নিজস্ব প্রতিবেদক
রস-গুড়ের যশোর জেলায় নিপাহ ভাইরাস প্রতিরোধে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত এ বিষয়ে দিক নির্দেশনা ও সতর্কতামূলক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। গতকাল সোমবার দুপুর থেকে যশোর পৌরসভা ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শহরে মাইকিং করে খেজুরের রস না খাওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে। নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ জ্বর, প্রলাপ বকা এবং অজ্ঞান হয়ে পড়া বুঝলে তাকে দ্রুত চিকিৎসা কেন্দ্রে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে জেলার স্বাস্থ্য বিভাগ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র মতে, সাধারণত শীতকালে বাদুরের মাধ্যমে খেঁজুরের রস থেকে মানুষে এই ভাইরাস সংক্রমিত হয়। আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলেও এ ভাইরাসের সংক্রমণ হতে পারে। জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে বাংলাদেশে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এ ভাইরাস সংক্রমণে শতকরা প্রায় ৮০ শতাংশের মৃত্যু হতে পারে, যেখানে কাঁচা খেজুর রস পান থেকে বিরত থাকলে এটা পুরোপুরি প্রতিরোধ করা সম্ভব। ভাইরাস সংক্রমণের প্রায় এক সপ্তাহ পর রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায় বলেও জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
যশোরের সিভিল সার্জন ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ^াস জানান, দেশের ৩২টি জেলা এখন পর্যন্ত নিপাহ ভাইরাস জনিত জ্বরের ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এরমধ্যে যশোর রয়েছে। এজন্য জেলা প্রশাসন সতর্কতামূলক কার্যক্রম চালাচ্ছে। শহর ও গ্রামে সবস্থানে এ বিষয়ে প্রচারণা চালানো হবে।
যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মঞ্জুরুল হক বলেন, রস-গুড়ের জন্য যশোর জেলা বিখ্যাত। এ জেলায় রস হয় এমন গাছের সংখ্যা তিন লক্ষ ২১ হাজার ৮২৯টি। এসব গাছ থেকে বছরে পাঁচ কোটি লিটার খেজুরের রস উৎপাদন হয়।
যশোরের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. নাজমুস সাদিক জানান, যশোর জুড়েই খেজুর গাছ রয়েছে। এ জেলার মানুষের খেজুরের কাচা রস খাওয়ার প্রবণতা রয়েছে। বাদুরের মাধ্যমে খেঁজুরের রস থেকে নিপা ভাইরাস ছড়ায়। তাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাইড লাইন অনুযায়ী কাচা রস খেতে নিষেধ করা হচ্ছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত যশোরে কারো নিপা ভাইরাসের সংক্রমের খবর মেলেনি। চৌগাছার এক ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু ওই ব্যক্তি আক্রান্ত হয়নি। বর্তমানে তিনি সুস্থ আছেন। তবে যশোরের পাশের জেলা ঝিনাইদহে আক্রান্তের তথ্য রয়েছে। এজন্য আমরা সতর্কতামূলক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি।
বাঘারপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ জাকির হাসান বলেন, জেলা প্রশাসন থেকে প্রচারণা চালানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এজন্য গতকাল সোমবার প্রচার বার্তা রেকর্ডিং করা হয়েছে। আজ ৭ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার থেকে উপজেলার সব হাটবাজারে বার্তাটি প্রচার করা হবে।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আখতারুজ্জামান বলেন, নিপা ভাইরাসে আক্রান্তের চিকিৎসার জন্য ১০টি আইসিইউ বেড প্রস্তুত রাখা হয়েছে। রয়েছে আইসোলেশন ওয়ার্ড। কারও সন্দেহ হলে আইসোলেশনে রেখে পরীক্ষা নিরীক্ষার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন: যশোর মেডিকেল কলেজে বহিরাগত ঠেকাতে হকিস্টিক নিয়ে পাহারা!