আবুল কাশেম জিয়া, রাজগঞ্জ প্রতিনিধি
ভাইরাস আক্রান্ত শিশু গাছের ডাল বিক্রির গুজবে পাগলা ঘোড়ার মত ছুটছে রাজগঞ্জ অঞ্চলের মানুষ। সেই সাথে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে গাছ ও পরিবেশ। চড়া দামে চোরকাবারকারীদের কাছে ভাইরাস আক্রান্ত গাছের ডাল বিক্রির গুজবে এ অঞ্চলের নিম্নবিত্ত খেটে খাওয়া মানুষ এখন দিনপাত করছেন রোগাক্রান্ত শিশু গাছের ডাল সংগ্রহ করতে।
জানা গেছে, সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া উপজেলার চোরকারবারি জিল্লু রহমান, ছালাউদ্দিন মন্ডল, শহিদুল ইসলাম, হাসানুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন রাজগঞ্জ অঞ্চল থেকে শিশু গাছের রোগাক্রান্ত ডাল ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এমন গুজবে এলাকার নিম্নবিত্তরা নিত্যদিন শিশু গাছের ডাল সংগ্রহে বিভিন্ন গাছে উঠে ডাল ভেঙে সংগ্রহ করছেন এবং তা বিক্রির জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করছেন। স্থানীয় একটি চক্র এই সুযোগে গ্রামবাসীর কাছ থেকে কেজিপ্রতি ১৭০-২০০ টাকা দরে ওই সব রোগাক্রান্ত ডাল কিনে নিচ্ছেন। কিন্তু কেউই বলতে পারছেন না এই ডাল কোথায় যাচ্ছে বা এ দিয়ে কি করা হচ্ছে। স্থানীয়রা জানান শিশু গাছের এই রোগ বা ভাইরাস পোকাকে লাক্ষা বলা হয়। এই লাক্ষা আক্রান্ত ডাল একশ্রেণির ব্যবসায়ীরা চড়া দামে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। অনেকে বলছেন লাক্ষা আক্রান্ত ডালের কেজি চোরাবাজারে হাজারের উপরে।
বিক্রেতা ও ক্রেতাদের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, রোগাক্রান্ত ডালের উপরের আঠা তুলে দেশের বাইরে পাচার করা হচ্ছে। এই আঠা অত্যন্ত মূল্যবান। এটা দিয়ে কাঠের আসবাবপত্র ও পিতল বার্নিশ করা, ওষুধের ক্যাপসুলের কোটিং, চকলেট ও চুইংগামের কোটিং, ডাকঘরের চিঠি বা পার্সেল সিলমোহর, পুতুল, খেলনা, টিস্যু পেপার তৈরিসহ নানা ধরনের কাজে লাক্ষা পোকার আঠা ব্যবহার করা হয়।
মণিরামপুর উপজেলা চালুয়াহাটি ইউনিয়নের কৃষি কর্মকর্তা জানান, লাক্ষার আক্রমণে কোন গাছ মারা যায় না। লাক্ষা এক ধরনের ক্ষুদ্র পোকা। এ পোকার ত্বকের নিচে সর্বত্র ছড়িয়ে থাকা এক প্রকার গ্রন্থি থেকে আঠালো রস নিঃসৃত হয়, যা ক্রমশ শক্ত ও পুরু হয়ে শিশু গাছের ডালকে আচ্ছাদিত করে ফেলে। এই আবরণ লবণাক্ত পানি থেকে জাহাজের তলদেশ রক্ষা বা লবণাক্ততায় নষ্ট হওয়া লোহা ঠিক করার কাজে ব্যবহার করাহয়।
এদিকে, লাক্ষার উপকারিতা বা অপকারিতা কোন বিষয়েই গ্রামের সহজ সরল মানুষের জ্ঞান না থাকায় একশ্রেণীর কুচক্রী মহল তাদেরকে ভুল বুঝিয়ে নানা উপায়ে সংগ্রহ করছে লাক্ষার রস। তাই স্থানীয়দের দাবি এ বিষয়ে প্রশাসনের নজরদারি প্রয়োজন। বর্তমানে কুষ্টিয়া, বগুড়াসহ নানা স্থানে পাইকারি দরে বিক্রি হচ্ছে শিশু গাছের ডালের ভাইরাস পোকা। কিন্তু এই ভাইরাস পোকা দিয়ে কী হচ্ছে তা কেউ জানে না।
মণিরামপুর উপজেলা চালুয়াহাটি ইউনিয়ন কৃষি কর্মকর্তা ফারহানা ফেরদৌস বলেন, ২০১৬-১৭ সালে প্রথম লাক্ষা রোগ দেখা দেয়। তিনি বলেন, পানিতে লবণ বেশি থাকায় বা গাছের নিচে পানি জমে থাকায় এই রোগ দেখা দিতে পারে। তিনি বলেন, আম, বরই, বাবলা ও কড়ই গাছে সাধারণত লাক্ষা দেখা যায় কিন্তু লাক্ষা সম্পর্কে জনসচেতনতার অভাবে কৃষকরা গাছে নানাবিধ কীটনাশক ব্যবহার করায় লাক্ষা তাদের আবাসস্থল হারাচ্ছে। আর এ কারণে হয়তোবা এ পোকাটি শিশু গাছে দেখা যাচ্ছে। তিনি জানান, অনেক সময় এই ধরনের গাছে আঠালো কেমিক্যাল কম্পাউন্ড পাওয়া যায় যেটা অনেকেই সংগ্রহ করে তবে এর অর্থনৈতিক গুরুত্ব কতটুকু সেটা জানা নেই। তবে এসকল বিষয় নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।