রাজগঞ্জ (মণিরামপুর) প্রতিনিধি
যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই মাঠের পর মাঠ শিমের ক্ষেতের দেখা মিলবে। শিমের লতা-পাতার সবুজ সমারোহের মাঝে গোলাপি সাদা ফুল যে কারো নজর কাড়বে। এচিত্র চোখে মিলবে যশোরের মণিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জে। চলতি মৌসুমে শিম চাষ করে আর্থিকভাবে বেশি লাভবান হচ্ছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। শীত মৌসুমে গ্রীষ্মকালীন আলিপট্টি-১ জাতের শিম চাষ করেছেন চাষির। এখন সেই শিম বাজারে উঠতে শুরু করেছে। ভালো ফলন ও ভালো দামে বিক্রি করতে পারায় কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মাঠ ঘুরে দেখা যায়, ফসলি জমিতে শক্ত সুতো ও বাঁশের তৈরি মাচার উপর মেলে ধরেছে শিম গাছের কচি ডগা। কচি ডগার মধ্যে উঁকি দিচ্ছে সাদা ফুল। কেউ কেউ শিম তুলছেন আর কেউ পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। জমি থেকে শিম সংগ্রহ করে স্থানীয় বাজারে নিয়ে যাচ্ছেন। উপজেলার মাটি অসময়ে এ সবজি চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় দ্বিগুণ ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় প্রতিবছর বাড়তে শুরু করেছে শিম চাষির সংখ্যা।
কৃষি উপসহকারী কর্মকর্তা মারুফুল হক ও হাবিবুর রহমানের কাছ থেকে জানা যায়, এ অঞ্চলের হরিশপুর, রসুলপুর মাঠে ৬০-৭০ জন কৃষক শিমের আবাদ করছেন। এতে জমির পরিমাণ ৭০ বিঘা। এ থেকে প্রায় দেড় কোটি টাকার শিম বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কৃষকরা জানিয়েছে, উফশী হাইব্রিড আলিপট্টি-১ জাতের শিম চাষ শুরু করেন কৃষক হান্নান, রাকিবসহ এলাকার বেশ কিছু কৃষক। এ জাতের শিম প্রথমে গ্রীষ্মকালীনে চাষ শুরু হয়। গত বছর একবিঘা জমিতে এই শিম চাষে খরচ হয়েছিল ১৮ হাজার টাকা। সেখান থেকে প্রায় ৩ লাখ টাকার শিম বিক্রি করেছিলাম। রাকিব হোসেন বলেন, এ বছরের আমি ১ বিঘা ১০ কাটা জমিতে শিমের চাষ করেছি ৩৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এ পর্যন্ত ১ লাখ ২০ হাজার টাকার শিম বিক্রি করেছি। আরও প্রায় ২ লাখ টাকার শিম বিক্রয় করা যাবে।
কৃষকরা আসাদুল হক ও মুফি রহমান বলেন, গ্রামের প্রায় ৬০ থেকে ৭০ জন কৃষক। এই জাতের শিম চাষ করছেন প্রতি কেজি শিম বর্তমান বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেকেই তাদের কাছ থেকে শিমের বীজ কিনে নেন।
একই গ্রামের শিম চাষি খোকন বলেন, আমি এবার শিমের চাষ করেছি। আমার বাড়ির পাশের কালাম চাচা প্রথম দিকে এই শিমের চাষ শুরু করেন। তার কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করে আমি নিজেও চাষাবাদ শুরু করি। এটি খুবই লাভজনক ফসল। শিমের খেতে কাজ করতে আসা ইনামুল, জলিল, সোবাহান বলেন, আমরা শিমের খেতে দৈনিক কাজ করি ৩৫০টাকা মজুরিতে। আগামী বছর আমি নিজে ও এই শিমের চাষ করব।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারহানা ফেরদৌস বলেন, আলিপট্টি-১ জাতের এই শিমের ফলন গ্রীষ্মকালেই বেশি হয়। একটি গাছ লাগানোর ৪০দিনে ফুল ও ফল আসে, ৫০দিন থেকে বিক্রির উপযোগী হয়। একটি গাছ প্রায় দেড় বছর পর্যন্ত বাঁচে। এই শিম গাছ থেকে সহজে বীজ সংগ্রহ করা যায়। আশা করা যায়, মাত্র ১৫ হেক্টর জমি থেকে কৃষকরা এক কোটি ৫০ লাখ টাকার শিম বিক্রি করতে পারবেন।
