নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোরের বেনাপোল পৌর নির্বাচনে টানা ১৮ দিনের জমজমাট প্রচারণা শেষে এখন ভোটের অপেক্ষা। রাত পোহালেই আগামীকাল ভোট গ্রহণ হবে। সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতি ছাড়াই ইভিএমে ১২টি কেন্দ্রে ভোট দিবে ভোটাররা। এর আগে, শনিবার মধ্যরাতে শেষ হয়েছে এক যুগ পর হতে যাওয়া বেনাপোল পৌর নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা। এদিকে, শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে রিটার্নিং অফিসার। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর পাশাপাশি প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত থাকবেন। ফলে কাউন্সিলর ও মেয়র পদে প্রভাব দেখানোর সুযোগ নেই বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
দেশের সবচেয়ে বড় বেনাপোল বন্দরে অবস্থিত বেনাপোল পৌরসভা। বন্দর থেকে সরকারের প্রতি বছর ৭ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়। বাণিজ্যিক ও শিল্প খাতে এ বন্দরের ভূমিকা যেমন অপরিসীম তেমনি প্রার্থীদের কাছে লোভনীয়। ২০০৬ সালে বেনাপোল ইউনিয়নের ১১টা গ্রাম নিয়ে বেনাপোল পৌরসভা গঠনের পর ২০১১ সালের ১৩ জানুয়ারি প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর সেখানে আর কোনো নির্বাচন হয়নি। প্রথম নির্বাচিত মেয়র জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম লিটন। ২০১৬ সালের ১৩ জানুয়ারি তার মেয়াদ শেষ হলেও আর নির্বাচন হয়নি। তবে মামলার জটিলতা শেষে আগামীকাল ভোট হচ্ছে সেখানে।
নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ও বেনাপোল পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নৌকা প্রতীক, বেনাপোল সিএন্ডএফ এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মফিজুর রহমান সজন মোবাইল ফোন প্রতীক ও জগ প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক আহ্বায়ক ফারুক হোসেন উজ্জ্বল। গতকাল রাতে তিনি সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। ঘোষণা দিলেও ব্যালটে তার প্রতীক থাকছে। এছাড়া ৯টি ওয়ার্ডে সাধারণ ওয়ার্ডে ৪৭ জন প্রার্থী ও সংরক্ষিত আসনে ১৫জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মেয়র পদে তিনজন প্রার্থী থাকলেও সকলের দৃষ্টি আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নাসির উদ্দিন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মফিজুর রহমান সজনের দিকে। দুজনেরই কর্মী-সমর্থকদের প্রচার প্রচারণা চলছে সমানতালে। ভোটার দাবি করছেন, প্রত্যেক ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ ঘোরণার একাধিক কাউন্সিলর প্রার্থী। সেক্ষেত্রে কাউন্সিলররা নিজেদের জয় নিশ্চিত করতে ভোটারদের কেন্দ্রে আনার চেষ্টা করবেন। বিএনপি ঘোরণার ভোটাররা কাউন্সিলর প্রার্থীদের ভোট দেওয়ার পর মেয়র পদে কাকে ভোট দেবেন সেটার ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছুই। অনেকের ভাষ্য, যদি ব্যক্তি হিসেবে ভোট দেন সেক্ষেত্রে একধরনের রেজাল্ট। আর প্রতীক দেখে ভোট দিলে রেজাল্ট হবে আরেক ধরনের। এছাড়াও রয়েছে নতুন ভোটার। তারাও জয়-পরাজয় নির্ধারণে ভূমিকা রাখবেন বলে বন্দর নগরী জুড়ে রয়েছে আলোচনা। এদিকে নির্বাচনে প্রচার প্রচারণাকালে আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থকদের বিরুদ্ধে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলে আসছে স্বতন্ত্র প্রার্থী মফিজুর রহমান সজল। বিভিন্ন অভিযোগ দিয়েছেন বেনাপোল পোর্ট থানা, জেলা রির্টানিং অফিসার, পুলিশ সুপারের কার্যালয়েও। স্বতন্ত্র প্রার্থী মফিজুর রহমান সজন জানান, ভোটে প্রভাব বিস্তার করতে বহিরাগতরা এলাকায় ঢুকে নৌকার পক্ষে ভোট চাইছে। তারা তার কর্মীদের হুমকি ও প্রচারে বিভিন্ন ভাবে বাধা দিয়েছে। এতে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কায় আছেন। তবে ভোটাররা যদি নির্ভয়ে কেন্দ্রে আসতে পারে তার জয় নিশ্চিত দাবি করে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি নির্বাচিত হলে পৌরবাসীর নাগরিক অধিকার আদায়ে আপ্রাণ চেষ্টা করবেন বলে জানান। নৌকার প্রার্থী নাসির উদ্দীন জানান, উন্নয়নের প্রতীক নৌকা। আর তিনি স্বচ্ছ রাজনীতিতে বিশ্বাসী। তাই ভোটাররা যোগ্য প্রার্থী হিসাবে তাকে বেছে নিয়ে নির্বাচিত করবেন। তিনি নির্বাচিত হলে বেনাপোল শহরকে সারা দেশের মধ্যে মডেল শহর হিসাবে গড়ে তুলবেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীর অভিযোগের বিষয়ে বলেন, এটি প্রতিপক্ষের মনগড়া অভিযোগ। ভোট প্রদানের স্বাধীনতা ভোটারদের থাকবে। এক্ষেত্রে তার কর্মীরা কেউ প্রভাব বিস্তার করবে না। এদিকে, নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু ও সুন্দর করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিনিয়র নির্বাচন অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার আনিচুর রহমান। তিনি বলেন, ৯টি বিদ্যালয়ে ১২ টি কেন্দ্র। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে ১১ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সব সময় উপস্থিত থাকবেন। বিপুল সংখ্যাক পুলিশ-আনসারের সঙ্গে তিন প্লাটুন র্যাব দুই প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন থাকবে। এছাড়া স্ট্রাইকিং ফোর্স তো থাকছেই। কেন্দ্রের ৯১টি বুথে সিসি ক্যামেরা থাকবে। বেনাপোল পৌরসভা নির্বাচনে ৩০ হাজার ৩৮৫ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।