্ডভ্যানের ড্রাইভারের যোগসাজশে চুরি করে।
পরে পথিমধ্যে ওয়্যারহাউস, ইটের ভাটা, গাড়ির গ্যারেজে কাভার্ডভ্যানটি নিয়ে সুকৌশলে প্রতিটি কার্টন থেকে পণ্য সরিয়ে সেখানে সমপরিমাণ ঝুট/মাটি দিয়ে কার্টনের ওজন ঠিক রেখে চট্টগ্রাম কনটেইনার ডিপোতে পাঠানো হয়। ১-২ মাস পর ক্রেতার হাতে কার্টন পৌঁছানোর পর আমরা জানতে পারি, পোশাকের পরিবর্তে তারা পেয়েছেন ঝুট-মাটি। এতে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। আর আমরা ক্রেতা হারাচ্ছি, যা কাম্য নয়।
ফারুক হাসান জানান, গত জানুয়ারির শুরুতে ব্রাজিল থেকে ভিডিওর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট রপ্তানিকারককে জানানো হয়—প্রায় বেশিরভাগ কার্টনের ৩০-৩৫ ভাগ পোশাক তারা বুঝে পাননি। এই শিপমেন্টে ২৬ হাজারের বেশি পোশাক ছিল।
সেবার প্রায় ৮ হাজারের মতো পোশাক চুরি হয়। এ ঘটনা জানানো হলে এই চক্রের মূল হোতাসহ চারজনকে গ্রেপ্তার ও চুরি করা পণ্য জব্দ করা হয়। চক্রের প্রধান হোতা শাহেদের বিরুদ্ধে ১৭-১৮টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে দুটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও আছে। ধরা পড়ার পর শাহেদ জানিয়েছেন, ক্রেতাদের স্যাম্পল দেখে তারা সেই স্যাম্পলের বাজারদর যাচাই করেন। পণ্যের মূল্যমান ১২ লাখ থেকে ১৫ লাখ টাকার মধ্যে হলে তারা এ ধরনের চুরির অভিযান চালায়।
তিনি আরও বলেন, শুধু শাহেদ নয়, গার্মেন্ট পণ্য চুরির জগতে আরও মাস্টারমাইন্ড ও চক্র রয়েছে। যারা একই কাজ করছে। পরবর্তী সময়ে ধরা পড়লেও প্রায় কোনো শাস্তি ভোগ না করে আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে বেরিয়ে আসছে। এই অপরাধীদের কারণে আমাদের পোশাকশিল্প বড় ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
ফারুক হাসান বলেন, পোশাকশিল্পের অসৎ কর্মচারী এসব অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে। যারা চক্রগুলোর সঙ্গে যোগসাজশ করে পোশাকশিল্পের রপ্তানি পণ্য লোপাট করছে, তাদের আইনের আওতায় আনা হোক। এ ছাড়া দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক। এ ব্যাপারে যেন কাউকে কোনো ছাড় দেওয়া না হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় সব সংস্থার প্রতিনিধি কমিটির প্রস্তাবনা বাস্তবায়নের দাবি জানান ফারুক হাসান। প্রস্তাবগুলো হলো–ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের কাজ মার্চের মধ্যে সম্পন্ন ও জড়িতদের গ্রেপ্তার করা।
প্রয়োজনে আইন সংশোধন করে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা। এসব পণ্য ক্রেতাদের উৎস নিশ্চিত করতে হবে। চক্র ধরতে পুলিশের সঙ্গে গোয়েন্দাদেরও কাজে লাগাতে হবে। কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতি, ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতি, কাভার্ডভ্যান চালক এবং হেলপারদের ডাটাবেজ প্রস্তুত করে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে শেয়ার করার ব্যবস্থা রাখতে হবে।
ফারুক হাসান বলেন, রপ্তানিমুখী পোশাক চুরির ঘটনা জাতীয় অর্থনীতিতে অন্যান্য ঘটনার তুলনায় অনেক বেশি প্রভাব ফেলে। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে থাকলে বিদেশিরা আমাদের দেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, যা অর্থনীতির জন্য মঙ্গলজনক নয়।’
এ সময় উপস্থিতি ছিলেন, সিনিয়র সহসভাপতি এস এম মান্নান কচি, সহসভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম, পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল প্রমুখ।
আরও পড়ুন: নির্বাহী পরিচালক পদে পদোন্নতি পেলেন মাকসুদা বেগম
১ Comment
Pingback: আট ব্যাংকে প্রভিশন ঘাটতি ১৯ হাজার কোটি টাকা