নিজস্ব প্রতিবেদক
আসন্ন রমজান মাস উপলক্ষে যশোরে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য সহনশীল রাখাসহ জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করার কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলাম। বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে জেলা প্রশাসকের কার্যলয়ে আয়োজিত টাস্কফোর্স কমিটির মতবিনিময় সভায় তিনি একথা বলেন।
জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলাম বলেন, রমজান মাস আসলেই নিত্য পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে। তবে পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে আমরা নতুন দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করতে চাই।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, কোনভাবেই বাজারে কৃত্রিম সংকট ঘটানো যাবে না। নিত্য পণ্যের দাম যাতে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকে এজন্য সকলকে সচেষ্ট থাকতে হবে। একই সাথে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা যাতে নিম্নমানের পণ্য তৈরি ও বাজারজাত করতে না পারে সে বিষয়েও তিনি সতর্ক করেন।
তিনি আরও বলেন, রমজান মাসে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী অধিক লাভের আশায় ভেজাল পণ্য তৈরির উৎসবে মেতে ওঠেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সাথে রোজার সময় বাহারি পণ্য তৈরি হয়। সেসকল পণ্যে যাতে ক্ষতিকারক রঙ বা ক্যামিকাল ব্যবহার না হয় এবং হোটেল মালিকরা বাসি খাবার বিক্রি করতে না পারে সেজন্য তদারকি বাড়াতে হবে।
এসময় তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যদি কোন ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বা খাদ্যে ভেজাল দেয় তাহলে ওই ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। একই সাথে ভারতীয় পণ্য চোরাইভাবে যাতে বাংলাদেশে ঢুকতে না পারে সেব্যাপারে বিজিবিকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন জেলা প্রশাসক। একইসাথে বাজার মনিটারিং টাস্কফোর্সের পাশাপাশি স্পেশাল মনিটারিং ফোর্স, বাজার নিয়ন্ত্রণ কমিটি, ভোক্তা অধিকার, নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তর এবং জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত বাজার নিয়ন্ত্রণে কাজ করবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
মতবিনিময় সভায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) আবুল বাশার জানিয়েছেন, রমজান মাস জুড়ে এবং ঈদ পরবর্তী সময় পর্যন্ত তিন স্তরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করবে। বাড়ানো হবে রাত্রিকালীন টহল। তিনি বলেন, রমজান মাসে অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যায়। বিশেষ করে সেহেরীর পর চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা বেশি ঘটে। এসময় সকলকে সতর্ক থাকতে।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ঈদকে কেন্দ্র করে এসময় ব্যবসায়ীরা অনেক রাত পর্যন্ত দোকান খোলা রাখেন। এবং বাড়ি ফেরার সময় অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়। তাই নির্দিষ্ট সময়ে দোকান বন্ধ রাখার বিষয়ে সকলকে সচেষ্ট থাকতে হবে। অতিরিক্ত অর্থ বহনের সময় প্রয়োজনে পুলিশের সাহায্য নেয়ার জন্য তিনি ব্যবসায়ীদের অনুরোধ জানিয়েছেন।
বাস মালিক সমিতির উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সম্প্রতি বাস ডাকাতির ঘটনা বেড়েছে। যাত্রী বেশে ডাকাত দল যাত্রাপথে বাসে উঠে সুযোগ বুঝে ডাকাতি করছে। সেক্ষেত্রে বাসস্ট্যান্ড ছাড়া যাত্রাপথে যাত্রী না তোলার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। একই সাথে যানজট নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি।
মতবিনিময় সভায় ব্যবসায়ীদের পক্ষে যশোর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মিজানুর রহমান খান বলেন, যদি কোন ব্যবসায়ী অতিরিক্ত মুনাফার আশায় সাধারণ ক্রেতাকে ঠকায় তার বিরুদ্ধে প্রশাসন সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিবে। কিন্তু অনেক ব্যবসায়ী আছে তারা না বুঝে অনেক সময় ভুল করে বসেন। সেক্ষেত্রে প্রথমেই কঠোর না হয়ে তাদেরকে সুযোগ দেয়া উচিৎ। বিশেষ করে গড় জরিমানা করার বিষয়ে প্রশাসনকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।
মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, স্থানীয় সরকার যশোরে উপপরিচালক ও পৌর প্রশাসক রফিকুল হাসান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কমলেশ মজুমদার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) নাজিবুল আলম, সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি ক্যাপ্টেন সানজিদ আহমেদ, বিজিবির প্রতিনিধি মাসুদ রানা, প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোরের সভাপতি আকরামুজ্জামান, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোরের সমন্বয়ক রাশেদ খানসহ বিভিন স্থরের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ।