নিজস্ব প্রতিবেদক
সাবেক ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক বিশেষ সহকারী (এপিএস) এবং মাগুরা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখরকে নিয়ে দেশের একটি শীর্ষ গণমাধ্যম দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশ হয় ‘শেখ হাসিনার আর্শীবাদে দুর্নীতির শিখরে শিখর’। তোলপাড় শুরু হয় শেখরের বিতর্কিত নানা কর্মকাণ্ড নিয়ে। এ নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকের অনুসন্ধান দল কাজ করছে। দুদকের নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর এপিএস থাকাকালে গণভবনে বসে যা ইচ্ছে তাই করেছেন। ২০১১ সালে হাসানুজ্জামান টিটো নামে একজন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে একটি জুট মিল লিখে নিয়েছেন নিজের নামে।
গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর কথা হয় প্যাসেফিক এ ওয়ান গ্রুপের এমডি হাসানুজ্জামান টিটোর সাথে তিনি জানান, ১৯৯৯ সাল থেকে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে এবং ২০১২-২০১৩ এবং ২০১৪ সালে খুলনা বিভাগের কর অঞ্চল-১০ এর সর্বোচ্চ করদাতা হিসেবে রাষ্ট্রীয় সম্মান এবং স্বীকৃতিপ্রাপ্ত একজন ব্যবসায়ী এবং উদ্যোক্তা হয়েছি। ২০১০ সালে মাগুরায় ৫০ বিঘা জমির উপর ‘আসাদুজ্জামান-রশিদ’ জুট মিল নামে একটি জুট মিল তৈরির কাজ শুরু করি। সে সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এপিএস হিসেবে কর্মরত সাইফুজ্জামান শিখর ছিলেন মাগুরার নিয়ন্ত্রক।
হাসানুজ্জামান টিটো জানান, আমার কাছ থেকে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে বিনিয়োগ এবং গার্মেন্টসটিকে সুরক্ষা দেয়ার কথা বলে শুরুতেই কোন ধরনের বিনিয়োগ না করে গার্মেন্টেস শেয়ার হোল্ডার মালিক হন সাইফুজ্জামান শিখর এবং তার সহযোগী। শিখরের পক্ষে আসাদুজ্জামান হিশাম যিনি শিখরের ছোট ভাই তাকে ২২ ‘পার্সেন্ট’ এবং তার সহযোগীর নামে ১০ পার্সেন্ট লিখে নেয়।
২০১১ সালে জুট মিলের নামে ব্যাংক লোন পাশ হলে সাইফুজ্জামান শিখর এবং তার ভাই হিশাম জুট মিলে প্রবেশ করতে না করেন আমাকে। বিভিন্ন ধরনের হুমকিও দেয়।
তিনি জানান, ‘শেয়ার হাতিয়ে নেয়ার ১ বছরের ভিতর জুট মিলের নামে ২২ কোটি টাকা লোন নিয়ে সেই টাকা লুটপাট করে শিখর এবং তার সহযোগী। তিনি আমাকে সমস্যা সমাধানের কথা বলে তার বাসায় ডেকে নেয় সেখানে গেলে ব্যাংকের কর্মকর্তা, উকিল, মালিকানা হস্তান্তর সংক্রান্ত কর্মকর্তারা উপস্থিত রেখে আমার কাছ থেকে মালিকানা লিখে নেয়। বিনিয়োগের ৮ কোটি টাকা পরে ফেরত দেবে বলে। ফেরার সময় শিখর বলে কারো সাথে যেন এই বিষয়ে কোন কথা না বলি।’
তিনি আরো জানান, ‘প্রায় এক বছর পর জুট মিল না চালাতে পেরে বিক্রির প্রস্তাব করে টিটো ক্রয় করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে কারণ তার বিনিয়োগ টাকা তোলার জন্য। এই লোনের টাকা তারা পরিশোধ না করে উল্টো আমাকে পরিশোধ করতে বলে। আরো বিপুল অংকের টাকা দাবি করে। সবশেষ ২০১৪ সালে ৫০ লাখ টাকা আমার কাছ থেকে নিয়েছে ফ্ল্যাট কেনার জন্য।’
টিটো আরো জানান, আমার কোম্পানিগুলোর দিকে শিখর ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনুসন্ধানের নামে দুদককে ব্যবহার করে। ২০১৬ সালে যখন দুদক কর্মকর্তা ব্যাংক থেকে সব ব্যবসার ফাইল নিয়ে যায় কাযর্ত তখন থেকে সোয়েটার, জুটমিল এবং জুতার রপ্তানি কোমতে থাকে ২০১৬-২০১৭ সালে আমাদের রপ্তানির পরিমাণ ছিল প্রায় ২৬০ কোটি টাকা। ২০১৯ সালে এসে রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায় কারণ দুদক থেকে ছাড়পত্র না পেলে ব্যাংক কোন কাজ করবে না।
দুর্নীতি না পেয়ে দাবি করা হয়, ব্যাংক থেকে নেয়া অর্থ বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে পাচার করা হয়েছে। ২০১৫ সালে আরজি এসসি নাম পরিবর্তন করা হয় আব্দুর রশিদ জুট মিল কিন্তু আগের নাম ‘আসাদুজ্জামান-রশিদ জুট মিল’। এই আসাদুজ্জামান হচ্ছে সাইফুজ্জামান শিখরের পিতা। বহুবার চেষ্টা করেও শিখরের দাপটের কারণে জুট মিলটির নাম পরিবর্তন করতে পারেনি।