সুনীল ঘোষ: রমজানের শুরুতে সিট কাপড়ের দোকানে বেচাকেনা শুরু হয়ে গেছে। শনিবার সিট কাপড়ের দোকানে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় ছিল। তারা কাপড় ক্রয় করে পোশাক তৈরির জন্য দর্জি বাড়িতে যাচ্ছেন। বিরতিহীন সেলাই মেশিনের যান্ত্রিক শব্দ বলছে, দম ফেলার ফুরসত নেই কারিগরদের। নতুন নতুন ফ্যাশনের পোশাক তৈরির অর্ডার পাচ্ছেন টেইলার্স মালিকরা। এসব পোশাক বানাতে বেশ হিমসিম খেতে হচ্ছে কারিগরদের। রোববার যশোর কালেক্টরেট মার্কেটে সরেজমিনে গিয়ে এই চিত্র দেখা গেছে।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল তখন ৪টা। কালেক্টরেট মার্কেটে ক্রেতার সমাগম ছিল একদমই কম। সিট কাপড়ের দোকানগুলো ছিল প্রায় ক্রেতা শূন্য। কারণ জানতে কথা হয় বেশ কয়েকটি সিট কাপড় বিক্রেতার সাথে। সিকদার ক্লোথ স্টোরের মালিক নুরুল ইসলাম জানান, শনিবার পর্যন্ত আশানুরুপ বেচাবিক্রি হয়েছে। রমজান শুরুর আগেই সিট কাপড় কেনার কাজ শেষ করেছেন অনেকে। তিনি বলেন, এখন মহাব্যস্ত দর্জিপাড়া।
শাপলা বস্ত্রালয়ের মালিক উজ্জ¦ল হোসেন দৈনিক কল্যাণকে জানান, এবার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। গত মাসজুড়ে সিট কাপড়ের ভালো বেচাকেনা হয়েছে। এর আগের বছরগুলোতে ১৫ রোজার আগে সিট কাপড়ের বেচাবিক্রি তেমন হতো না। কারণ হিসেবে তিনি মনে করেন, শেষ মুহূর্তে টেলার্সে অর্ডার নেয়া হয় না। এ কারণে আগে-ভাগে সিট কাপড় কেনার কাজ শেষ করেছেন অনেকে। তবে রমজান মাসজুড়ে আরো কিছু সিট কাপড় বিক্রি হবে বলে মনে করেন প্রতিষ্ঠান মালিক উজ্জ¦ল।
বেডিং হাউসের মালিক জাকির হোসেন বলেন, রোজা শুরুর আগে এক দফা বেচাবিক্রি হয়ে গেছে। মার্চ জুড়েই অধিকাংশ সিট কাপড়ের দোকানে ভালো বেচাকেনা হয়েছে। ঈদের ১০-১২ দিন আগে আরো কিছু মানুষ কেনাকাটা করবেন।
বলাকা টেইলার্সে গিয়ে দেখা যায় বিদ্যুৎ চালিত টেইলার্স মেশিনের শব্দে কাঁপছে ঘর। কাজের ফাঁকে কারিগর মনির, বুলবুল ও আলাউদ্দিন জানান, দিন-রাত কাজ করেও সময় মতো ডেলিভারি দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। যা অর্ডার পাওয়া গেছে, তাই বানিয়ে শেষ করা যাচ্ছে না। টেইলার্স মালিক ইনামুল কবীর নিজেও টেইলার্স মাস্টার। তারা জানান, টেইলার্সটিতে ৫ জন কারিগর কাজ করেন। এবার শার্টের মজুরি সাড়ে ৩০০, প্যান্ট ৪৫০, থ্রিপিস ৩০০ এবং জর্জেট হলে ৩৫০ টাকা নেয়া হচ্ছে।
রুহুল আমিন টেইলার্সের কারিগর শিমুল হোসেন জানান, তাদের কারিগর বেশি। যে কারণে এখনো অর্ডার নেয়া হচ্ছে। তবে আর কয়েকদিন পর অর্ডার নেয়া সম্ভব হবে না।
তিনি বলেন, যশোরে বেশ কিছু টেইলার্স মালিক আছেন, যারা বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় মহিলাদের দিয়ে পোশাক বানিয়ে ডেলিভারি দেন। যে কারণে কাজের মান ভাল হয় না। এরা ঈদের আগের দিনও অর্ডার নেন।
বিকেল তখন সোয়া ৫ টা। কথা হয় লোকমান, হাজেরা বেগম, কিশোরী রুমি ও শিরিনা খাতুন নামে ৪ পোশাক ক্রেতার সাথে। তারা বলেন, এবার টেলার্সে মজুরি নেয়া হচ্ছে যেকোন বছরের চেয়ে বেশি। শিরিনা খাতুন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ৩০ থেকে ৫০ টাকা ছিল ব্লাউজের মজুরি। এখন সেই মজুরি হাকা হয়েছে দেড়শ’ টাকা। ফলস দিয়ে বানাতে হলে দিতে নেয়া হচ্ছে ২০০ টাকা। তিনি অভিযোগ করেন, নিত্যপণ্যের মতো এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও গলাকাটা হচ্ছে। এসবে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।
জেলা পরিষদ মার্কেটে (মুজিব সড়ক) খাজা ক্লোথ স্টোর সেঁতু গার্মেন্ট, কালেক্টরেট মার্কেটের পারফেক্ট, প্রেসিডেন্ট চয়েজ লাইফ স্টাইল ও সিটি ফ্যাসান প্রতিষ্ঠানে কিছু সংখ্যক ক্রেতা দেখা যায়। এসব প্রতিষ্ঠানের মালিক ও কর্মচারীরা জানান, সিট কাপড়ের বেচাকেনা শুরু হয়েছে।
ক্রেতার অভিযোগের বিষয়ে বলাকা টেইলার্সের মালিক ইনামুল কবীর দৈনিক কল্যাণকে জানান, নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রভাব সব সেক্টরে পড়েছে। সুতা, চেইন, বোতাম ও টেইলার্স মেশিনের যন্ত্রপাতির দাম বেড়েছে। কারিগরদের পারিশ্রমিকও বাড়ানো হয়েছে। তাছাড়া চমক দেখানো ফ্যাশনের পোশাকের অর্ডার বেশি। মহিলারা বেশি অর্ডার দিয়েছেন। তাদের পছন্দের পোশাক বানানো বেশ সময়ের ব্যাপার। সবমিলিয়ে বাধ্য হয়ে তৈরির মজুরি বাড়াতে হয়েছে।